রামপালে অর্ধ লাখ মানুষকে দুর্গত ঘোষণা, ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে

0

 

এমএ সবুর রানা, রামপাল (বাগেরহাট)॥ ঘূর্ণিঝড় রিমালের ছোবলে বিধ্বস্ত গোটা রামপাল উপজেলা। প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ দুর্গত হয়ে পড়েছে। প্রতি মুহর্তেই ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে প্রায় পাঁচ থেকে ছয়শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের বরাদ্দ অপ্রতুল হওয়ায় ত্রাণ দপ্তরের ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
উপজেলার ত্রাণ দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে সর্বশেষ পাওয়া তথ্য মোতাবেক জানা গেছে, এ উপজেলায় ১০ টি ইউনিয়নে প্রায় পৌনে ২ লাখ মানুষের বসবাস। এর মধ্যে প্রায় অর্ধ লাখ মানুষকে দুর্গত বলে চিহ্নিত করেছে উপজেলা প্রশাসন।
উপজেলা পিআইও মো. মতিউর রহমান জানান, এ উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নে মোট ১ হাজার ৪১০ টি বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এরমধ্যে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ৪৫০ টি বাড়ি। এতে শতকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। রিমালের ক্ষতি কমাতে ১৬৯ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছিল। এতে প্রায় ১২ হাজার দুর্গত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। প্রশাসনের নজরদারী থাকায় কোন মানুষ আহত বা নিহত হননি।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কার্মকর্তা অসীম কুমার ঘোষ জানান, এ উপজেলায় মাছের ঘের ভেসেছে ৮ হাজারটি ও পুকুর ভেসে গেছে ১ হাজার ৫০০ টি। এতে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। যা আরো বাড়তে পারে।
রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি। উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী গোলজার হোসেন জানান, রাস্তাঘাট পানির নিচে। এখনো তলিয়ে থাকায় ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে মাঠে কাজ চলছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্মকর্তা জিএম অলিউল ইসলাম জানান, ঝড়ে মোট ২ হাজার ৯৩ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আম, কলা, পেঁপে, সবজি ও মরিচের ক্ষতি বেশি হয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা।
মাধ্যমিক শিক্ষা কার্মকর্তা আনোয়ারুল কুদ্দুস জানান, মোবাইল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় সব এলাকার তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে স্কুল ও মাদরাসা মিলে মোট ১০ প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া গেছে। যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ২২ লাখ টাকা। এছাড়াও অফিস কক্ষে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে চেয়ার টেবিলসহ লক্ষাধিক টাকার মালামালের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্মকর্তা মো. মতিউর রহমান জানান, মোবাইল নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তথ্য পেতে বিলম্ব হচ্ছে। মাত্র ৬ টি প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া গেছে। এতে ক্ষতির পরিমান ১৫ লাখ টাকার বেশি যা আরো বাড়বে।
পোল্ট্রি ও গবাদিপশুর ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে প্রাণিসম্পদ হাসপাতালের প্রতিনিধি সুবাস চন্দ্র জানান, বেশকিছু পোল্ট্রি মালিকের মুরগিসহ ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।
রামপাল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্মকর্তা মো. মতিউর রহমান জানান, ১০ টি ইউনিয়নে প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা ধরা হলেও তা হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রহিমা সুলতানা বুশরা বলেন, রিমালের আঘাতে এ উপজেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মানুষের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। মৎস্য ঘের ভেসে গেছে, কৃষি, অবকাঠামো, স্থাপনা ও পোল্ট্রি ফার্মের ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ৫ টন চাল পেয়েছি। যা আশ্রয় কেন্দ্রের দুর্গতদের দেওয়া হয়েছে।