যশোরের খোলাডাঙ্গায় শ্বাসরোধে যুবক হত্যা

0

 

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে লাভলু হোসেন (৪০) নামে এক যুবক খুন হয়েছেন। মুখের ভেতর লুঙ্গি-কাপড় ঢুকিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়।  শুক্রবার সকালে শহরতলীর খোলাডাঙ্গা পশ্চিমপাড়ায় রেললাইন সংলগ্ন একটি আমবাগান থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে কারা কী জন্যে তাকে হত্যা করেছে তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। কিন্তু লাভলুর কিশোর ছেলের এলোমেলো কথাবার্তায় নানা সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
আরবপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার শওকত হোসেন জানান, নিহত লাভলু খোলাডাঙ্গা মধ্যপাড়া কলোনিপাড়ার আব্দুল মান্নানের ছেলে। তিনি আফিল গ্রুপের ডিম ডেলিভারিম্যান পদে চাকরি করতেন। কারো সাথে তার কোনো বিরোধ নেই। লাভলু এলাকায় অত্যন্ত ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত। লাভলুর বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে খোলাডাঙ্গা পশ্চিমপাড়ায় রেললাইন সংলগ্ন ‘ভিটের আমবাগান’ নামক একটি বাগান রয়েছে। এদিন (শুক্রবার) ভোর পাঁচটার দিকে এলাকার একটি ছোট ছেলে বাগানে আম কুড়াতে যায়। এ সময় সে একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার দেয়। পরে বিষয়টি সর্বত্র জানাজানি হয়ে যায়। মিন্টু ড্রাইভার নামে এক ব্যক্তি মোবাইল ফোন করে বিষয়টি তাকে জানান। এরপর লোকজনও ছুটে যান সেখানে। স্থানীয় লোকজন সেখানে গিয়ে লাশটি লাভলুর বলে শনাক্ত করেন। তিনি আরো জানান, নিহত লাভলুর মুখের ভেতর একটি লিলেন জাতীয় কাপড়ের লুঙ্গির বেশিরভাগ অংশ ঢুকানো ছিলো। ধারণা করা হচ্ছে, অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা লাভলুকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে। শওকত হোসেন জানান, লাভলুরা ৩ ভাই ছিলেন। ২৫ বছর আগে বড় ভাই বাবলু ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা যান। ছোট ভাই মনিরুজ্জামান মনির প্রায় ১২ বছর আগে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন। এই মামলার বাদী ছিলেন লাভলু। কিন্তু মনির হত্যা মামলা নিয়ে আসামি পক্ষের সাথে লাভলুর কখনো কোনো গোলাযোগ হয়নি। ফলে তারা বুঝতে পারছেন না, কারা কী জন্যে লাভলুকে হত্যা করেছে।
স্থানীয়রা জানান, খবর পেয়ে কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি মো. তাজুল ইসলাম, ডিবি পুলিশের ওসি রুপন কুমার সরকার ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ইনসপেক্টর শামীম মুসার নেতৃত্বে কয়েকটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ সময় পুলিশ কর্মকর্তারা নিহতের পরিবারের লোকজন ছাড়াও এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে হত্যার বিষয়ে খোঁজখবর নেন। এছাড়া পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যায়।
ডিবি পুলিশের ওসি রুপন কুমার সরকার জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে লাভলু কর্মস্থল থেকে বাড়িতে ফেরেন। রাতের খাওয়া শেষে চা পানের উদ্দেশ্যে বাড়ির কাছের মোড়ের একটি দোকানে যান। এরপর আর বাড়ি ফেরেননি লাভলু। পরদিন (শুক্রবার) ভোর পাঁচটার দিকে বাড়ি থেকে ৫শ’ গজ দূরে রেললাইনের পাশে এলাকার মৃত ফজলে করিমের ছেলে আসাদের আমবাগানের ভেতর তার লাশ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। পরে নিহতের স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজন সেখানে গিয়ে লাশটি লাভলুর বলে শনাক্ত করেন। নিহত লাভলুর নাকে ও মুখে আঘাতের চিহ্ন ছিল।
কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি মো. তাজুল ইসলাম জানান, কারা কী জন্যে লাভলুকে হত্যা করেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
নিহতের স্ত্রী সালমা খাতুন জানান, তার স্বামীর সাথে কারো বিরোধ ছিলো না। রাত সাড়ে নয়টার দিকে তার স্বামী কর্মস্থল থেকে বাড়িতে আসেন। এরপর রাতের খাবার শেষে সাড়ে ১০ টার দিকে দোকানের কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। পরদিন সকালে তার স্বামীর লাশ রেললাইন এলাকার একটি আমবাগানে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, রাতে তার স্বামী বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর আর কোনো খোঁজখবর নেননি। তার ঘরের পাশে ছেলে সাকিলের ঘর। তিনি ভেবেছিলেন, রাতে বাড়ি ফিরে তার স্বামী ছেলের ঘরে এসে ঘুমিয়ে পড়েছেন ।
নিহতের ছেলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সাকিল জানায়, রাত একটার দিকে বাড়ির কাছের মোড়ের দোকানের সামনে তার পিতার সাথে সর্বশেষ দেখা হয়। পরদিন সকালে তার পিতার লাশ আমবাগানের ভেতর পাওয়া যায়। তবে তার পিতার মোবাইল ফোন সেটটি পাওয়া যায়নি।
এদিকে এলাকাবাসী জানায়, লাভলুর খুনের খবরে তার ছেলে সাকিলের মধ্যে কোনো শোক-তাপ লক্ষ্য করা যায়নি। ছেলে একটু হাবাগোবা প্রকৃতির। হয়তো এ কারণে পিতার মৃত্যুতে তার মধ্যে প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, ছেলে সাকিল কোনো কারণে তার পিতা লাভলুর ওপর ক্ষিপ্ত ছিলো। যে কারণে পিতার মৃত্যুতে তার ভেতর কোনো প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি। হয়তো লাভলু খুনের বিষয়টি তার ছেলে জানে। এ কারণে তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে। এছাড়া অন্য কোনো কারণে কেউ লাভলুকে হত্যা করতে পারে। হত্যার রহস্য উদঘাটনে এসব বিষয় নিয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।