সরকারি চাকরিতে কোটা ইস্যুতে হাইকোর্ট থেকে সমাধান আসা উচিত: প্রধানমন্ত্রী

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি করা উচিত। তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়, এটার বিরুদ্ধে এভাবে আন্দোলন করা, এটা তো সাবজুডিস। কারণ, আমরা সরকারে থেকে কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে পারি না। কারণ, হাইকোর্ট রায় দিলে সেটা হাইকোর্ট থেকেই আবার আসতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রোববার সকালে যুব মহিলা লীগের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নেতারা গণভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে এ কথা বলেন। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলন করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে একটা কথা আমি না বলে পারছি না, আমরা দেখছি যে কোটা আন্দোলন। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যে কোটা, সেটা বাতিল করতে হবে। নারীদের কোটা বাতিল করতে হবে, এ ধরনের নানা কথা শোনা যাচ্ছে। সেটা একবার বাতিল করা হয়েছিল কিন্তু ফলাফলটা কী? তিনি বলেন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষার হিসাব যদি দেখা যায়, তাহলে দেখা যেত আগে কোটা থাকাতে মেয়েরা যে সংখ্যায় সুযোগ পেত, সে সুযোগ কিন্তু এই গত কয় বছরে পায়নি। এটা হলো বাস্তবতা। এমনকি অনেক অনেক জেলা, প্রত্যন্ত অঞ্চল সেই অঞ্চলের মানুষগুলো কিন্তু বঞ্চিত থেকে গেছে। তারাও চাকরি পাচ্ছে না আর এ রকম বঞ্চিত হওয়ার কারণেই কেউ মামলা করে যাতে হাইকোর্ট একটা রায় দেয়। হাইকোর্টের রায়টা আমরা সব সময়ই মেনে নেই। কিন্তু আমরা এখন দেখলাম যে কোটাবিরোধী আন্দোলন এখন আবার গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলন করছে, সেখানে মেয়েরাও করছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে আমার একটা প্রশ্ন আছে, যারা এর আগে কোটাবিরোধী আন্দোলন করেছিল, তারা কয়জন পাবলিক সার্ভিস কমিশনে পরীক্ষা দিয়েছিল আর কতজন পাস করেছিল, সেই হিসাবটা একটু বের করা দরকার। তারা দেখাক যে পরীক্ষা দিয়ে তারা বেশি পাস করেছিল, মেয়েরা বেশি পরীক্ষা দিয়ে বেশি চাকরি পেয়েছে কী না? সেটা আগে তারা প্রমাণ করুক।’ তিনি আরও বলেন, ‘আর হাইকোর্টের রায়, এটার বিরুদ্ধে এভাবে আন্দোলন করা, এটা তো সাবজুডিস। কারণ, আমরা সরকারে থেকে কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে পারি না। কারণ, হাইকোর্ট রায় দিলে সেটা হাইকোর্ট থেকেই আবার আসতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আন্দোলনের নামে যেটা আবার করা হচ্ছে, পড়াশোনার সময় নষ্ট করা, এটার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না।’
সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের বিরুদ্ধে এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে কয় দিন ধরে নানা কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। যদিও স্বাধীনতার পর থেকেই বিভিন্ন শ্রেণির চাকরিতে কোটাব্যবস্থা চলে আসছিল। একপর্যায়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে ২০১৮ সালের অক্টোবরে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
প্রধানমন্ত্রী সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রসঙ্গে বলেন, ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম আমরা দিয়েছি, এটা সবার জন্য। এটা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল, ২০০৮–এর নির্বাচনী ইশতেহারে। যেটা আমরা করতে পেরেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুধু সরকারী চাকরিজীবী তারাই পেনশন পায় আর বাকিরা বঞ্চিত থাকে।
কাজেই কেউ যাতে বঞ্চিত না থাকে, সে জন্য এই পেনশন স্কিমে বিভিন্ন স্তর দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি, আমাদের যুব মহিলা লীগের প্রত্যেকেই এই সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হতে পার। যুক্ত হতে পার নিজেদের একটা ভবিষ্যতের জন্য।’ তিনি বলেন, ‘যখন মানুষের বয়স হয়ে যাবে বা তারা কর্মক্ষম থাকবে না এর মাধ্যমে তাদের জীবন-জীবকা নির্বাহের জন্য একটি নিশ্চিত অর্থপ্রাপ্তির সুযোগ রয়েছে। এটা কিন্তু আজীবন পাবে। আমি মনে করি, যারা আমাদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, তাদের এ ধরনের পেনশন স্কিমে ঢোকা দরকার আর যারা একেবারে প্রান্তিক বা নি¤œ আয়ের মানুষ রয়েছে, তাদের জন্য এতে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, যুব মহিলা লীগ সব সময়ই আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে ছিল, অনেক সময় তারা যেমন পুলিশের হাতে নির্যাতিত, তা–ই নয়, বিএনপির অস্ত্রধারী নেতা-কর্মীরাও আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো—যুব মহিলা লীগের ওপর অকথ্য অত্যাচার–নির্যাতন করেছে। তাদের সেই অত্যাচারের অনেক ছবি, চিত্র অনেক কিছুই এখনো রয়েছে। অত্যাচার–নির্যাতনকালে মা-বোন বলে তারা কোন সমীহ করেনি।
এর আগে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নেতারা ফুল দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানান। অনুষ্ঠানে যুব মহিলা লীগের ওয়েবসাইটও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০০২ সালের ৬ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের একঝাঁক সাবেক নেত্রীকে নিয়ে যুব মহিলা লীগ গঠন করেন।