রাজগঞ্জে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে মানুষ

0

 

ওসমান গণি, রাজগঞ্জ (যশোর) ॥ হঠাৎ করে সরকার জ্বালানি তেলের দাম দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষসহ সব শ্রেণি- পেশার মানুষ। ইতিমধ্যে বাজারে এর প্রভাবও পড়েছে। হু হু করে বেড়ে গেছে সকল প্রকার পণ্যের দাম।
স্থবির হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের জনজীবন। গত কয়েকদিন বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং এবং এর সাথে যুক্ত হলো নতুন করে জ্বালানি তেলের দাম। সব মিলিয়ে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের কয়েক লাখ খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।
পাল্লা দিয়ে হু হু করে বাজারে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে দিনমজুরসহ খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি বেড়েছে পরিবহন ভাড়াও। দ্বিগুণ অর্থ গুণতে হচ্ছে সকল প্রকারের যাত্রীদের। এখন চলছে রোপা আমন মৌসুম। বৃহত্তর মণিরামপুর উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ১৮টি ইউনিয়নে কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন রোপা আমন আবাদে।
বর্ষা মৌসুমে যখন বৃষ্টির দেখা নেই তখন ক্ষেতে পানি দিতে ডিজেল চালিত স্যালো ইঞ্জিন ও পাওয়ার টিলার কৃষকের একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষি কাজের ভরসা সেই ডিজেলের দামও লিটার প্রতি ৩৪টাকা বেড়ে যাওয়ায় ডিজেল কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকেরা। পাশাপাশি পাওয়ার টিলারে প্রতি বিঘা জমি চাষ করতে অতিরিক্ত ২ থেকে ৩শ টাকা খরচ করতে হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, মৌসুমে ধান বিক্রি করে সারা বছর সংসারসহ মৌসুমের আবাদ করতে হয়। কিন্তুু হঠাৎ করে ডিজেল ও ইউরিয়া সারের দাম দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় রোপা আমন চাষ নিয়ে এ অঞ্চলের চাষিরা পড়েছেন মহাবিপাকে।
অন্যদিকে পেট্রোল ও অকটেনের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে রাজগঞ্জ অঞ্চলের ৮টি রুটে শ শ ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক, প্রাইভেটকার চালক, আলমসাধু, নছিমন, করিমন ও ট্রাক চালকসহ সাধারণ যাত্রীদের যেন ভোগান্তির শেষ নেই। যশোরের মণিরামপুর উপজেলার পশ্চিমের বাণিজ্যিক শহর রাজগঞ্জ। প্রান্তিক এলাকা হওয়ায় এ অঞ্চলের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল। রাজগঞ্জ বাজার থেকে প্রতিদিন ৮টি রুটে চলে এ বাহন। যার ওপর জীবিকা নির্বাহ করে কয়েক হাজার পরিবার।
কিšু‘ জ্বালানির দাম ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এ পেশায় জড়িত শ শ মানুষ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দিলেও নিজ গন্তব্যে তারা যেতে পারছেন না টাকার অভাবে। রাজগঞ্জ মোটরসাইকেল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইউনুস আলী জানিয়েছেন, রাজগঞ্জ থেকে পুলেরহাট, চাঁচড়া চেকপোস্ট, মণিরামপুর, ত্রিমোহিনী, কেশবপুর, খোরদো, বাঁকড়া ও ঝিকরগাছা রুটে ভাড়ায় চালিত শ শ মোটরসাইকেল যাতায়াত করে। এ পেশার সাথে বর্তমানে কয়েক হাজার মোটরসাইকেল শ্রমিক জড়িত রয়েছে। যাদের আয়ের একমাত্র উৎস হচ্ছে এই মোটরসাইকেলে ভাড়া খাটা। কিন্তুু পেট্রোল ও অকটেনের দাম বৃদ্ধিসহ নানা প্রতিকূলতার কারণে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে এ পেশাটি।
মোটরসাইকেল চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন আলা জানিয়েছেন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে কিলোমিটার প্রতি চার টাকা ভাড়া নিয়েও যাত্রীদের টানতে পারছেন না চালকেরা। এ শ্রমিক নেতা আরো জানান, করোনাকালীন ও তার পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ আকার ধারণ করেছিল যে, মোটরসাইকেলের ভাড়া পরিশোধ করে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার মত অর্থ থাকতো না অনেক চালকেরই। তিনি আরো বলেন, বিশেষ করে বর্ষাকালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন চালকরা। আর এখনতো পেট্রোল ও অকটেনের অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দশ টাকা বেশি চাইলে যাত্রীরা মোটরসাইকেলে যেতে চাচ্ছেন না। ফলে এসকল মোটরসাইকেল চালকরা বর্তমানের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে বলে তাদের অভিযোগ।
কথা হয় যশোরের যাত্রী আব্দুর রহমান ও রফিক উদ্দিন মণিরামপুরের যাত্রী জামাল হোসেন, ইউসুফ আলীর সাথে। তারা জানান, মোটরসাইকেলে অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়ায় তারা কম টাকায় ইঞ্জিন চালিত অটো ভ্যানে যাতায়াত শুরু করে দিয়েছেন।
পাওয়ারটিলার চালক নজরুল ইসলাম, মোশারফ হোসেন, তোফাজ্জেল হোসেন ও রূস্তম আলী জানান, এতদিন তারা চলতি রোপা আমন মৌসুমে জমি চাষ করে আসছিল প্রতি বিঘা তিনশ টাকা হারে। কিন্তুু হঠাৎ ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পাঁচশ টাকা প্রতি বিঘা জমি চাষ করতে হচ্ছে।