যশোর সদর উপজেলা চেয়ারমানের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্কুলের সভাপতি হতে প্রধান শিক্ষককে বাড়িতে ডেকে নিয়ে দুই ঘণ্টা ধরে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এমনকি তিনি স্কুলে গিয়ে বর্তমান সভাপতিকে অপমাণিত করে বেরও করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। এ বিষয়ে বক্তব্য দেয়ার কথা বলে ডেকে নিয়েও তিনি বক্তব্য দেননি । পুলিশ বলছে, নির্যাতনের ঘটনা জানলেও তারা এখনো কোনো অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্যাতিত প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরেই আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের সভাপতি হতে চান। সম্প্রতি তিনটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পর তিনি ফোন করে ওই নিয়োগ কার্যক্রম বাতিলের নির্দেশ দেন। তিনি দাবি করেন সভাপতি হয়ে তিনি এই নিয়োগ সম্পন্ন করবেন। কথা না রাখায় গত ৩১ অক্টোবর অপহরণ করা হয় তাকে। এরপর তিনি ২ নভেম্বরের বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নির্বাচন বন্ধের জন্য নির্যাতন চালান। এবং তাকে দিয়ে আবেদনপত্র লিখিয়ে নিয়ে সেই নির্বাচন বন্ধ করান। পরবর্তীতে ৯ নভেম্বর বিদ্যালয়ে অভিভাবক সমাবেশ আহ্বান করলে ক্ষিপ্ত হন মোস্তফা ফরিদ চৌধুরী। ৭ নভেম্বর ফোন করে নিজের বাড়িতে ডেকে পাঠান প্রধান শিক্ষককে। পরের দিন সকালে উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়িতে গেলে প্রায় দুই ঘণ্টা আটকে রেখে প্রধান শিক্ষককের উপর নির্যাতন চালানো হয় এবং অভিভাবক সমাবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়।
তিনি (প্রধান শিক্ষক) আরো বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার লোকজন আমার অন্ডকোষ এবং মাথা মুখে ব্যাপক আঘাত করেছে। আমাকে যখন ছেড়ে দেয়া হয় অন্ডকোষের যন্ত্রণা থেকে লাঘব পেতে প্রকাশ্যে রাস্তায় লোকজনের সামনে প্রস্রাব করে দেই। তারপরও আমার ব্যথা কমেনি। পাশের একটা ফার্মেসি থেকে ব্যথার ওষুধ কিনে খাই। এরপর ফোন করে আমার স্ত্রীকে ডেকে নিয়ে এসে তার সহায়তায় হাসপাতালে যাই। খবর পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ফোন দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধা দেন। বলেন ভর্তি হলে তোকে খুন করবো। মানুষ মারলে কিছুই হয় না। এরপর আমি ভয়ে বাড়ি ফিরে আসি এবং গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছি। আমি যাতে কাউকে কিছু না বলি সেজন্য আমাকে প্রতিদিনই হুমকি দেয়া হচ্ছে। আপনারা (সাংবাদিক) কীভাবে জেনেছেন জানি না, এর দায়ও কিন্তু আমার ঘাড়ে আসবে। বর্তমানে পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি।
এছাড়া ৯ নভেম্বর উপজেলা চেয়ারম্যান তার সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে বিদ্যালয়ে হাজির হন এবং নিজেকে সভাপতি ঘোষণা করেন। এ সময় বিদ্যালয়ে উপস্থিত বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট মোকাররম হোসেনকে লাঞ্ছিত করে স্কুল থেকে বের করে দেন। এনিয়ে বিভিন্ন দপ্তরের অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি তারা।
বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট মোকাররম হোসেন বলেন, অভিভাবক সমাবেশ বন্ধ করা হলেও আমি ৯ নভেম্বর স্কুলে যাই। খবর পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান লোকজন নিয়ে স্কুলে আসেন। এ সময় তার সাঙ্গোপাঙ্গরা আমাকে লাঞ্ছিত করে এবং স্কুল থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করে। সে সময় উপজেলা চেয়ারম্যান প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ছিলেন। তিনি সবাইকে শুনিয়ে বলেন এখন থেকে এই বিদ্যালয়ের সভাপতি আমি,আমার নির্দেশে সকল কার্যক্রম চলবে। আমি বিভিন্ন দপ্তরে বিষয়টি জানিয়েছি কিন্তু কোন প্রতিকার পাইনি। এই স্কুলটি একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেল।
এ বিষয়ে বক্তব্য দেয়ার কথা বলে সাংবাদিকদের ডেকে নিয়েও বক্তব্য দেননি উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ চৌধুরী।
এদিকে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান জানান, নির্যাতনের ঘটনা জানলেও তারা এখনো কোনো অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অবশ্য যশোর উপশহর বিরামপুর এলাকার বাসিন্দা প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন এর আগে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে যশোর কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন।