চুড়ামনকাটিতে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় যবিপ্রবি ছাত্রীসহ নিহত ৩ আহত ২

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ ভ্যানের চাকা ভেঙে রাস্তার ওপর পড়ে পিছনে থাকা ট্রাকের চাপায় নিহত হয়েছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) এক ছাত্রীসহ তিন জন। এসময় আহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ে অপর শিক্ষার্থী ও নিহত ছাত্রীর স্বামীসহ দুই জন। রোববার বিকালে চুড়ামনকাটিতে চৌগাছা সড়কে রেলক্রসিংয়ের কাছে ইটভাটার সামনে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনার প্রতিবাদে যশোর-চৌগাছা সড়কে গতকাল রাতে বিক্ষোভ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। নিহতরা হচ্ছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম ও মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারজানা ইয়াসমিন সুমি (২৩), যশোর সদরের কমলাপুর গ্রামের জোহরা খাতুন (৫০) ও ভ্যানচালক চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের সরদার বাগডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে মাসুম বিল্লাল (৩৫)।
আহত দুই জন হচ্ছেন নিহত সুমির স্বামী যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিকাল এন্ড স্পোর্টস এডুকেশনের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোতাসিম বিল্লাহ ও নিহত জোহরা খাতুনের স্বামী আমজাদ হোসেন (৫৫)। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের সরদার বাগডাঙ্গা গ্রামের অটো ভ্যান চালক মাসুম বিল্লাল রোববার বিকাল চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে ৪ জন যাত্রী নিয়ে চুড়ামনকাটি বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হন। চারটা দশ মিনিটের দিকে ভ্যানটি চুড়ামনকাটি বাজারের অদূরে শহিদুলের ইট ভাটার সামনে পৌঁছালে ভ্যানের পিছনের এক পাশের চাকা ভেঙে যায়। এসময় ভ্যানটি চার আরোহীসহ রাস্তার ওপর পড়ে গেলে পিছনে থাকা বিএডিসির বীজ বোঝাই একটি ট্রাক (যশোর ট-১৩৯৪) আরোহীদের পিষ্ট করে। এ সময় ভ্যানে থাকা যাত্রী যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফারজানা ইয়াসমিন সুমি, জোহরা বেগম, ও ভ্যান চালক মাসুম বিল্লাল ঘটনাস্থলেই মারা যান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড.সাইবুর রহমান মোল্লা বলেন, নিহত ফারজানা সুমি ও মুতাচ্ছির বিল্লাহ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ফারজানা সুমি মারা গেছে এবং মুতাচ্ছির বিল্লাহ মারাত্মক আহত হয়েছে।খবর পেয়ে আমিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে হাজির হই। যশোর কোতয়ালি থানার ওসি তাজুল ইসলাম জানান, বিকাল সোয়া ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বিএডিসির একটি ট্রাকের ( যশোর-ট- ১৩৯৪) সাথে ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে সুমি ও ভ্যানচালক মাসুমের মৃত্যু হয়। আহতদের উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পর মৃত্যু হয় জোহরা খাতুনের। নিহতদের মরদেহ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। তিনি আরও জানান, চালক ট্রাক ফেলে পালিয়ে গেছেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে নিহত ও আহত শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিতে আসেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন। এসময় তিনি বলেন, প্রায় এই সড়কে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে। চালকদের বেপরোয়া চলাচল ও গতি এর প্রধান কারণ। তিনি এটি রোধে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। একই সাথে নিহত শিক্ষার্থীদের আত্মার শান্তি ও আহত শিক্ষার্থীর দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন। যবিপ্রবি সংবাদদাতা জানান, এঘটনার পর সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় দফা ৭ দফা দাবি পেশ করা হয়।  দাবিগুলো হলো- দুর্ঘটনার সুষ্ঠু বিচার, আহতদের সুচিকিৎসা ও নিহতদের এককোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান, চুড়ামনকাঠি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সড়ক নিরাপদ রাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া, আমবটতলাবাজার থেকে বেলতলা পর্যন্ত ফুটপাত নির্মাণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে কমপক্ষে ৪ টি স্পিড ব্রেকার দেয়া, গতিসীমা-নির্ধারক সাইনবোর্ড দেয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়ক চার লেইনে উত্তীর্ণকরন। শিক্ষার্থীদের ৭ দফা দাবির মেনে নিয়ে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আনোয়ার হোসেন। উপাচার্যের আশ্বাসে আন্দোলন সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। তবে দাবী আদায় না হলে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তাঁরা ।