স্বাগত ২০২৪

0

মাসুদ রানা বাবু॥ আজ সকালে পূর্বাকাশে যে সূর্য উঠেছে তা নতুন বছরের। মহাকালের আবর্তে বিলীন হয়ে গেল আরেকটি বছর। নতুন স্পন্দন, নতুন আশা, নতুন সম্ভাবনাকে সামনে নিয়ে শুরু হলো নতুন বছর। স্বাগতম ইংরেজি নববর্ষ ২০২৪।
প্রাপ্তি, হতাশা ও নানা ঘটনা-দুর্ঘটনায় শেষ হলো ২০২৩। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে নানা ঘটনার সাক্ষী ২০২৩। বিশেষ করে বাংলাদেশে ২০২৩ ছিল নানা অনিশ্চয়তার মধ্যে। রাজনৈতিক উত্তাপ, অর্থনৈতিক মন্দা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি- সব মিলিয়ে ঘটনাবহুল ছিল ২০২৩ সাল। গতকাল রোববারের সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে হতাশা, দুঃখ ও না পাওয়ার বেদনাকে বিসর্জন দিয়ে এবং আনন্দ উল্লাসের মাধ্যমে নতুন আশা আর নতুন সম্ভাবনাকে স্বাগত জানিয়ে শুরু হচ্ছে ইংরেজি নতুন বছর।
ইংরেজি নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো.সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আলাদা বাণী দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
২০২৩-এর শুরু থেকেই যেমন রাজনৈতিক অঙ্গন ছিল উত্তপ্ত , তেমন শুরু হচ্ছে নতুন বছর ২০২৪-এর। বিএনপিসহ রাজপথের বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন তুঙ্গে। সরকারপতনের একদফা দাবিতে সোচ্ছার তারা। অন্যদিকে সরকার দল আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে সক্রিয় ছিল মাঠে। সভা, সমাবেশ, মিছিল, মিটিংয়ে আতঙ্ক ছড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও। সহিংসতার একাধিক ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটে। বছরের শেষদিকে এসে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ঘোষণা ও তার প্রয়োগের মধ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা ছিল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এ নির্বাচনী তফসিল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপিসহ অধিকাংশ বিরোধী দল। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এ নির্বাচেন অংশ নেয়।
বিদায়ী বছরে মানবাধিকার,গণতন্ত্র, আইনের শাসন, বিএনপিসহ বিরোধী মতের প্রতি সর্বোচ্চ দমন পীড়নসহ নানা বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ বরারবই বিশ্ব গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে। সেখানে হত্যা, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, দমন-পীড়নে কিংবা রাজনৈতিক পেশীশক্তি, মানবাধিকার পরিস্থিতিকে এক ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে নিয়ে গেছে এমনটি বলা হয়।
এছাড়াও ২০২৩ সালে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। নিত্যপণ্যের অতিরিক্ত দামে নাভিঃশ্বাস ছিল জনসাধারণের মধ্যে। বিশেষ করে খেটেখাওয়া মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। টিসিবি’র ট্রাকের সামনে দীর্ঘ লাইন ছিল খুব আলোচিত।
অপরদিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু অতীতের যে কোনো বছরের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে এবার। ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিয়ে নাকাল হতে হয়েছে মানুষকে। স্যালাইনের দাম বৃদ্ধি শুধু নয়, কখনো কখনো এটি বাজারে পাওয়া মুশকিল হয়ে গেছে। আবার ডেঙ্গু রোগীর কারণে ডাবের চাহিদা বাড়ায়, একটি ডাব ২০০ টাকায়ও বিক্রি হতে দেখা গেছে।
গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে পুলিশের নির্বিচার গুলি বর্ষণ ও হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে।
অন্যদিকে বছরটিতে আন্তর্জাতিক ঘটনাসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ। হামাসের এক অপারেশনকে কেন্দ্র করে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বর হামলা চালানো শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। যা এখনো চলমান। এ যুদ্ধে এখনো পর্যন্ত শিশুসহ ২১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হন।
চলতি বছরে অনুষ্ঠিত হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপে লক্ষ্যপূরণ করতে পারেনি সাকিবরা। ভালো করতে পারেনি এশিয়া কাপেও। এবছর সবটা মিলে ৩২টি ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। এটা এক বছরে সর্বোচ্চ সংখ্যা ম্যাচ খেলা টাইগার বাহিনীর। তবে জয় এসেছে মাত্র ১১টিতে। টি-টোয়েন্টিতেও ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ। মাঠে ও মাঠের বাইরে নানাভাবে আলোচিত হয়েছে দেশের ক্রিকেটাররা। ওয়ানডে বিশ্বকাপ দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বাদ দেওয়ার ইঙ্গিত ছিলো বিসিবির। পরে দর্শকদের চাপের মুখে এবং বিকল্প ক্রিকেটারদের ব্যর্থতায় তাকে দলে নেওয়া হয়। দারুণ খেলে নিজেকে প্রমাণ করেন রিয়াদ। বিশ্বকাপেই অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে টাইমড আউট করে ‘অখেলোড়োচিত’ আচরণের অভিযোগে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বিতর্কিত হন। দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে বল হাত দিয়ে ধরে ‘অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড আউট’ হয়ে বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম আলোচনায় আসেন। তবে আলোচনা-সমালোচনায় সবকিছু ছাপিয়ে গেছে সাকিব-তামিম সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন। বলা হয়ে থাকে, দুজনের দূরত্বের কারণেই বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যান তামিম ইকবাল।
আগের বছর নারী ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়া সেরা হলেও এবছর ভালো যায়নি সাবিনাদের। অর্থাভাবে তাদের মিয়ানমারে পাঠাতে পারেনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। ৪ বছর পর সাফের শেষ চারে যেতে পেরেছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে নিজেদের মাটিতে লেবাননকে রুখে দিয়েছে লাল-সবুজের দল। আর বাংলাদেশের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আর্জেন্টিনার লিগ দলে সুযোগ পেয়েছেন।
নববর্ষ উপলক্ষ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাণীতে বলেছেন, গত বছরের স্বজন হারানোর বেদনা-সহ বেশকিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা এবং সর্বোপরি দেশবাসির সকল মৌলিক ও মানবিক অধিকার হারানোর যন্ত্রণা নিয়েই আমাদের অভীষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রত্যয়-দীপ্ত যাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। আগামী বছর আবার নতূন উদ্যমে শান্তি, সম্প্রীতি ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে আমাদের তাগিদ সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বময় সংঘাত আর অশান্তির ঘটনা প্রবাহে নতুন বছরটিকে সত্যিকারের চিরায়ত গণতন্ত্র, শান্তি ও অগ্রগতির বছরে পরিণত করতে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।