মজনুর রহমান,মনিরামপুর(যশোর)॥ যশোরের মণিরামপুরে তালাক দেয়া স্ত্রী হীরা বেগম(৩০)কে আবার বিয়ের লোভ দেখিয়ে ডেকে এনে হত্যা করেছে স্বামী ইউপি সদস্য ইসলাম গাজী। বুধবার রাতে পুলিশ ঘটনাস্থল পৌরশহরের কসাইখানার পাশে কলাক্ষেত থেকে হীরা বেগমের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে। ভোররাতে অভিযান চালিয়ে র‌্যাব সদস্যরা অভিযুক্ত সাবেক স্বামী ইসলাম গাজীকে যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকা থেকে আটক করেন।
এ ঘটনায় নিহতের পিতা আকতার আলী মোল্যা  বৃহস্পতিবার বিকেলে থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।
এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, নড়াইল সদর উপজেলার বাগডাঙ্গা গ্রামের আকতার আলী মোল্যার মেয়ে হীরা বেগমের সাথে প্রথমে বিয়ে হয় মণিরামপুর উপজেলার মশ্মিমনগর ইউনিয়নের চাকলা গ্রামের সুমন হোসেন নামে এক যুবকের। এ ঘরে হীরা বেগমের দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান, গত বছর হীরা বেগম স্বামী সন্তান ফেলে বিয়ে করেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইসলাম আলী গাজীর সাথে। বিয়ের পরে ইসলাম হীরাকে নিয়ে মণিরামপুর পৌরশহরের দোলখোলা এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। কিন্ত পারিবারি কলহে গত সেপ্টেম্বর মাসে তাদের সংসার ভেঙে যায়। ইসলাম গাজী হীরাকে তালাক দেন। এরপর হীরা নড়াইলে পিতার বাড়িতে চলে যান।
হীরা বেগমের পিতা আকতার মোল্যা জানান, ইসলাম গাজী পুনরায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নড়াইল থেকে গত সোমবার (৩ অক্টোবর) হীরা বেগমসহ প্রথমপক্ষের নয় বছর বয়সী ছেলে আবু তালেবকে নিয়ে মণিরামপুরের বাসায় আসেন।
অভিযোগ রয়েছে, সোমবার রাতেই হীরা এবং তার কথিত স্বামী ইসলাম গাজী ছেলে আবুল তালেবকে অতিরিক্ত ঘুমের ট্যাবলেট সেবন করিয়ে হত্যা চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। বিষয়টি জানাজানি হলে ইসলাম এবং হীরা ওই রাতেই তালেবকে মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে পালিয়ে যান। আবু তালেব বর্তমানে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মণিরামপুর থানার ওসি(তদন্ত) গাজী মাহাবুবুর রহমান জানান, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বুধবার রাত আটটার দিকে ইসলাম গাজী হীরাকে মোটরসাইকেলে নিয়ে নড়াইলের উদ্দেশ্যে বের হন। পথিমধ্যে পৌরশহরেরে জয়নগর কাসইখানার পাশে কলাক্ষেতের মধ্যে হীরাকে ধারালো অন্ত্র দিয়ে মুখ, বুকসহ বিভিন্নস্থানে উপুর্যপরি কুপিয়ে হত্যার পর লাশ ফেলে পালিয়ে যান। খবর পেয়ে ওই রাতেই সহকারী পুলিশ সুপার আশেক সুজা মামুন, র‌্যাব-৬ এর যশোর ক্যাম্পের সদস্য এবং পিবিআই সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। অবশ্য পুলিশ লাশের পাশ থেকে এ সময় একজোড়া জুতা ও খাবারভর্তি একটি টিফিনবক্স উদ্ধার করে। ওই রাতেই ঘাতককে আটকের জন্য র‌্যাব ও গোয়েন্দাসংস্থার সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালান। রাত চারটার দিকে যশোর শহরেরর বেজপাড়া এলাকা থেকে র‌্যাব সদস্যরা ইসলাম গাজীকে আটক করেন।
র‌্যাব-৬ এর যশোর ক্যাম্পের লে.কমান্ডার নাজিউর রহমান জানান, আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতক ইউপি সদস্য ইসলাম গাজী হীরা বেগমকে হত্যার দায় স্বীকার করে জানান,পারিবারিক কলহের দরুন তিনি তাকে হত্যা করেন। এ ঘটনায় নিহতের পিতা আকতার আলী মোল্যা বৃহস্পতিবার বিকেলে থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।