এবার চিনির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ সয়াবিন তেলের পর এবার চিনির দাম বাড়াতে চান রিফাইনারি মালিকরা। ডলারের বাড়তি দামে অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের কথা বলে সরকারের কাছে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। সরকার দাম বাড়াতে সম্মতি না দিলে আমদানি শুল্ক মওকুফ করার দাবি জানিয়েছে রিফাইনারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন।
অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম রহমান গত বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে চিনির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তবে কেজিতে কত টাকা বাড়াতে চান তারা সেটা উল্লেখ করা হয়নি প্রস্তাবে।
গত ৩ আগস্ট বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ২০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে মিলমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। এরপর ৫ আগস্ট রাত ১২টা থেকে বেড়েছে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম।
রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে চিনি আমদানির মূল্য পরিশোধে ডলারের বিপরীতে অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে বিপুল লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছেন তারা। ঋণপত্র (এলসি) খোলার সময় ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৩ থেকে ৮৫ টাকার মধ্যে থাকলেও এখন মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে প্রতি ডলারে ১১৫ টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে।
এছাড়াও আগে প্রতি টন চিনির আমদানি শুল্ক ২২ থেকে ২৩ হাজার টাকার মধ্যে থাকলেও বর্তমানে ২৮ থেকে ২৯ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। পরিশোধনের পর মিল গেটে প্রতি টন চিনির দাম দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। কিন্তু মিলগেটে বিক্রি হচ্ছে ৭৮ হাজার ৩০০ থেকে ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকায়।
রাজধানীর কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮২ টাকায়। আর প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ৯২ টাকায়। তবে রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে প্রতি কেজি চিনি প্রক্রিয়াজাতকরণের পর দাম দাঁড়াচ্ছে ৯৩ থেকে ৯৭ টাকা। অর্থাৎ তাদের হিসাবে প্রতি কেজি চিনিতে লোকসান হচ্ছে প্রায় ২১ টাকা থেকে ২৪ টাকা।
এমন পরিস্থিতিতে চিনির দাম না বাড়ালে লোকসান বৃদ্ধি পেয়ে রিফাইনারিগুলো দেওলিয়া হবে বলে আশঙ্কা করেছে মালিকদের সংগঠন। তাই চিনির দাম বাড়ানো সম্ভব না হলে আমদানি মওকুফ করার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম রহমান।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের মতে, দেশে বছরে প্রায় ১৮ লাখ টন পরিশোধিত চিনির প্রয়োজন হয়। এর প্রায় ৯৮ শতাংশ আমদানি করা হয়। আমদানির বেশির ভাগই ব্রাজিল থেকে আসে।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) অধীনে থাকা রাষ্ট্রীয় চিনিকলগুলো চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত আখ থেকে ১৯ হাজার ৫০০ টন চিনি উৎপাদন করেছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ ১০ মাসে ১ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ৪ লাখ ৮৫ হাজার টন পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে। বর্তমানে অপরিশোধিত চিনিতে প্রতি টনে ৩ হাজার টাকা শুল্ক, ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রক শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও ৪ শতাংশ অগ্রিম আয়কর দিতে হয়।
সূত্র : দেশ রূপান্তর