এমপি আনার হত্যা সিয়ামের তথ্যে খাল থেকে হাড় উদ্ধার, আ.লীগ নেতা রিমান্ডে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ কলকাতার ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে খুনের ঘটনায় গ্রেফতার সিয়াম হোসেনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ভাঙরের একটি খালে তল্লাশি চালিয়েছে কলকাতা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ওই খাল থেকে কিছু হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
কলকাতা সিআইডির এক বিবৃতিতে  রোববার এ তথ্য জানানো হয়েছে। সিআইডির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, পরীক্ষার পর এই হাড়গুলোর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। খালে তল্লাশি চলছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভাঙরের বিজয়গঞ্জ বাজারের বাগজোলা খালের দক্ষিণ-পূর্ব অংশ থেকে কিছু হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু লম্বা হাড়ের অংশ রয়েছে।
ঘটনাস্থলে থাকা সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির (সিএফএসএল) বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে হাড়গুলো মানবশরীরের বলে তাঁদের মনে হচ্ছে। সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার সিয়াম হোসেন কলকাতার সিআইডি পুলিশের অধীনে ১৪ দিনের রিমান্ডে আছেন। শনিবার দুপুরে তাকে বারাসাতের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ১৪ দিনের হেফাজতে চাইলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। নেপালে আটক হওয়া সিয়াম হোসেনকে গত শুক্রবার ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম খুনের মামলায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবুকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের বিচারক মেহেদী হাসান গতকাল রোববার এ আদেশ দেন।
গণমাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) জালাল উদ্দীন।
এর আগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আসামি কাজী কামাল আহমেদকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, মামলার অন্যতম আসামি খুলনা অঞ্চলের একসময়ের দুর্র্ধষ চরমপন্থী সন্ত্রাসী শিমুল ভূঁইয়ার ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামালের নাম উঠে আসে। আসামির সঙ্গে শিমুলের হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত কাজী কামালকে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।
এই হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত দুই দেশ মিলিয়ে মোট পাঁচজন আসামি গ্রেফতার হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন বাংলাদেশে, বাকি দুজন কলকাতায়। বাংলাদেশে গ্রেফতার আসামিরা হলেন সৈয়দ আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূঁইয়া, তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমান। ভারতে আছেন জিহাদ হাওলাদার ও সিয়াম হোসেন।
দুই দেশের পুলিশ এর আগে বলেছিল, কলকাতার ফ্ল্যাটে খুন করার পর আনোয়ারুল আজীমের লাশ টুকরা টুকরা করা হয়। এরপর দেহের খ-িত অংশগুলো গুম করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন জিহাদ ও সিয়াম। গ্রেপ্তার হওয়া জিহাদের দেওয়া তথ্যে এর আগে কলকাতার খালে দফায় দফায় তল্লাশি চালিয়েও লাশ বা কোনো দেহাংশ পাওয়া যায়নি।
কলকাতার যে ফ্ল্যাটে আনোয়ারুল খুন হয়েছেন বলা হচ্ছে, সেখানকার সেপটিক ট্যাংক থেকে কিছু মাংসের টুকরা উদ্ধার করেছিল সেখানকার পুলিশ। কিন্তু সেটা আনোয়ারুলের কি না, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ জন্য ডিএনএ পরীক্ষা দরকার।
ডিএনএ নমুনা দিতে আনোয়ারুলের ছোট মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ভারতের ভিসা করিয়ে রেখেছেন। তিনি জানান, ভারতের পুলিশ বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ভারতে গিয়ে ডিএনএ নমুনা দিতে হবে।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম গত ১২ মে দর্শনা সীমান্ত হয়ে কলকাতায় যান। পরদিন ১৩ মে কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে তিনি খুন হন। ২২ মে তাঁর খুন হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে দুই দেশের পুলিশ। এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহীন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তিনি খুনের পর নেপালের কাঠমান্ডু হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান বলে পুলিশ বলছে।