মাগুরায় ডা. মাসুদুল হকের বিরুদ্ধে মৃত রোগী রেফার্ডের অভিযোগ

0

শালিখা (মাগুরা) সংবাদদাতা ॥ মাগুরায় আলোচিত ‘পলিথিন ডাক্তার’ খ্যাত মাসুদুল হকের অপচিকিৎসায় সীমু খাতুন (১৯) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। মৃত্যুর পর ‘উন্নত চিকিৎসার’ নামে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে পাঠানোর অভিযোগ করেন স্বজনরা। মৃত সীমু খাতুন মাগুরা সদর উপজেলার বেলনগর গ্রামের মনিরুল ইসলামের মেয়ে এবং পার্শ্ববর্তী ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামারখালী আড়পাড়া গ্রামের নূর আলীর স্ত্রী।
জানা যায়, মাগুরা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের পূর্বপাশে অবস্থিত ডাক্তার মাসুদুল হকের মালিকানাধীন জাহান প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সেখানে গত বুধবার সকালে সীমু খাতুন নামে ওই প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন করেন ডাক্তার মাসুদুল হক। অস্ত্রোপচারের পর ওই প্রসূতির নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় এবং পরে তার মৃত্যু হয়।
মৃতার পিতা মনিরুল ইসলামসহ পরিবারের সদস্যরা জানান, গত বুধবার সকাল ১০ টায় সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য তার মেয়ে সীমুকে শহরের জাহান প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করেন তারা। এ সময় ডাক্তার মাসুদুল হক সিজারিয়ান অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। কোনো পরীক্ষা নীরিক্ষা ছাড়াই বেলা ১১ টায় সীমু খাতুনকে তড়িঘড়ি অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে তিনি অস্ত্রোপচার করেন এবং একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। সন্তান সুস্থ থাকলেও মায়ের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণসহ ব্লাডপ্রেশার বৃদ্ধি পায় এবং প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে সারাদিন ব্লিডিং বন্ধ না হওয়ায় বিকেল সাড়ে পাঁচটায় রোগীর নিশ্চিত মৃত্যু জানতে পেরে দ্রুত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন এবং ডাক্তার মাসুদুল হক নিজেই তড়িঘড়ি করে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেন। এ সময় স্থানীয় গ্রাম্য ডাক্তারের নিকট চিকিৎসার জন্য কুড়ি হাজার টাকাও প্রদান করেন। পরে সীমু খাতুনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সেই সাথে কর্তব্যরত চিকিৎসক এটাও জানান যে রোগীকে ফরিদপুর নিয়ে আসার অন্তত দুই থেকে তিন ঘন্টা আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। এ জন্য দায়ী ডাক্তার মাসুদুল হকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি জানান স্বজনরা।
এ বিষয়ে মাগুরা জাহান প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক ডা. মাসুদুল হক বলেন, সন্তান জন্ম দেওয়ার ৪ থেকে ৫ ঘন্টা পর থেকে প্রসূতি মায়ের ব্লাডপ্রেশার হাই হয়ে শরীরে কাঁপুনি দিতে থাকে। তখন তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে রোগীর স্বজনদের মাধ্যমে জানতে পারি সীমু খাতুন মারা গেছেন। চিকিৎসায় অবহেলা ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ অস্বীকার করে সঠিক নয় বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, মাগুরা জাহান ক্লিনিকের মালিক ডাক্তার মাসুদুল হকের অপচিকিৎসার চিত্র তুলে ধরে ২০১৯ সালে অপচিকিৎসার শিকার ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে মাগুরার পলিথিন ডাক্তার আখ্যা দিয়ে জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে একাধিক প্রতিবেদন প্রচারসহ আদালতে ভুক্তভোগীদের দায়েরকৃত এক ডজনেরও বেশি মামলা হয়েছিল । সেই সাথে মাগুরা থেকে এই চিকিৎসককে বিতাড়িত করতে একাধিকবার ঝাড়ুমিছিল মানবন্ধনসহ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন সাধারণ মানুষ।