জিপিএ-৫ পাওয়া ফাতেমা ও জোহরার স্বপ্ন পূরণে বাধা

0

 

বাগেরহাট সংবাদদাতা॥ হতদরিদ্র পরিবারটির দিনমজুর পিতা পক্ষাঘাতগ্রস্ত। মা সেলাইয়ের কাজ করেন। একমাত্র ছোট ভাই পাঁচ বছর বয়স থেকেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। টাকার অভাবে নিয়মিত চিকিৎসা করাতে না পারায় এখন শারীরিক সমস্যার সাথে অনেকটা মানসিকভাবে ভারসম্যহীন।হতদরিদ্র পরিবারের দুই জমজ বোন এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে ফকিরহাট উপজেলার শুভদিয়া অবস্থিত শেখ হেলাল উদ্দীন সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। এমন একটা প্রান্তিক পরিবার থেকে উঠে এসেছে ফাতেমা ও জোহরা। তাদের স্বপ্ন বড় হয়ে চাটার্ড একাউটেন্ট হবে। সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। কিন্তু সে স্বপ্নে এখন বাঁধ সেধেছে চরম দরিদ্রতা।
বাগেরহাট জেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে শুভদিয়া ইউনিয়নের দুর্গম কচুয়া গ্রামের জিল্লুর রহমান তালুকদারের জমজ মেয়ে ফাতেমা খাতুন ও জোহরা খাতুন। অভাবের কারণে দু বোন অন্যের বাড়িতে প্রাইভেট পড়িয়ে যে সামান্য উপার্জন করে তার সাথে মায়ের সেলাইয়ের টাকা দিয়ে কোন মতে সংসার চলে। ধারকর্য ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় এসএসসি পরীক্ষায় ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে দু’বোন জিপিএ-৫ পেয়েছে। দু বেলা ঠিকমতো খাবার খরচ চালানো যাদের জন্যে কষ্টকর তাদের জন্যে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার খরচ চালানো ও গ্রাম থেকে প্রায় ৪/৫ কিলোমিটার দূরের কলেজে নিয়মিত ক্লাস করার খরচ চালানো প্রায় অসম্ভব।

মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম দেখে হতাশ হয়ে পড়েছে পরিবার। মা-পিতার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে ভোর থেকেই গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রাইভেট পড়ায় দু বোন। বাড়ি ফিরে মাকে সাহায্য, পিতা ও ভাইকে সেবাযতেœর পর গভীর রাত পর্যন্ত জেগে লেখাপড়া করে তারা। এভাবেই নিজেদের সংগ্রামের কথা বলছিল আদম্য ফাতেমা ও জোহরা।
ফাতেমা ও জোহরার পিতা পক্ষাঘাতগ্রস্ত দিনমজুর জিল্লুর রহমান বলেন, বাড়ির জায়গাটুকু ছাড়া আমার কিছুই নেই। পুরনো এই ছোট্ট একটি ঘরে পরিবারের পাঁচ সদস্যের বসবাস। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলাম আমি। দিনমজুরের কাজ করতাম। প্যারালাইসিস হওয়ায় এখন আর কাজ করতে পারি না। মেয়ে দুইটা নিজের চেষ্টায় যতদূর পারছে লেখাপড়া করেছে। এখন কারো সহযোগিতা না পেলে ওদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
দুই বোনের মা মাসুদা বেগম জানান, গরিব হলেও তার মেয়ে দুটি লেখাপড়া শিখে মানুষ হতে চায়। ধারকর্য করে কলেজে ভর্তি করিয়েছিলেন। কিন্তু এখন কলেজে পড়ানোর মতো আর্থিক অবস্থা তাদের না থাকায় পড়াশোনা বন্ধের পথে।
শেখ হেলাল উদ্দীন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বটু গোপাল দাশ বলেন, ফাতেমা ও জোহরা অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী। লেখাপড়ার প্রতি তাদের খুব আগ্রহ। আমি ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু পারি সহায়তা করার চেষ্টা করি। পরিবারটির আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। সমাজের বৃত্তবানদের সহযোগিতা পেলে মেয়ে দুটি লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবে।