যশোরে তীব্র গরমের মাঝে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ট মানুষ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তীব্র গরমের মাঝে অনিয়ন্ত্রিত লোডশেডিংয়ে অতিষ্ট হয়ে উঠছে যশোরের জনজীবন। বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বলা হচ্ছে এলাকা ভিত্তিক লোডশেডিং দেয়া হলেও তা এক ঘণ্টার বেশি সময় না। তবে মাঠের চিত্রে তাদের দাবির সাথে মোটেও মিল নেই।
শহর এলাকাতেই কোনো কোনো জায়গায় এক থেকে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। আর গ্রামের অবস্থাতো রীতিমত ভীতিকর। একবার বিদ্যুৎ গেলে তা কখন ফিরে আসবে সেই নিশ্চয়তা খোদ বিদ্যুৎ বিভাগই দিতে পারেনা। ফলে প্রচন্ড গরমে বিদ্যুৎবিহীন নগরবাসীকে পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি।
জেলার মোল্যাপাড়া এলাকার বাসিন্দা রাকিব শাহীন বলেন, এর আগে অনেক লোডশেডিং দেখেছি। কিন্তু এবার একেবারের চিত্র ভিন্ন। আগে বিদ্যুৎ চলে গেলে খুব দ্রুত সময়ে আবার ফিরে আসতো। কিন্তু এখন একবার গেলে দুই থেকে তিন ঘন্টা পরও ফিরে আসছেনা। তিনি বলেন, শুক্রবার ( ২ জুন) দুপুর ১ টার সময় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর তা ফিরে আসে বিকেল ৩ টার পর। এ সময়ে তীব্র গরমে প্রচন্ড দুর্ভোগ পোহাতে হয় সবাইকে।
যশোরের উপশহর এলাকার বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম বলেন, তার এলাকায় দিনে রাতে লোডশেডিং হচ্ছে চার থেকে পাঁচবার। এর মধ্যে একবার দেড় ঘণ্টা ও দুইবার হয়েছে এক ঘণ্টা করে। বাকি দুইবার হয়েছে ৩০ মিনিট ও ১৫ মিনিট করে। সব থেকে সমস্যা হচ্ছে এই গরমে রাত ১২ টা থেকে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর। প্রচন্ড গরমে মানুষ মধ্য রাতেই ঘর থেকে বের হয়ে বাসার ছাদে বা রাস্তায় নেমে আসেন।
একই এলাকার সাফিয়া বেগম নামে আরেক মহিলা বলেন, রাতে যখন বিদ্যুৎ চলে যায় তখন চার বছর ও এক বছর বয়সী দু’টি সন্তান নিয়ে হাতপাখা দিয়ে কোনোরকম সময় পার করেন। এরপর বিদ্যুৎ এসে আবার যখন চলে যায় তখন কষ্টের সীমা থাকেনা।
শহরের খড়কী বামনপাড়া এলাকার হাসিবুর রহমান বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। সর্বত্র যখন তাপদাহে মানুষ হাঁফিয়ে উঠছে ঠিক তখনই এই লোডশেডিং। এতে স্বাভাবিক কর্মকান্ড ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি ব্যবসারও ক্ষতি হচ্ছে। তিনি বলেন, আমার শহরের হাজী মুহাম্মদ মহসিন রোড এলাকায় একটি টেইলার্সের দোকান রয়েছে। দিনে-রাতে একাধিকবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারণে দোকানের কর্মচারীরা কাজ ফেলে বসে থাকেন। এতে ব্যবসা শিকেয় উঠছে বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে শহরে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি কিছুটা সহনীয় হলেও গ্রামের পরিস্থিতি একেবারেই ভয়াবহ। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ একেবারেই ভেঙে পড়েছে। দিনে-রাতে দুই থেকে তিন ঘণ্টাও বিদ্যুৎ মিলছেনা। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষ।
জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার হাবুল্যা এলাকার এখলাছ হোসেন জানান, গ্রাম এলাকার পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। সেখানে দিনে রাতে দুই থেকে তিন ঘণ্টাও বিদ্যুৎ মিলছেনা। সকালে বিদ্যুৎ চলে গেলে তা বিকেলের আগে ফিরছেনা। আবার সহসা চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে মানুষের যেমন দুর্ভোগ হচ্ছে তেমন গরমে বয়স্ক ও শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
এ বিষয়ে ওজোপাডিকো বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মাদ শহিদুল ইসলাম বলেন, তাদের অধীনে প্রতিদিন ৫৮ থেকে ৫৯ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে সরবরাহ হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ মেগাওয়াট। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি স্বাভাবিক সরবরাহ বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, দেশের অন্যান্য স্থানে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের অপেক্ষায় যশোর শহর ও তার আশপাশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অনেকটা ভালো। তবে বিদ্যুতের সংকট এখন জাতীয় পর্যায়ে রয়েছে বলে তিনি জানান।