এলপিজির দাম কমে শুধু ঘোষণায়!

0

 

আকরামুজ্জামান ॥ বেসরকারি তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৩৫ টাকা কমিয়ে ১ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), যা এতদিন ১ হাজার ২৩৫ টাকা ছিল। গত রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে নতুন এই দাম কার্যকর করার ঘোষণা দেয় বিইআরসি। তবে দাম কমলেও যশোরের খুচরো ও পাইকারি বাজারে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে এলপিজি গ্যাস। ফলে দাম কমার সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ভোক্তারা।
পরিবেশকরা বলছেন, এলপিজি গ্যাসের দাম কমানো হলেও তাদেরকে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে ডিলারের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হচ্ছে। যে কারণে তাদেরকে বেশি দামে গ্যাস বিক্রি করতে বাধ্য হতে হচ্ছে। যতক্ষণ না কোম্পানি থেকে এ বিষয়ে লিখিত সিদ্ধান্ত না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা পূর্বের দামেই গ্যাস বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন।
গতকাল সোমবার দুপুরে যশোরের বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, সরকারিভাবে গ্যাসের দাম কমিয়ে তা বাস্তবায়নের বিষয়ে সোমবার সন্ধ্যা থেকে কার্যকরের প্রজ্ঞাপন দেয়া হলেও এখানে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোম্পানি থেকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না আসলে তারা আগের দামেই গ্যাস বিক্রি করে যাবেন।
কথা হয় শহরের বকুলতলার কাদের এন্টারপ্রাইজের বিক্রয় প্রতিনিধি সুমনের সাথে। তিনি বলেন, সরকার প্রতি ১২ কেজি এলপিজি গ্যাস ১২০০ টাকা বিক্রির নির্দেশনা দিলেও আমাদেরকে ডিলারের কাছ থেকে প্রতি সিলিন্ডার প্রকার ভেদে ৭০ থেকে ৮০টাকা বেশি দরে গ্যাস কিনতে হচ্ছে। ফলে নতুন দামে গ্যাস বিক্রি করলে তাদেরকে পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় থাকবেনা। যে কারণে বাড়তি দামেই তাদেরকে গ্যাস বিক্রি করতে বাধ্য হতে হচ্ছে।
পাশেই কথা হয় মামুন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাথে। তিনি বলেন, এলপিজি গ্যাস নিয়ে আমরা চরম সংকটে রয়েছি। এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
তিনি বলেন, সোমবার গ্যাসের ১২ কেজি সিলিন্ডারে ৩৫ টাকা কমিয়ে ১২০০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়ার পরও আজ (৩ অক্টোবর) ডিলার থেকে বেশি দামে গ্যাস কিনতে হয়েছে। এরমধ্যে ১২ কেজির যমুনা কিনতে হয়েছে ১২৪৫ টাকা, বেক্সিমকো ১২২০ ও ওমেরা ১২৭০ টাকা করে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্যাস বিক্রি করতে গিয়ে আমাদের প্রতিদিনই গ্রাহকদের সাথে ভুল বোঝাবুঝি চলছে। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ৬০-৭০ টাকা বেশি দামে গ্যাস কিনেও এর সাথে পরিবহন ও শ্রমিক খরচ বেড়ে আরও ৩০-৪০ যোগ হচ্ছে। একটি সিলিন্ডার চারতলা,পাঁচতলা বিল্ডিংয়ে তুলতে গেলে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে। এতে আমাদের বেশি দামে গ্যাস বিক্রি ছাড়া কোনো উপায় থাকছে না।
এ বিষয়ে শহরের পালবাড়ী এলাকার যমুনা ডিলারের পরিবেশক ফসিয়ার রহমান বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানো বা কমানো এর কোনটিই ডিলার পর্যায়ে নির্ধারণ করা হয় না। কোম্পানি যেভাবে দাম নির্ধারণ করে দেয় ঠিক সেই দামে আমরা খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করে থাকি। তিনি বলেন, দাম কমালেও এখনো পর্যন্ত কোম্পানি থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আমাদেরকে জানানো হয়নি। যে কারণে আগের দামেই বিক্রি করা হচ্ছে।
এদিকে গ্যাসের দাম কমালেও যশোরের বাজারে এর কোনো প্রতিফলন না থাকায় ভোক্তা পর্যায়ে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা গেছে। ভোক্তাদের অভিযোগ গ্যাসের দাম কমালেও তাদের কোনো উপকারে আসছে না। বরং বাড়তি দামেই তাদেরকে গ্যাস কিনতে হচ্ছে।
যশোর শহরতলীর এফ ব্লকের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, সকালে জামরুলতলা বাজারের একটি দোকান থেকে তাকে ১২৮০ টাকা দিয়ে যমুনা গ্যাস কিনতে হয়েছে। ১২ কেজির সিলিন্ডার বাবদ ১২৫০ টাকা এবং চারতলায় তুলে দেয়া বাবদ আরও ৩০ টাকা দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, ভোক্তাদের যদি কোনো লাভ না হবে তাহলে গ্যাসের দাম কমিয়ে লাভ কি।
এ বিষয়ে যশোর এলপি গ্যাস ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক একেএম শামসুল কাদের বলেন, এলপি গ্যাসের দাম নিয়ে রীতিমত তামাশা চলছে। এ বিষয়ে কোনো সমন্বয় নেই। একদিকে কোম্পানি থেকে এক ধরনের দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে অন্যদিকে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আরেক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এতে আমরা যারা ব্যবসায়ী চরম আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছি। তিনি বলেন, গ্রাহকরা আমাদের নিয়ামক শক্তি। দাম নিয়ে এ সমন্বয়হীনতার কারণে আমাদের গ্রাহকদের সাথে ভুল বোঝাবুঝি চলছে। এজন্য আগামী বৃহস্পতিবার আমরা যশোরের ব্যবসায়ীরা কোম্পানি রেট না কমালে গ্যাস বিক্রি করবো কিনা তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যশোরের সহকারী পরিচালক মো. ওয়ালিদ বিন হাবিব বলেন, গ্যাসের অতিরিক্ত দাম দিয়ে কেনার বিষয়টি গত মাসের ৪ তারিখে যশোর এলপি গ্যাস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত একটি আবেদনের মাধ্যমে আমাকে অবহিত করেছেন। তারপরও পূজার পরে এ বিষয়ে বাজার পর্যায়ে কোনো অসঙ্গতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।