সুন্দরবনে ফের দস্যু আতংক, অপহৃত জেলেদের ওপর চরম নির্যাতন

0

 

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দস্যুমুক্ত সুন্দরবনের নয়া আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ‘নয়ন বাহিনী’। এ বাহিনীর হাতে ছয় দিন আগে অপহৃত হয় ১৫ জেলে। এর মধ্যে চার জন পাঁচ দিন পর ২০ ডিসেম্বর দিনগত রাতে মুক্তিপণ দিয়ে জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হয়। আর পুলিশের তৎপরতার কারণে ২১ ডিসেম্বর ভোরে বাকী ১১ জন বিনা মুক্তিপণেই মুক্ত হয়। সুন্দরবনে বনদস্যু ‘নয়ন বাহিনীর’ কাছে জিম্মি দশা ছিল এ ১৫ জেলে। জানা গেছে, শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা গ্রামের সালাম হাওলাদার (৬৫), ইমাম খান (২৫), ছলেমান হাওলাদার (৩০) ও ইউসুফ হাওলাদার (৩৫) ১০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে বাড়ি ফিরে আসে। পুলিশ জানায়, উদ্ধার হওয়া জেলেদের মধ্যে বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমাকাশিমপুর গুচ্ছগ্রামের সোহেল মল্লিক (২৮), মোংলা উপজেলার বাজিকর খন্ডের আসাদুল শেখ (৩৫), রামপাল উপজেলার বেতকাটা গ্রামের হানিফ হাওলাদারকে (৪৫) শরণখোলা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা তিন জনই দস্যুদের নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাদের শরণখোলা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।  এছাড়া বাকি আট জন জেলেকে মোংলা থানায় হস্তান্তর করা হয়। এরা হলেন, খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বুজবুনিয়া গ্রামের আকরাম শেখ (৪২), রফিকুল খান (৩৫), মোংলা উপজেলার দক্ষিণ হলদিবুনিয়া গ্রামের মিলন শেখ (২৩), আনিস শেখ (২২), বৈদ্যমারী গ্রামের শুকুর আলী ব্যাপারী (৩০), মনির ব্যপারী (৩৫), রামপাল উপজেলার ঝনঝনিয়া গ্রামের বকতিয়ার ব্যাপারী (৩৫) ও রূপসা উপজেলার আলী শিকদার (৪৮)। ফিরে আসা জেলেরা জানান, তাদের মুক্তিপণের টাকার জন্য মারধর করতো। কোনও দিন একবেলা খাবার দিতো। আবার কোনও দিন মোটেও খাবার দিতো না। তাদের মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে সুন্দরবনের হরিণটানা এলাকার একটিখালে ছেড়ে দেয় দস্যুরা। সেখান থেকে তারা সারারাত নৌকা বেয়ে বুধবার ভোরে লোকালয়ে এসে পৌঁছান।  জেলেরা আরও জানান, সদ্য আবির্ভূত বনদস্যু নয়ন বাহিনীতে সাত জন সদস্য রয়েছে। তাদের কাছে দুইটি পাইপগান ও বেশকিছু রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র রয়েছে। দস্যুদের আস্তানায় তিন লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবীতে এখনো একটি ফিশিং ট্রলারসহ কয়েকজন জেলে জিম্মি রয়েছে বলে তারা জানান। দস্যুদের কবল থেকে জেলে উদ্ধারের ঘটনায় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শরণখোলা থানায় প্রেস ব্রিফিং করেছেন বাগেরহটের পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক। পুলিশ সুপার বলেন, সুন্দরবনে জেলে অপহরণের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরণখোলা, মোংলা ও মোরেলগঞ্জ থানা পুলিশের মাধ্যমে বিশেষ যৌথ অভিযান শুরু করা হয়। আমাদের তৎপরতায় দস্যুরা জেলেদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। পুলিশ সুপার আরিফুল হক আরও বলেন, ‘উদ্ধার হওয়া জেলেদের মাধ্যমে দস্যুদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আশা করছি অচিরেই দস্যুদের গ্রেফতারে সক্ষম হবো। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত রাখতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’উল্লেখ্য, গত ১৩, ১৪ ও ১৫ ডিসেম্বর পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের বেড়িরখাল, হরমলখাল ও হরিণটানা এলাকা থেকে সশস্ত্র দস্যু নয়ন বাহিনী মুক্তিপণের দাবিতে এ সব জেলেকে অপহরণ করে।