যশোরে ইলিশের আকাল : পদ্মা সেতু দিয়ে চলে যাচ্ছে ঢাকায়

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ॥ পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বরিশাল বিভাগ থেকে যশোরে ইলিশ মাছের সরবরাহ আসা আশঙ্কাজনকহারে কমে গেছে। দাম ভালো, ৪০ কেজি মণ দরে বিক্রি (যশোরে ৪২ কেজি ও খুলনায় ৪৪ কেজিতে মণ) এবং অল্প সময়ে পৌঁছানোর সুবিধা পেয়ে ওই বিভাগের বরগুনা ও ভোলা জেলার মাছ ব্যবসায়ীরা ছুঁটছেন পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকার পথে। যশোরের কমিশন এজেন্ট আড়তদাররা মৌসুমে ইলিশ বিক্রির আশায় লাখ লাখ টাকা অগ্রিম বা দাদন দিয়েও মাছ না পেয়ে নিরাশ হয়ে বসে আছেন। সেই সাথে এই ভরা মৌসুমেও যশোরবাসী বঞ্চিত হচ্ছেন ইলিশের স্বাদ থেকে।
শ্রাবণ মাস শেষ হতে চললো। এই ভরা মৌসুমেও যশোরের বড়বাজারে কাক্সিক্ষত ইলিশের দেখা মিলছে না। যৎসামান্য যা আসছে তার দাম আকাশচুম্বি। সোমবার (৮ আগস্ট ) বড়বাজার মাছ বাজারের খুচরা বিক্রেতা এরশাদ আলী এক কেজি সাইজের একটু বেশি ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি করেছেন ১৫শ’ টাকা দরে। ৮০০/৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি করেছেন ১১শ’ টাকায়। আর ৭০০/৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি করেছেন ৮শ’ টাকায়। তবে ছোট আকারের ইলিশ ( ৫/৬ টায় কেজি) বিক্রি করেছেন সাড়ে ৪শ’ টাকায়। দাম বেশির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজারে ইলিশ মাছের আমদানি অনেক কম।
যশোর বড়বাজার মাছ বাজারের আড়তদার (কমিশন এজেন্ট) মেসার্স তিতাস ফিশের স্বত্বাধিকারী গোলাম তাহের টগর সোমবার এ প্রতিবেদককে জানান, ইলিশের ভরা সিজন চলছে, কিন্তু যশোরে ইলিশের সরবরাহ কম। ভোলা ও পাথরঘাটার ব্যবসায়ীরা পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় ইলিশ নিয়ে বিক্রি করছে। সেখানে ৪০ কেজিতে মণ এবং যশোর বাজার থেকে দাম ভালো পাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যশোরে বর্তমানে যে দরে ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে তার থেকে ৩০০/৪০০ টাকা কম ছিল গত বছর এই সময়ে। এই আড়তদার বলেন, ভোলা জেলার দৌলতখান ও বরগুনা জেলার পাথরঘাটার ইলিশ মাছের পাইকারি ব্যবসায়ীদের যশোরের অধিকাংশ আড়তদাররা এক একজন ব্যবসায়ীকে কমপক্ষে এক লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অগ্রিম (দাদন) দিয়েছেন তাদের পাঠানো মাছ বিক্রি করার জন্যে। কাক্সিক্ষত ইলিশ না আসায় তারা কাড়ি কাড়ি টাকা লগ্নি করে কমিশন বঞ্চিত হয়ে লোকসানে পড়েছেন।
বরগুনা ও ভোলার মাছ ব্যবসায়ীরা সোমবার দৈনিক লোকসমাজকে জানান, বর্তমানে তারা পদ্মা সেতুর সুফল ভোগ করছেন। যশোর ও খুলনায় সাধারণত বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও পাইকারি মৎস্য বাজার এবং ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার চৌকিঘাট এলাকা থেকে ইলিশ আমদানি হয়ে আসে। সেখানকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা যশোর-খুলনার আড়তে মাছ পাঠিয়ে থাকেন। যশোর-খুলনার আড়তদাররা কমিশনভিত্তিতে ওইসব ব্যবসায়ীর পাঠানো মাছ বিক্রি করে দেন।
ভোলার দৌলতখান উপজেলার চৌকিঘাট এলাকার মাছের আড়তদার আলহাজ মো. আব্দুল হাই সোমবার এ প্রতিবেদককে জানান, ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা হয়ে অত্যন্ত কম সময়ে পদ্মা সেতু পার হয়ে তারা ঢাকার বিভিন্ন বাজারে ইলিশ মাছ নিয়ে হাজির হতে পারছেন। সেখানে মাছ বিক্রি করে দামও আগের তুলনায় ভালো পাচ্ছেন। তবে তিনি জানান, বর্তমানে সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। নদীতে ইলিশ কম। সম্প্রতি সিলেটে বন্যা হওয়ায় পলি পড়ে নদীর নাব্যতা কমে গেছে। পানির গভীরতা কমে যাওায় সাগর থেকে নদীতে ইলিশ আসছে না।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও পাইকারি মৎস্য বাজারের আড়তদার মেসার্স বি.পি. মৎস্য আড়তের স্বত্বাধিকারী বাবুরাম কর্মকার সোমবার এ প্রতিবেদককে জানান, পদ্মা সেতু হওয়ায় তাদের প্রচ- সুবিধে হয়েছে। ঢাকায় ইলিশ বেঁচে দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। আগে ফেরির নানান ত্রুটির জন্যে যশোর ও খুলনায় ইলিশ পাঠাতে বড্ড বেশি দেরি হয়ে যেত, বরফ লাগতো বেশি, মাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকতো। সময়মত মাছ মোকামে পাঠতে না পারলে বিক্রি ও দাম কোনটাই ভালো আসতো না। আর এখন বেলা ৩/৪ টায় গাড়িতে ইলিশ মাছ লোড দিয়ে পদ্মা সেতু পার হয়ে ভোরেই ঢাকার বিশেষ করে আব্দুল্লাহপুর, যাত্রাবাড়ি, বাইবেল, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটে পৌঁছে যাচ্ছে। সেখানে পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে। ওইসব মার্কেট থেকে খুচরা বিক্রেতারা ইলিশ মাছ কিনে ঢাকার অন্যান্য এলাকার বাজারগুলাতে বিক্রি করে। তাছাড়া ঢাকায় সবখানে ৪০ কেজিতে ইলিশের মণ বিক্রি হয়। যেখানে যশোরে ৪২ কেজি, খুলনার রূপসা ঘাটে ৪৪ কেজি ও খুলনার ৫নং ঘাটে ৪২ কেজি মণ দরে ইলিশ বিক্রি হয়। পদ্মা সেতু এই লোকসান থেকে বাঁচিয়েছে। তিনি আরও বলেন মাছের আমদানি বাড়লে যশোর-খুলনার মোকামে ইলিশ যাবে।
এদিকে, যশোর জেলা মৎস্য অফিসার মো. ফিরোজ আহমেদ সোমবার দৈনিক লোকসমাজকে জানান, বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে নদীর ইলিশ তেমনভাবে এখনও ধরা পড়েনি। বৃষ্টি হলে মাছ আসা শুরু হবে। পদ্মা সেতুর সুবিধার বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা যেখানে দাম ভালো পাবেন সেখানেই তাদের প্রোডাক্ট নিয়ে যাবেন। তিনি আরও বলেন, গত বছর এই সময়ে যশোর বড়বাজার মাছ বাজারে ইলিশ মাছের দাম ৩০০/৪০০ টাকার কম ছিল। আমদানি কম হওয়ার কারণে ইলিশের দামটা একটু বেশি যাচ্ছে।