চৌগাছায় প্রশ্নবিদ্ধ কপোতাক্ষ খনন!

0

 

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কপোতাক্ষ নদ খনন নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। শুরুতেই কপোতাক্ষ খননের নামে খালে পরিণত করা হচ্ছে এ ধরনের অভিযোগ ছিল মানুষের মুখে মুখে। যেনতেনভাবে খনন করে নদের মাটি পাড়ে জড়ো করে রেখেছে কর্তৃপক্ষ আর এই মাটির ওপর অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে নদের জমি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠছে একটি মহল। যে উদ্দেশ্যে কাজটি শুরু করেছিল তা যেন ভেস্তে না যায় সেদিকে সুদৃষ্টি দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন উপজেলার সাধারণ মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে কপোতাক্ষ নদ খননের কাজ শুরু হয়। দুই বছরে নদের ৭৯ কিলোমিটার খনন কাজ শেষ হওয়ার কথা। ওই অর্থ বছরের শেষ সময়ে খনন কাজের জন্য অর্থ ছাড় হলে জুনের শেষ সপ্তাহে পৌরসভার হুদাপাড়া থেকে খনন শুরু করেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। এরপর বৃষ্টির কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যায়, অর্থ বছরও শেষ হয়। পরের অর্থ বছর (২০২১-২০২২) অর্থ বছরে বৃহৎ এই কাজ শুরু করেন সংশ্লিষ্টরা। চৌগাছার হাকিমপুরের তাহেরপুর হতে খনন শুরু হয়ে যশোরের মণিরামপুর উপজেলায় গিয়ে শেষ হওয়ার কথা। গেল অর্থ বছরে একাধিক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নদের বিভিন্ন জায়গা থেকে শুরু করে খনন কাজ। কোন কোন ঠিকাদার নদের এক প্রান্ত খনন করেছে আবার অনেক ঠিকাদার দুই প্রান্ত যেনযেতভাবে খনন করেছেন বলে জানান নদ পাড়ের বাসিন্দারা। অভিযোগ উঠে নদ খনন তো হচ্ছেই না, বরং কপোতাক্ষকে খালে পরিণত করা হচ্ছে। এছাড়া নদ খননের সময় অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ, কিংবা খননকৃত মাটি নদ পাড়ে সুন্দরভাবে জমা রাখা কিছ্ইু করা হয়নি বলে অভিযোগ। এরই মধ্যে চলে এসেছে বর্ষা মৌসুম, তাই কাজ বন্ধ করা হয়েছে। যত্রতত্রভাবে নদ খননের কারণে নদের পাড়ে জমা রাখা মাটি অল্প বৃষ্টিতেই পুনরায় নদে এসে পড়তে শুরু করেছে। আবার খননকৃত মাটির ঢিবিতে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি ঘর নির্মাণ করে নদের জমি দখলে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।

উপজেলার নারায়নপুর, হাজরাখান, চৌগাছা পৌর এলাকা, দিঘলসিংহ, মাশিলাসহ নদ পাড়ের বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নদে যথেষ্ট পানি আছে। কিন্তু যত্রতত্র খননের কারণে স্রোত নেই। এতে করে নদের পানি কচুড়িপনায় ভরে গেছে। আবার বহু স্থানে খননকৃত মাটি পাড়ে জমা রাখা স্থানে টিন বাঁশ খুটি দিয়ে ঘর বানিয়ে চলছে নদের জমি দখলের চেষ্টা। এসময় কথা হয় নদ পাড়ের জেলে পল্লীর বাসিন্দা নন্দ লাল, সুবোল ঘোষ, অমল বিশ্বাস, স্বপন কুমারের সাথে।
তারা বলেন, সরকার নদ খননের উদ্যোগ গ্রহন করলে আশায় বুক বেঁধেছিলাম। কেননা, নদ খনন হলে আবারও নদে থাকবে পানি, জন্ম নেবে দেশি প্রজাতির হরেক রকমের মাছ। এই মাছ শিকার করে চলবে সংসার। এক বছর ধরে নদ খনন হচ্ছে। কিন্তু নদ খনন নাকি খাল তেরি করছে বুঝা মুশকিল। নদের কোথাও পরিপূর্ণভাবে খনন করা হয়নি।

সূত্র জানায়, কপোতাক্ষ খননের জন্য ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে প্রায় ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। চল্লিশটির মত ঠিকাদার বৃহৎ এই কাজ শেষ করবেন। নদ খননের সময় দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে এবং খননের সময় নদের আড় হবে ৩০ থেকে ৩৫ মিটার, আর নির্ধারিত পরিমাপে হবে গভিরতা। খনন কাজ আদৌ ঠিকভাবে চলছে কিনা এই সন্দেহ সকলের মাঝে। তাই পুনরায় নদ খনন শুরু হলে বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন নদ পাড়ের বাসিন্দারা।
এ বিষয়ে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্ষার কারণে আপাতত খননকাজ বন্ধ আছে। সব কিছুই নিয়ম অনুযায়ী চলছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালে আর খনন কাজ চলবে ২০২৩ সাল পর্যন্ত। পুনরায় খনন শুরু হলে অবৈধ দখলের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে বলে তিনি জানান।