কোটচাঁদপুর ও মহেশপুরে চাষিরা ব্যাপক হারে ঝুঁকছেন ড্রাগন চাষে

0

আলমগীর খান, কোটচাঁদপুর (ঝিনাইদহ) ॥ কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলাসহ আশপাশ এলাকায় ব্যাপক হারে ড্রাগন চাষের কারণে ধানি জমিসহ অন্যান্য ফসলাদি চাষের জমি আশঙ্কা জনক হারে কমে যাচ্ছে।
ব্যাপক লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলের চাষিরা ড্রাগন চাষে ঝুঁকে পড়েছে। ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে ড্রাগন চাষ। মহেশপুর উপজেলার গৌরীনাথপুর, আলামপুর, মালাধরপুর, বিদ্যাধরপুর, আদমপুর গ্রামে ধানি ও অন্যান্য ফসলাদির জমি পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এমনকি ফলদ ও কাঠ জাতীয় বাগান কেটেও ড্রাগন চাষ করা হচ্ছে। দেখাদেখি এ ড্রাগন চাষ পার্শ্ববর্তী কোটচাঁদপুর উপজেলাতেও ব্যাপক হারে শুরু হয়েছে।
মহেশপুর উপজেলার গৌরীনাথপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম জানান, তিনি ও তার নিকট আত্মীয় জাহিদুল ইসলাম ৭/৮ বছর প্রথমে ড্রাগনের চারা সংগ্রহ করে দুজনে দেড় বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করেন। এক বছরের মাথায় সে সময় ওই দেড় বিঘা জমির ড্রাগন ফল বিক্রি করেন ১২ লাখ টাকা। পরের বছর তারা আরও পাঁচ বিঘা জমিতে চাষ করেন। তাদের ড্রাগন চাষে অল্প সময়ে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়া দেখে ওই এলাকাতে শুরু হয় ড্রাগন চাষের প্রতিযোগিতা। বর্তমানে নজরুল ইসলাম একাই চাষ করছেন ২০ বিঘা ড্রাগন। এ প্রতিবেদক মহেশপুর গৌরীনাথপুর গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখতে পান চারপাশে ড্রাগন আর ড্রাগন। পাশে দু একটা ফাঁকা জায়গা থাকলেও সেখানে চলছে ড্রাগন চাষের প্রস্ততি। চলছে অপরিপক্ব কাঠ জাতীয় গাছের বাগান, কমলা লেবু, মালটা, পেয়ারা, আম বাগান কাটার ধুম। এ সব বাগান থেকে চাহিদা অনুযায়ী ফল বা অর্থ না পাওয়ায় সেখানে তারা ড্রাগন চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ওই এলাকার রফিকুল ইসলামের আড়াই বিঘা জমিতে কাটা আমন ধান জড়ো করছিলেন দিন মজুর শাহাজাহান আলী। এখানে আর ধানি জমি আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন- আমাদের গ্রামে এখন ধানি জমি খুব একটা নেই। এই ধান উঠে গেলে এখানেও ড্রাগন চাষ হবে। পাশেই ড্রাগন ক্ষেতে কাজ করছিলেন আব্দুর জব্বার তিনি বলেন- দু বছর আগেও এ মাঠে চাষ হতো ধান, বাদাম, ভুট্টাসহ নানাবিধ ফসল। এখন সে ফসল আর নেই বললেই চলে। এখন নিচু জমিগুলোতে সামান্য কিছু ধান চাষ হচ্ছে। বাকি সব জমিতে ড্রাগন।
গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে বাড়ির উঠানেও ড্রাগন লাগানো হয়েছে। ওই গ্রামের বিল্লাল হোসেন বলেন- আমি ও আমার ভাইপো তরিকুল ইসলাম রিয়েল ৩৫বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করেছি। এসব জমিতে আগে ধান, বাদাম ভুট্টাসহ সবজির আবাদ করা হতো। এ সব ফসলের আবাদ খরচ ঠিকমত ওঠে না। একবিঘা জমিতে ওই সব ফসল চাষ করে বছরে পাওয়া যেত ১লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এর মধ্যে কৃষি শ্রমিক, সার, কীটনাষকসহ অন্যান্য খরচ বাদ দিলে খুব একটা লাভ থাকে না। অথচ ১বিঘা ড্রাগনে বছরে ৮ থেকে ৯লাখ টাকা বিক্রি করা যায়। খরচ বাদ দিলে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা আনাসে লাভ থাকে। এলাকায় ব্যাপক ড্রাগন চাষ হওয়ায় ৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোটচাঁদপুর শহরে, মহেশপুরের গৌরনাথপুর ও আদমপুর নামক গ্রামে বড় বড় তিনটি ড্রাগন হাট চালু হয়েছে। এই হাট তিনটি থেকে গড়ে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ কোটি টাকার ড্রাগন বিক্রি হচ্ছে। এখান থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ড্রাগন ফল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে।
এ বিষয়ে মহেশপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব প্রাপ্ত) আসাদুজ্জামান এ প্রতিবেদককে বলেন- দিন দিন ধানি জমি আশঙ্কাজনক ভাবে কমে যাচ্ছে কথাটা ঠিক। আমরাও চাষিদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। বলছি আপনার যদি ৫বিঘা জমি থাকে ৪বিঘাতে ধান চাষ করেন ১বিঘাতে ড্রাগন লাগান। তাতে চাষিরা কর্ণপাত করছেন না। তিনি বলেন- চাষিরা বাণিজ্যিক ভাবে ড্রাগন চাষে লাভবান বেশি হচ্ছেন সে কারণে এ চাষেই ঝুঁকে পড়ছেন বেশি। এখানে বর্তমানে ৪শ হেক্টরের বেশি ড্রাগন চাষ হচ্ছে তবে প্রতিদিনই এ চাষ বাড়ছে।
কোটচাঁদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিবুল হাসান বলেন- কোটচাঁদপুরেও দিনে দিনে ড্রাগন চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে কোটচাঁদপুরে ৩শ হেক্টরের বেশি ড্রাগন চাষ হচ্ছে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে ধানি জমিসহ ফলদ ও বনজ সম্পদ ধ্বংস করে ড্রাগন চাষ করছেন চাষিরা। বাণিজ্যিক ভাবে ড্রাগন চাষে তারা লাভবান হচ্ছে বেশি। যে কারণে অন্যান্য চাষে আগ্রহ কম। তিনি বলেন যেহেতু ধানি জমি কমে যাচ্ছে সেহেতু ধানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আগামীতে ধান উৎপাদন অব্যাহত রাখতে আরও উচ্চ ফলনশীল ধান চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে আমাদের। তিনি বলেন- ড্রাগনের মত এধরনের ফলের চাষ ব্যাপক হারে হলেও প্রাকৃতিক নিয়মে এক সময় চাষির ধানসহ পূর্বের অন্যান্য ফসল চাষে তারা আবারও ফিরে আসবে। তবে তিনি আগামীতে ধান চাষে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে খুব একটা সমস্যা হবে না বলে জানান।
কোটচাঁদপুর কালিগঞ্জ মহেশপুর রেঞ্জের বন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন- চাষিদের যে ফসলে লাভ বেশি তারা সে দিকে ঝুঁকে পড়ে। এখানেও তার ব্যতিক্রম নয়। আমরা অপরিপক্ব কাঠের গাছ না কাটার জন্য নানান ভাবে পরামর্শ দিচ্ছি। কিন্তু তারা শুনছেন না। যে কারণে চাষিদের ফসলের জন্য গাছ কাটা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।