৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন। তিনি  বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন।
অর্থমন্ত্রী বিকেল ৩টা থেকে ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’ শীর্ষক বাজেট বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৪.২ শতাংশ এবং চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এটি দেশের ৫৩তম, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৫তম ও অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট।
বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাকি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকবে। ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ইতোমধ্যে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
সাধারণত প্রস্তাবিত বাজেটের উপর সংসদে আলোচনা শেষে কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্ধন, পরিমার্জন এলেও বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটতে দেখা যায় না। এক নজরে দেখে নেয়া যাক নতুন বাজেটের আটটি দিক। আয়কর : প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, আয়ের প্রথম সাড়ে ৩ লাখ টাকার ওপর কোনো কর দিতে হবে না। পরবর্তী ১ লাখ টাকার ওপর ৫ শতাংশ, পরবর্তী ৩ লাখ টাকায় ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখ টাকায় ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকার ওপর ২০ শতাংশ ও বাকি আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ আয়কর দিতে হবে। প্রস্তাবে নারী ও ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৪ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাবও করেন অর্থমন্ত্রী। প্রস্তাবে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা থেকে করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়। তৃতীয় লিঙ্গের করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।
রাজস্ব ও উন্নয়ন বাজেট : একটি বাজেটের দুটি অংশ থাকে। একটি অংশ হচ্ছে রাজস্ব বাজেট এবং অপরটি হচ্ছে উন্নয়ন বাজেট। রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার জন্য প্রতিবছর যে ব্যয় ধরা হয় এবং সরকার বিভিন্ন ধরনের কর থেকে যে টাকা আদায় করে সেটিকে বলা হয় রাজস্ব বাজেট। এছাড়া অবকাঠামোসহ নানা ধরনের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য যে ব্যয় ধরা হয় সেটিকে উন্নয়ন বাজেট বলা হয়। প্রস্তাবিত প্রায় আট লাখ কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে রাজস্ব বাজেট হচ্ছে ৫ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এই টাকা রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে ব্যয় করা হবে। যার মধ্যে রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন-ভাতাসহ নানা বিষয় অন্তভুর্ক্ত। উন্নয়ন বাজেট হচ্ছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। উন্নয়ন বাজেটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে, যেটি প্রায় ৭১ হাজার কোটি টাকা।
কোন খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ : সরকার যে বাজেট উত্থাপন করেছে সেখানে দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি খরচ হবে ঋণের সুদ পরিশোধের ক্ষেত্রে। প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকা বাজেটের ১৪.২ শতাংশ খরচ হবে ঋণের সুদ পরিশোধের ক্ষেত্রে, যার পরিমাণ ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে। মোট বাজেটের ১৪ শতাংশ এই খাতে খরচ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যার মোট পরিমাণ ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাবদ ব্যয় করা হবে মোট বাজেটের ১১.১ শতাংশ, যার পরিমাণ ৮৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। এছাড়া পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতে ব্যয় করা হবে ১০.২ শতাংশ, যার পরিমাণ ৮১ হাজার কোটি টাকার বেশি।
টাকা আসবে কোথা থেকে? : প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ কোটি টাকা। বাকি দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা সরকার ঋণ নেবে। যার মধ্যে রয়েছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি, বিভিন্ন ধরনের বন্ড বিক্রি এবং ব্যাং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়া। বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ ও অনুদান নেবে ৯৫ হাজার কোটি টাকা। এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা কর আদায় করবে। আদায়ের উপায়ের মধ্যে রয়েছে ভ্যাট, আমদানি শুল্ক, আয়কর, সম্পূরক শুল্ক।
ব্যাংকে টাকা রাখলে খরচ বাড়বে : ১০ লাখ ১ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংকে থাকলে আবগারি শুল্ক দিতে হবে তিন হাজার টাকা। ৫০ লাখ ১ টাকা থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যাংকে থাকলে দিতে হবে পাঁচ হাজার টাকা। এক কোটি ১ টাকা থেকে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যাংকে থাকলে আবগারি শুল্ক দিতে হবে ১০ হাজার টাকা। এছাড়া দুই কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি পর্যন্ত টাকা থাকলে আবগারি শুল্ক দিতে হবে ২০ হাজার টাকা।
কমিউনিটি সেন্টার, মোবাইল ফোন : কমিউনিটি সেন্টার কিংবা কনভেনশন সেন্টারে বিয়ে, জন্মদিন কিংবা যে কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গেলে আয়কর রিটার্ন দেখাতে হবে। আয়কর রিটার্নের প্রমাণ ছাড়া কমিউনিটি সেন্টারে কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাবে না। বিদেশ থেকে আসার সময় একজন ব্যক্তি তার ব্যবহৃত সর্বোচ্চ দুটি ফোন সেট শুল্ক ছাড়া আনতে পারবেন। এর পাশপাশি তিনি একটি নতুন ফোনসেট শুল্ক পরিশোধ করে আনতে পারবেন।
সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে শুল্ক : সংসদ সদস্যদের আমদানি করা গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। পাশাপাশি আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাবও করা হয়েছে। ফলে সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি সুবিধা পুরোপুরি থাকছে না।
কালো টাকা ও সম্পত্তি সাদা করা : প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করা এবং অপ্রদর্শিত সম্পদ নিদ্দির্ষ্ট হারে কর দিয়ে বৈধ করার কথা বলা হয়েছে। যেমন, কোনো ব্যক্তি যদি তার প্লট বা ফ্ল্যাট গোপন করে থাকেন তাহলে তিনি নিদ্দিষ্ট হারে কর দিয়ে সেটি বৈধ করতে পারবেন। অন্যদিকে, অপ্রদর্শিত টাকার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে সেটি বৈধ করা যাবে। আয়কর ফাইলে দেখানো হয়নি এমন সম্পদকে কালো টাকা বা সম্পদ হিসেবে বর্ণনা করেন অর্থনীতিবিদরা।