এসএসসিতে দেশসেরা যশোর শিক্ষা বোর্ড

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে যশোর শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা।
এ বোর্ডে এবার সবচেয়ে বেশি, ৯২ দশমিক ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। আর সবচেয়ে কম পাস করেছে সিলেট বোর্ডে, ৭৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
এর আগে ২০২৩ সালে বরিশাল বোর্ডে সবচেয়ে বেশি, ৯০ দশমিক ১৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। সবচেয়ে কম পাসেরহার ছিল সিলেট বোর্ডে, ৭৬ দশমিক ০৬ শতাংশ। কয়েক বছর ধরে পাসের হার ও জিপিএ-৫ দু-দিক থেকেই পিছিয়ে রয়েছে এই বিভাগ।
প্রতিবারের মত এবারও জিপিএ-৫ এ সবার উপরে রয়েছে ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা, এ শিক্ষা বোর্ডের ৪৯ হাজার ১৯০ জন শিক্ষার্থী পূর্ণ জিপিএ পেয়েছে।
সবচেয়ে কম জিপিএ-৫ পেয়েছে সিলেট বোর্ড। এই বোর্ডের ৫ হাজার ৪৭১ জন শিক্ষার্থী এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সকালে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের আনুষ্ঠানিকতা সারেন। পরে বেলা সাড়ে ১২টায় সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১১ বোর্ড মিলিয়ে পাসের হার ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন।
গত বছরের বিপর্যয় কাটিয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে দেশসেরা হয়েছে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। এ বছর যশোর বোর্ড থেকে ২০ হাজার ৭৬১ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৯২ দশমিক ৩৩, যা দেশের আটটি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সেরা।
শিক্ষা বোর্ডের ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, এ বছর যশোর শিক্ষা বোর্ড থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯২৬ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৭৭ পরীক্ষার্থী। ২০২৩ সালে এই শিক্ষা বোর্ডে ফল বিপর্যয় ঘটে। পাসের হার ছিল ৮৬ দশমিক ১৭।
এবার ঘুরে দাঁড়ানোর কারণ জানতে চাইলে যশোর বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বিশ্বাস শাহিন আহম্মেদ বলেন, যশোর শিক্ষা বোর্ডের প্রশ্নব্যাংক থেকে মানসম্মত প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষা দেয়। এ কারণে বোর্ডের চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের মুখোমুখি হওয়া তাদের জন্য সহজ হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে একধরনের সামাজিক জাগরণ সৃষ্টি করা হয়েছে। এটাও ফল ভালো হওয়ার একটি বড় কারণ।
যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে অনেক এসএসসি পরিক্ষার্থী অভিভাবকদের সাথে নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি ও মিষ্টিমুখ করতে বিদ্যালয়ে এসেছে। কেউ কেউ বাসা থেকেই ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন এসএমএস-র মাধ্যমে ফলাফল পেয়েও সাফল্যের উল্লাস করতে বিদ্যালয়ে এসেছে। শিক্ষার্থীদের সাফল্যে একে অপরকে মিষ্টি মুখ করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা।
যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া হক লিমা বলে, জিপিএ-৫ পেয়েছি। অনেক ভালো লাগছে। করোনার পর এবারই আমরা পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা দিই। গণিত বিষয়ে একটু কঠিন প্রশ্ন মনে হয়েছিল। তবুও আমরা সহপাঠীরা সবাই ভালো ফলাফল করতে পেয়ে আনন্দিত।
আরেক পরিক্ষার্থী জান্নাতুস ফেরদৌস মিথি বলে, শিক্ষা জীবনে মায়ের অবদান সবথেকে বেশি ছিল। শিক্ষকরা যেমন স্কুলে গাইড দিতেন, তেমন বাসায় থাকতে মা গাইড দিতেন। শিক্ষক এবং মা-আব্বুর অবদানেই আজ ভালো ফলাফল হয়েছে। আমার ইচ্ছা আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবো এবং ব্যারিস্টার হবো। জেলার অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও শিক্ষার্থীরা ঢাকঢোল পিটিয়ে আনন্দ উল্লাস করতে থাকে।

মেয়েরা এগিয়ে যশোর বোর্ডে এবারও ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা ভালো ফল করেছে। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা, পাসের হার ও জিপিএ-৫—সব সূচকেই মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। এ বছর ১ লাখ ৬০ হাজার ৯২৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮১ হাজার ৪৫৯ জন ছাত্রী ও ৭৯ হাজার ৪৫৭ জন ছাত্র। মেয়েদের পাসের হার ৯৪ দশমিক ২৫ আর ছেলেদের ৯০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ১১ হাজার ৪৩১ জন মেয়ে পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পাওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছে। চার বছর ধরে এই শিক্ষা বোর্ডে মেয়েদের এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বিশ্বাস শাহিন আহম্মেদ বলেন, শ্রেণিকক্ষে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের উপস্থিতি বেশি। পড়াশোনায় তারা মনোযোগীও তুলনামূলক বেশি। তা ছাড়া মেয়েদের এগিয়ে দিতে অভিভাবকেরাও এখন বেশি সচেতন। সব মিলিয়ে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা ভালো করছে।
সেরা জেলা সাতক্ষীরা
পাসের হার ও অন্যদিক বিবেচনায় যশোর শিক্ষা বোর্ডের শীর্ষে রয়েছে সাতক্ষীরা জেলা। এই জেলার শিক্ষার্থীদের পাসের হার ৯৬ দশমিক ১২। দ্বিতীয় অবস্থানে খুলনা ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যশোর জেলা।
শতভাগ পাস ৪২২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
যশোর বোর্ডের আওতায় এ বছর ২ হাজার ৫৬৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। এর মধ্যে শতভাগ পাস করেছে ৪২২টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। যেখানে গত বছর এর সংখ্যা ছিল ১৯৩। এ বছর একজনও পাস করেনি, এমন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। গত বছরও তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাসের হার শূন্য ছিল।