বাগেরহাটে জোয়ারের পানিতে অনেক গ্রাম প্লাবিত, জনদুর্ভোগ

0

বাগেরহাট সংবাদদাতা ॥ জোয়ারের অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাগেরহাটের মোরলগঞ্জ ও রামপাল উপজেলার অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। হঠাৎ পানিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন প্লাবিত হওয়া গ্রামগুলোর বাসিন্দারা। বেশকিছু মৎস্য ঘেরও তলিয়েছে জোয়ারের পানিতে।
গতকাল শুক্রবার সকালে স্বাভাবিক জোয়ারের তুলনায় ৩ থেকে ৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অতিদ্রুত প্লাবিত এলাকায় রিংবাঁধ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো চিহ্নিত করে বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হবে। মোড়েলগঞ্জের পানগুছি নদীর পানি ৩ থেকে ৪ ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় মোরলগঞ্জ পৌরসভার কাপুড়পট্টি সড়ক, কাঁচা বাজার, ফেরিঘাট, কালাচাঁদ মাজার এলাকা ও সানকিভাঙ্গা প্লাবিত হয়েছে। এর বাইরে উপজেলার ঘষিয়াখালী, জিউধরার পালেরখন্ড, কাকরাতলী, শনিরজোড়, সোনাতলা, চন্দনতলা, জিউধরা, হোগলাবুনিয়ার ও বারইখালীসহ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
মোরলগঞ্জের পৌর এলাকার চা দোকানি জামাল শেখ বলেন, ‘দুইদিন ধইরা জোয়োরের পানিতে মোগো পৌরসভার সবহানে পানিতে তলাইয়া গ্যাছে। দুপুর সাড়ে ১১ থেকে ১২ মধ্যে পানিতে ভইরা যায় সবহানে। মুই চেয়ার পাইত্তা তার ওপরে বইসা দোহানদারি হরতে আছি।’ একই এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী কালাম মোল্লা বলেন, ‘মোর হোটেলের মধ্যে একহাত পানি, কাস্টমার হের মধ্যে বইতে চায় না। বেশ কয়েক বছর ধইরা এমন অবস্থা চলতে আছে। বছর বছর পানিও বাড়তে আছে। মোগো এই হানে বেড়িবাঁধ না দিলে আর হইবে না।’
অন্যদিকে মোংলা-ঘোষিয়াখালি বঙ্গবন্ধু নৌচ্যানেলসহ দাউদখালি, বগুড়া, তেতুলিয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রামপাল উপজেলার গিলাতলা বাজার, বাঁশতলী, ভোজপাতিয়া, হুড়কা, রাজনগরসহ পেড়িখালি ইউনিয়নের অনেক এলাকা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। মোংলা উপজেলারও কয়েক গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
রামপাল সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা সবুর রানা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তের প্রভাবে দিন দিন রামপালের দাউদখালি নদীসহ জেলার সকল নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগে জোয়ারের পানি ছিলো স্বাভাবিক ব্যাপার। এখন জোয়ারের পানিতে রামপালের সদর ইউনিয়নসহ নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। রামপালে জোয়ারের পানিতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত বেড়িবাঁধ না দেয়া হলে আগামীতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আরও বাড়বে। এর আগে গত বুধবার বিকেলে ভৈরব নদের পানির চাপে বাগেরহাট সদর উপজেলার কেশবপুর এলাকার একটি কালভার্ট ও কালভার্টের দুই পাশের প্রায় ২০ ফুট রাস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছিল। উপজেলা প্রশাসনের অর্থায়নে তাৎক্ষণিকভাবে বালির বস্তা ও মাটি দিয়ে রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছিল।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ জানান, পূর্ণিমার প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের সময় সকল নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে মোড়েলগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকাসহ ওই উপজেলা ও রামপাল উপজেলার বেশকিছু এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। মূলত এসব এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকার কারণে জোয়ারের পানি সহজে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো চিহ্নিত করে জোয়ারের পানি ঠেকানোর জন্য প্রকল্প প্রস্তাবনা দেওয়া হবে। প্রকল্প অনুমোদন হলে দ্রুত কাজ করা হবে।