ভবন নির্মাণে বিধিমালা মানা হচ্ছেনা আলমডাঙ্গায়

0

 

রিফাত রহমান, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি ॥ সাততলা ভবন নির্মাণে বিধিমালা মানছেন না চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ। ভুক্তভোগী আলমডাঙ্গা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করলেও অভিযোগটি আমলে না নিয়ে নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছেন ডা.হাদী। ভুক্তভোগী দুবাই প্রবাসী প্রকৌশলী রুহুল কুদ্দুসের ভাই সাঈদ মোহাম্মদ হিরন তার পক্ষে ১৩ মে আলমডাঙ্গা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে জানা যায়, আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরের রেলস্টেশন সড়কে ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসা সংলগ্ন জমিতে ডা.হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ সাততলা ভবন নির্মাণ করছেন। তার নির্মাণাধীন ভবনের পাশেই ভুক্তভোগীর জমি। এ জমিতে একটি মুদি দোকান রয়েছে। ডা.হাদী আইন কানুন না মেনে ভবন নির্মাণ করায় প্রবাসীর জমিতে দেয়া সীমানা প্রাচীরটি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়েছে। এছাড়াও নির্মাণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করায় বিভিন্ন সময় ওপর থেকে রড, বাঁশ পড়ে দোকানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আশেপাশের দোকার ও ভবনেরও ক্ষতি হচ্ছে। যেকোন সময় ওগুলো ধসে পড়তে পারে। গত ১৩ মে একটি বড় আকারের বাঁশ দোকানের ছাদ ভেদ করে দোকানের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এতে দোকানের কর্মরত একজন আহত হন।
অভিযোগকারী সাইদ মোহাম্মদ হিরন বলেন, আলমডাঙ্গা থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে। থানার অফিসার ইনচার্জ এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি আরো জানান, ২০২১ সালের ২৮ মার্চ আলমডাঙ্গা পৌরসভা মেয়র বরবারও এ বিষয়ে অভিযোগপত্র দিয়েছিলাম । পৌরসভার পক্ষ থেকে কোন কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় ডা. হাদী আরো অনিয়ম করে ভবন নির্মাণ অব্যাহত রেখেছেন।
জমির মালিক দুবাই প্রবাসী প্রকৌশলী রুহুল কুদ্দুস টেলিফোনে বলেন, সরকারের ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ১৯৯৬-এর ১৮ ধারার ৪ উপধারার (ঘ) অনুযায়ী পৌরসভা এলাকায় ২৬৮ বর্গমিটার অর্থাৎ ৪ কাঠার অধিক জমিতে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে উভয়পাশে ১ দশমিক ২৫ মিটার অর্থাৎ ৪ ফুটেরও বেশি এবং পিছনের দিকে ২.০০ মিটার অর্থাৎ সাড়ে ছয় ফুট জায়গা উন্মুক্ত রাখতে হবে এবং ২০ (১) ধারা অনুযায়ী ব্যক্তিমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ভবনের সামনের দিকে ১ দশমিক ৫০ মিটার অর্থাৎ প্রায় পাঁচ ফুট জায়গা খালি রাখতে হবে। আমার জানা মতে, ডা. হাদীর জমির পরিমাণ আনুমানিক পাঁচ কাঠার মত। সাততলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাাণের ক্ষেত্রে আমার জমির পাশে মাত্র দেড় ফুট জায়গা রেখেছেন, যা ইরামত নির্মাণ বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি বিধিমালা অমান্য করে ত্রুটিপূর্ণ বহুতল ভবন নির্মাণ করায় আমার জমিতে থাকা সম্পত্তির ক্ষতি ও জীবনহানির আশঙ্কা করছি। তিনি এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।
সাততলা ভবন নির্মাণে বিধিমালা মানা হচ্ছেনা এমন অভিযোগের বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, অভিযোগের বিষয়টি তার জানা নেই। আলমডাঙ্গা পৌরসভার ভবন নির্মাণের বিধি মেনেই ২০২১ সালের এপ্রিল মাস থেকে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। প্রবাসী প্রকৌশলী রুহুল কুদ্দুস আমার মামার শ্যালক। সে কারণে উনার সঙ্গে আমার কোন বিরোধ নেই। নির্মাণাধীন ভবনের চারিদিকে নির্মাণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই কাজ করা হচ্ছে। ঝড়ের কারণে নির্মাণাধীন ভবনের ওপর থেকে একটি বাঁশ পার্শ্ববর্তী জমিতে অবস্থিত দোকানের ওপর পড়ে। এরপর ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের টিন সরিয়ে নতুন টিন দিয়ে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া দোকান ঘরটি ড্রেনের ওপর করা হয়েছে। যারা অভিযোগ দিচ্ছে তাদের সীমানা প্রাচীর আমার জমির ভেতরেই ছিলো। মাপার পর সেটা ভাঙ্গা হয়েছে।
আলমডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র হাসান কাদির গনু এ প্রসঙ্গে বলেন, এরা পরস্পর আত্মীয়। সে কারণে তারা নিজেরাই বসে অভিযোগের সমাধান করে ফেলেছেন। সে জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে পরবর্তীতে কোন পদক্ষেপে যাওয়া হয়নি।
আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রনি আলম নূর বলেন, বিষয়টি আমি জানি। তবে দুপক্ষই এটা নিয়ে বসেছিলো। তারপরও কোন সমস্যা থাকলে আমি নিজে দুপক্ষকে নিয়ে বসে সমাধান করে দেবো।