রমজানের একমাস আগে অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার

0

আকরামুজ্জামান॥ রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না বলে সরকার আশ্বাস দিলেও রমজান শুরুর একমাস আগেই অস্থির যশোরের বাজার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরণের ব্রয়লার মুরগী ও ডিমের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। দাম বেড়েছে ছোলা, লবন, চিনি, পোলাও চাল, মসলা, মাছ, সবজিসহ আরও কিছু অতি প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের।
মুরগীর ও ডিমের খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর বড় প্রভাব পড়েছে মুরগী ও ডিমের বাজারে। এদিকে রমজান আসার এক মাস আগেই বাজার দর নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। এজন্য তারা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটই দায়ি করেছেন।
রবিবার সকালে যশোরের বড় বাজারে বাজার করতে এসেছিলেন সদ্য বিদেশ ফেরত আজগর আলী। দীর্ঘ ১২ বছর পর জাপান থেকে তিনি দেশে এসে বাজারে এসে রীতিমত বিস্মিত। বাজারে মাছ-মাংস, শাক, সবজির মাত্রাতিরিক্ত দাম দেখে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উন্নত দেশগুলোর বাজারেও এমন বেশি দামে তিনি বাজার করেননি। জাপানেও এর চেয়ে কম দামে অনেক জিনিস পাওয়া যায় বলে জানান। শুধু বিদেশ ফেরত আজগর আলী নন, বাজারে আসা অধিকাংশ ক্রেতাই দাম নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
যশোর বড়বাজারসহ অন্যান্য বাজার ঘুরে দেখা গেছে বাজারে প্রতি জিনিসের দামই আকাশ ছোঁয়া। তবে এরই মধ্যে বড় ব্যবধানে দাম বেড়েছে সব ধরনের ব্রয়লার মুরগী ও ডিমের। প্রতি কেজি মুরগীতে বেড়েছে ৭০ থেকে ১২০ টাকা। আর ডিমের হালিতে বেড়েছে ১২ থেকে ১৪ টাকা। মাত্র দুই সপ্তাহে আগে প্রতিকেজি পোল্ট্রি ১৫০ টাকা বিক্রি হলেও গতকাল তা বিক্রি হয় ২৩০ টাকা। ২৫০ টাকার সোনালী মুরগী ৩২০ টাকা এবং ২৫০ টাকার লেয়ার মুরগী ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই অবস্থা ডিমের বাজারে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৯ টাকা ৫০ পয়সার প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা থেকে সাড়ে বারো টাকা।
ব্রয়লার মুরগীর খুচরা ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম ও লিটন হোসেন বলেন, মুরগীর দাম বেড়ে যাওয়ায় তারাও স্বস্তিতে নেই। দাম বাড়ায় বেচাকেনা অনেক কমে গেছে। তারা বলেন, আগে যারা দুইটা থেকে তিনটা মুরগী এক সাথে কিনে নিয়ে যেত তারা এখন একটা-দুইটা কিনে নিয়ে যাচ্ছে। মানুষের সংসার খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে কেনার তালিকা কমিয়ে দিচ্ছে তারা।
একই কথা বলেন, পাশেই জয় স্টোরের মালিক জয় সাহা। তিনি বলেন, ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারাও হিসেব করে কেনাকাটা করছেন। আগে যারা দুই থেকে তিন হালি ডিম কিনতেন তারা এখন এক হালি ডিম কিনছেন। এ পরিস্থিতিতে কেনাকাটও কম হচ্ছে।
হঠাৎ কেনো মুরগী ও ডিমের দাম বাড়লো এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যবসায়ীরা বলেন, ব্রয়লার মুরগীর খাদ্যের দাম বৃদ্ধিসহ আনুষাঙ্গিক খরচের কারণে উৎপাদন খরচ বাড়ছে বলে খামারীরা তাদেরকে বলেছেন। এ কারণে মুরগী ডিমের দাম বেড়েছে। সামনে আরও বাড়তে পারে বলে তারা আভাস দেন।
ব্রয়লার মুরগীর ও ডিমের পাশাপাশি অন্যসব পণ্যের দামও হু-হু করে বাড়ছে। কাচা মরিচের দাম খুচরা পর্যায়ে কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। ১৪০ টাকার প্যাকেটজাত পোলাও চালের কেজি বেড়ে দাড়িয়েছে ১৬০ টাকা। ৩৫ টাকা কেজি দরের লবন বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা। প্যাকেট জাত সেমাইয়েও বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। রমজানের অন্যতম নিত্যপণ্য ছোলার দাম ৭০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। একই পরিস্থিতি সবজি ও মাছের বাজারে। সব ধরনের মাছের কেজিতে দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা।
ক্রেতারা বলছেন, বাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহের ঘাটতি না থাকা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত দাম বেড়েই চলছে। এ পরিস্থিতির জন্য ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকেই দায়ি করেন তারা।
সাজেদুর রহমান নামে একজন ক্রেতা বলেন, মাছ. মাংস, ডিম থেকে শুরু করে এমন কোনো পণ্য নেই যে দাম বাড়ছে না। প্রতিবছর রমজান আসার একমাস আগেই এভাবে দাম বাড়ানো রীতির ধারবাহিকতায় এবারো বাড়ানো হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
একই কথা বলেন, রফিকুল ইসলাম নামে আরেকজন ক্রেতা। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, বাজারের এ অরাজকতা যেনো দেখার কেউ নেই। সংসার চালাতে বাজার খরচেই সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। রমজানের আগে বাজার যদি এমন হয় তাহলে রোজা শুরু হলে কী হবে তা অনুমান করা যাচ্ছে। মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সরকারের উচিৎ এখনই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা।
এ বিষয়ে জেলা সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, রমজানকে সামনে রেখে বাজার যাতে অস্থির হয়ে না ওঠে সে বিষয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। বাজারে মুরগী ও ডিমসহ কিছু পণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে খামার পর্যায়ে এ বিষয়ে খোঁজ নেয়া হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, রমজানে কোনো সিন্ডিকেট যাতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি।