রাজগঞ্জে দখলদারিত্বে ক্রমশ মৃত্যুর মুখে কপোতাক্ষ

0

ওসমান গণি. রাজগঞ্জ (যশোর) ॥ যশোরের মনিরামপুর উপজেলার মশ্মিমনগর ইউনিয়নের প্রাণ কেন্দ্র দিয়ে বয়ে চলা এক সময়ের খরস্রোতা কপোতাক্ষ নদ এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। বিশাল চরজাগা কপোতাক্ষ নদের বৃহত্তর একটি অংশ ও নদের পাড় রাজগঞ্জে ভূমিদস্যুরা দখল করে মৎস্যঘের ও আবাসিক ভবন নির্মাণ করায় ঐতিহ্যবাহী এ কপোতাক্ষ নদ অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। ফলে জরুরিভাবে এ নদটি খনন না করলে কপোতাক্ষ নামের সেই নদ আর বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটি।
নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির পশ্চিমাঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান জানান, কপোতাক্ষ নদটি যুগ যুগ ধরে মনিরামপুর, ঝিকরগাছা, কেশবপুর ও কলারোয়া উপজেলাবাসীর আয়-রোজগারের অন্যতম একটি মাধ্যম ছিল। সেই সাথে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জীব-বৈচিত্রের এক মিলন মেলা ছিল। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের সেই ঐতিহ্যবাহী কপোতাক্ষ নদ আজ মরা খালে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে নদটি শুকিয়ে গরু-ছাগলের চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে বলে দাবি করেন এ নেতা।
কপোতাক্ষ নদ পাড়ের বাসিন্দা বাবুল হোসেন জানান, বাপ-দাদাদের মুখে শুনেছি খরস্রোতা কপোতাক্ষ নদে এক সময় বড় জাহাজ চলতো। ব্রিটিশরা সুদুর লন্ডন থেকে বড় বড় জাহাজে করে নানা ধরনের পণ্যসামগ্রী নিয়ে বঙ্গোপসাগর হয়ে কপোতাক্ষ নদ দিয়ে পারখাজুরা বাজারে আসত। এছাড়া এই নদে বিভিন্ন সময়ে পাওয়া যেত হরেকরকমের দেশি প্রজাতির মাছ। সেই মাছ শিকার করে কপোতাক্ষের দুই পাড়ের মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতো। এক সময় এ খরস্রোতো নদকে ঘিরে গড়ে ওঠে অসংখ্য জেলে পল্লী। এখন এসব তাদের কাছে স্বপ্ন বলে মনে হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, মনিরামপুর উপজেলার বৃহত্তর কপোতাক্ষ নদের তীর ঘেঁষা সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা সৌন্দর্যের সেই ঐতিহ্য এখন আর চোখে পড়ে না। নদের সেই কুল কুল ধ্বনি আর কপোতাক্ষ নদের চারপাশ ঘেরা মাঠভরা সবুজ শস্যের ভঙ্গিমা, গাছে গাছে পাখির নাচন এবং ছায়া ঘেরা নিবিড় পরিবেশ এখন স্মৃতির পাতায় স্থান করে নিয়েছে। বিস্তীর্ণ কপোতাক্ষের চারপাশে রয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। মশ্মিমনগর ইউনিয়নের এক একটি গ্রাম যেন সৌন্দর্যের স্বর্গপুরী। কিন্তুু সেসব আজ অবৈধ দখলদারদের অত্যাচারে বর্তমান প্রজন্মসহ সাধারণ মানুষ ভুলতে বসেছে বলে মনে করেন এ জনপ্রতিনিধি।
মশ্মিমনগর ইউপির বার-বার নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আইনজীবী সমিতির একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম.এ গফুর জানান, পড়ন্ত বিকেলে এলাকার দুরন্ত ছেলে-মেয়েরা এক সময়ের খরস্রোতা কপোতাক্ষ নদের বুকে ক্রিকেট, ফুটবলসহ নানান খেলায় মেতে উঠেছে। কেউ কেউ শুকিয়ে যাওয়া কপোতাক্ষ নদের বুক থেকে তুলে আনছেন হরেকরকমের শাকসবজি।
যুগযুগ ধরে পলি জমার কারণে কপোতাক্ষ নদটি বছরের বেশিরভাগ সময় শুকিয়ে যায়। আর এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে স্থানীয় এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি নদটি দখলে নিতে মেতে ওঠেন। এসব অবৈধ দখলদার নদের বুকে বসতবাড়ি, পুকুর, মৎস্যঘেরসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করছেন। দখলদারদের উচ্ছেদ করে নদটি খননের উদ্যোগ নিলে অস্তিত্ব টিকে থাকবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।