হাতকড়া-ডান্ডাবেড়ি নিয়ে মায়ের জানাজায় বিএনপি নেতা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ হাতকড়া আর ডান্ডাবেড়ি নিয়ে মায়ের জানাজা পড়েছেন গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার স্থানীয় এক বিএনপি নেতা। এ বিষয়টি অমানবিক ছিল বলে মন্তব্য করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, এটা না হলে ভালো হতো। মঙ্গলবার গাজীপুর জেলা কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলী আজম পাবরিয়াচালা গ্রামের বাড়িতে মায়ের জানাজায় যান।
তার মা সাহেরা বেগম (৬৭) গত রবিবার বিকালে মারা যান। উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী সাইয়েদুল আলম জানান, শেষবার মাকে দেখতে ও জানাজায় থাকতে আইনজীবীর মাধ্যমে গত সোমবার বিকালে জেলা প্রশাসক বরাবর প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেন আলী আজম। কিন্তু ওইদিন দাপ্তরিক কাজ শেষ না হওয়ায় মঙ্গলবার তিন ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি মেলে তার। আলী আজমের ভাই আতাউর রহমান জানান, প্যারোলে মুক্তি পেয়ে সকাল ১০টার দিকে বাড়ির পাশে জানাজাস্থলে উপস্থিত হন আলী আজম। বেলা ১১টায় জানাজা হয়। দাফন শেষে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।
“পুরোটা সময় হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় ছিলেন আলী আজম।”
এ সময় উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী সাইয়েদুল আলম, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। আলী আজমের ভাই আতাউর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করলে তার ভাইকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়। জানাজা পড়ানোর সময় তার হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু খোলা হয়নি। জানাজার সময়ও আলী আজমের হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন জানাজায় উপস্থিত লোকজন। এ অবস্থায় আলী আজমের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদ বলেন, “মায়ের মৃত্যুর খবরে আলী আজমকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু দুঃখের বিষয় জানাজার সময়ও তার হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে দেওয়া হয়নি।”
এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা কারাগারের সুপার মোহাম্মদ বজলুর রশিদ বলেন, আলী আজমকে নয়জন পুলিশ সদস্যসহ তার বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এবং জেল আইন অনুযায়ী তাকে পাঠানো হয়।
কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় গত ২৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামালার অভিযোগে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় ২ ডিসেম্বর গ্রেফতার করা হয় আলী আজমকে। এ মামলায় আলী আজমসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় আরও ১৫০ জনকে। জানাজার সময়ও আলী আজমের হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে না দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার কালিয়াকৈর উপজেলা শাখার সভাপতি শাহজাহান মিয়া বলেন, “মানবিক দৃষ্টিতে বিষয়টি খুবই দৃষ্টিকটু। তিনি কোনো দাগি আসামি নন বলে শুনেছি। তাই তাকে শুধু হাতকড়া পরিয়ে জানাজায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিতে পারতেন।” এদিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বিএনপি নেতার ডান্ডাবেড়িসহ মায়ের জানাজায় অংশ নেওয়া অমানবিক ছিল বলে মন্তব্য করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, এটা না হলে ভালো হতো।
গতকাল বুধবার দুপুর ১টার দিকে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে একথা বলেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকরা তথ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, জানাজার সময় হাতকড়া-ডান্ডাবেড়ি থাকার ঘটনায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের বক্তব্য, সরকার এতটা ‘অমানবিক’ না হলেও পারতো।
জবাবে ড. হাছান বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে চেক করেছি। আমি গাজীপুরের পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। ডান্ডাবেড়ি বা হাতকড়া পরানো না পরানো হচ্ছে জেল প্রশাসনের কাজ। সেটি আবার পুলিশের অধীনে নয়। একজন আইজি প্রিজন আছেন সেই প্রশাসনের অধীনে। আমাদের পুলিশের যে মহাপরিদর্শক, তাদের অধীনেও নয়। ডান্ডাবেড়ি কিংবা হাতকড়া জেল প্রশাসনই পরায়। আমি বিষয়টি চেক করেছি, তাকে প্যারোলে কয়েক ঘণ্টার জন্য মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে কয়েকজন জঙ্গি পালিয়ে গেছে। তাদের বিষয়ে যেভাবে সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার ছিল সেটি করা হয়নি বিধায় তদন্তে উঠে এসেছে এবং তারা পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এজন্য তারা (গাজীপুরে) অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করেছেন। আমি এসপি পর্যায়েও কথা বলেছি, তারা বিষয়টি জানতেন না। যারা বিএনপি নেতাকে নিয়ে যান, শুধু তারাই জানতেন; অন্যরা কেউ জানতেন না। তবে আমি মনে করি জানাজার সময় ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়া খুলে দিলে ভালো হতো।