যশোর শহরে বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারের থেকে প্রার্থীদের কর্মীর উপস্থিতি বেশি

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ যশোর সদর উপজেলা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলাকালে বুধবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে পৌর সদরের মিউনিসিপ্যাল প্রিপারেটরি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোটার শূন্য মাঠে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা বসে অলস সময় পার করছেন। ভোটদান কক্ষের মধ্যে ভোট গ্রহণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অবস্থাও ঠিক একই। এই কেন্দ্রে তখন ২ হাজার ১০০ ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে মাত্র ৮১টি। এর আগে রাজ্জাক কলেজ কের্ন্দের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার জানান, ২ হাজার ৩৩৮ ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে মাত্র ৯৬টি।
ভোট কেন্দ্রে থেকে বাইরে এসে জাফর আহমেদ নামের এক ভোটারের সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি বলেন, মোটরসাইকেল ও ঘোড়া প্রতীকের ব্যাচধারী কিছু কর্মী সমর্থকদের দেখা গেলেও অন্যা কোনো প্রার্থীর পক্ষের কর্মী সমর্থকদের দেখা যায়নি। প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা বিভিন্ন ভাবে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েও কেন্দ্রে ব্যাপক ভোটারের উপস্থিতি ঘটাতে পারেননি। এখানে যাদের দেখা যায় তারা প্রার্থীর কর্মী সমর্থক কিংবা তাদের পারিবারে সদস্যরা। সাধারণ ভোটারের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। ভোটের প্রতি মানুষের আগ্রহ হারিয়ে গেছে। মানুষের মনে আগে থেকে একটা ধারণা হয়ে আছে, কেন্দ্রে না গেলেও আগে থেকে ভোট হয়ে যায়। আমি মনে করি সে কারণে ভোটের মাঠে ভোটারের এমন খরা।
মিউনিসিপ্যাল প্রিপারেটরি উচ্চ বিদ্যালয় কিংবা ডা. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ কেন্দ্রের মতো প্রতিটি কেন্দ্রের চিত্র ছিল একই। অধিকাংশ কেন্দ্রে ব্যাচ পরিহিত চেয়ারম্যান পদের দুই থেকে তিনজন প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের দেখা মিললে বাকিদের কোনো কর্মী সমর্থকদের দেখা মেলেনি। এমনকি অধিকাংশ প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট দেওয়ার মতো কোনো লোকও ছিল না। এই প্রতিবেদক ভোট গ্রহণ চলাকালে বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে এমন চিত্র দেখতে পান।
ভোট গ্রহণের দুই ঘন্টা পর সরকারি এম এম কলেজ কেন্দ্রের মহিলা বুথের দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসার জানান, ৩ হাজার ৪৯৩ ভোটের মধ্যে ১০৭টি এবং পুরুষ বুথে সাড়ে তিন হাজার ভোটের মধ্যে ১৬১টি ভোট পড়েছে।
সেবাসংঘ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে অন্যান্য কেন্দ্রের থেকে বেশ কিছু ভোটারের উপস্থিতি দেখা যায়। এই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের দুই ঘন্টার পর ১০টি মহিলা বুথের মোট ৩ হাজার ৪০৪ জন ভোটের মধ্যে ২২৫টি ভোট পড়ে। পুরুষ বুথে ৩ হাজার ২৯৪ ভোটারের মধ্যে ৪৪২টি পড়ে।
জিলা স্কুল কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার জানান, পুরুষ বুথে ভোট গ্রহণের দুই ঘন্টায় মহিলা বুথে ২ হাজার ৮৫৬ ভোটারের মধ্যে মাত্র ১১৩টি ভোট পড়েছে এবং পুরুষ বুথে ২ হাজার ৭৯০ ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে মাত্র ১১৫টি।
আব্দুস সামাদ মেমোরিয়াল একাডেমি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার জানান, বেলা ১২ টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রের পুরুষ বুথে ২ হাজার ৪৪৭ ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে ৪৩৫টি। মহিলা বুথে ২ হাজার ৫২৭ ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ৩৫০টি। ভোট কেন্দ্রের পাশে কথা হয় সেলিম হোসেন নামের একজন ভোটারের সাথে । তিনি বলেন, এবারের ভোটের মাঠে প্রার্থীর ছড়াছড়ি ছিল। কিন্তু আজ ভোট গ্রহণের দিন, দুই থেকে তিনজন প্রার্থীর কর্মী সমর্থক ছাড়া বাকি প্রার্থীর কোনো কর্মী সমর্থক দেখা যায়নি। ভোটের মাঠে আপনি যদি প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের খুঁজে না পান, তাহলে ভোটার খুঁজে পাবেন কোথা থেকে?
বেলা দেড়টার পর মধুসূদন তারাপ্রসন্ন বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রের পুরুষ বুথে ৪ হাজার ১৮৪ ভোটের মধ্যে ৬৭৯ টি এবং মহিলা বুথে ৪ হাজার ২৮৫ ভোটের মধ্যে ৩৬৩টি ভোট পড়ে। এই কেন্দ্রে মোটরসাইকেল ও ঘোড়া প্রতীকের পাশাপাশি শালিক প্রতীকের কিছু কর্মী সমর্থকদের দেখা যায়।
বেলা ৩ টার কিছু সময় পর কলেক্টরেট স্কুল কেন্দ্রে গিয়ে জানা যায়, ২ হাজার ৬৯৯ ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ৫৫০টি। ভোট গ্রহণের শেষ মুহূর্তে এম এন খান প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার জানান, ৩ হাজার ৪৩০ ভোটের মধ্যে মাত্র ৫১১টি ভোট পড়ে।
এবারের যশোর সদর উপজেলা পরিষদের এক তরফা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ব্যতিত অন্য কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা সাধারণ কোনো প্রার্থী অংশ নেয়নি। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৮ জন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। একটি পৌরসভা এবং ১৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত যশোর উপজেলার ভোটার সংখ্যা ৬ লাখ ৭ হাজার ৭৪২। এরমধ্যে পুরুষ ৩ লাখ ৪ হাজার ৭৩০, মহিলা ৩ লাখ ৩ হাজার ৫২ ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৭ জন। মোট ২১৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হয়।