চৌগাছার এমকেএনজি বিদ্যালয়ে ভবনের জন্যে কষ্টে শিক্ষার্থীরা

0

 

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছা উপজেলার সীমান্তে অবস্থিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ক্লাস রুমের অভাবে কষ্টে ক্লাস করতে হয় শিক্ষার্থীদের। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার প্রায় দুইযুগ পার হতে যাচ্ছে। কিন্তু আজও সেখানে সরকারিভাবে কোন ভবন নির্মান হয়নি। বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ এলাকাবাসী সরকারি বরাদ্দের জন্যে কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
চৌগাছা-মহেশপুর সড়কে ঝাউতলা বাজার সংলগ্নে ১৯৯৯ সালে কতিপয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি অত্যন্ত মনোরম পরিবেশে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন। যার নামকরণ করা হয় ঝাউতলা এমকেএনজি মাধ্যমকি বিদ্যালয়। স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর হতেই আলো ছড়াতে থাকে। প্রায় শিক্ষাবর্ষে দৃষ্টি নন্দন ফলাফল অর্জন করে সকলের নজর কাড়তে সক্ষম হয়। ফলে অল্প দিনেই আশানুরূপ শিক্ষার্থী পায় বিদ্যালয়টি। বর্তমানে সেখানে ৩শ ৭২ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। শিক্ষক কর্মচারীর সংখ্যা ১৬ জন। ৭৫ শতাংশ জমির উপর গড়ে উঠা স্কুলে এখনও শোভা পাচ্ছে ২৩ বছর আগের টিনের ভাঙ্গাচোরা ঘর।সেখানেই চলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। ২০০৪ সালে এমপিও হলেও অজানা এক কারণে বিদ্যালয়টি ভবন থেকে বঞ্চিত বলে জানালেন স্কুলের শিক্ষক ও স্থানীয়রা। প্রতি বছরই বিদ্যালয়ে বাড়ছে ছাত্র- ছাত্রীর সংখ্যা বাড়ে। ফলে ক্লাস করতে ও করাতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। বর্তমানে অন্তত ১৮টি ক্লাস রুমের প্রয়োজন থাকলেও আছে মাত্র ১১টি। শিক্ষার্থীদের কষ্টের দিক বিবেচনা করে প্রধনি শিক্ষকের প্রচেষ্টায় নিজস্ব অর্থায়নে ২০১৬ সালে একটি ভবন নির্মানের কাজ শুরু করেন। যার ব্যয় স্কুলের সকল শিক্ষক কর্মচারী বহন করছেন। ভবনের নিচতলায় ক্লাস শুরু করা গেলেও অথের্র অভাবে ২য় তলার নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যালয়ে আছে শহীদমিনার, সুন্দর খেলার মাঠ, ছায়া শীতল পরিবেশ, শুধু নেই পর্যাপ্ত ক্লাস রুম। ফলে আনেক সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে এমনটিই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরাফাত আলী, সাইমা সুলতানা জানান, চৌগাছা উপজেলার শেষপ্রান্তে আমাদের বসবাস। এখান থেকে অন্য সব স্কুলের দুরত্ব বেশি, সে কারনে আমাদের স্কুলটি প্রতিষ্ঠা হওয়ায় আমরা খুব সহজেই শিক্ষা নিতে পারছি। কিন্তু স্কুলের ক্লাস রুমের অভাবে আমাদের অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। একটি ভাল ভবন হলে সবাই উপকৃত হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়টি নানা কারণে অবহেলিত। ক্লাস রুম সেভাবে নেই। তারপরও শিক্ষার্থীর কোন কমতি নেই। সরকারিভাবে একটি ভবন সেখানে তৈরি হলে আমাদের ছেলে -মেয়ে এমনকি শিক্ষক কর্মচারীদের কষ্ট দূর হবে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইনাল হক বলেন, ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠার সময় যে টিন ব্যবহার করা হয়েছিল তা খুঁজলে হয়ত দু’একটি এখনও পাওয়া যাবে। বাঁশ বেড়া আর টিনের ছাউনিতে ক্লাস শুরু করা হয়। এখন সেখানে বেড়ার পরিবর্তে ইটের গাঁথুনি হয়েছে আর ছাউনি সেই টিনই আছে। ফাঁকা স্থানে বিদ্যালয়টি গড়ে উঠায় প্রতি বছর ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। স্কুলের টিনের ছাউনি উড়ে মাঠের ভেতরে যেয়ে পড়ে। সেখান থেকে কুড়িয়ে নিয়ে বাঁশ খুটি কিনে আবার নতুন করে ছাউনি করা হয়। এভাবেই কেটে গেছে প্রায় দুইযুগ। আমরা শিক্ষক কর্মচারী মিলে একটি ভবন তৈরির চেষ্টা করছি। কিন্তু অর্থাভাবে সেটিও প্রায় বন্ধ। বিভিন্ন সময়ে নানা ব্যক্তি স্কুল পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হয়ে ভবনের ব্যাপারে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ফলাফল সেই শূন্য। প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমি নিজেও চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। একটি ভবন হলে সব কষ্ট দূর হত। বিদ্যালয় ফিরে পেত তার আসল রূপ।
এ বিষয়ে যশোর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম সোহাগ বলেন, কিছু নিয়ম মেনে কাজ করা হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন পেতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়না। উনারা হয়ত বা সেটি করতে পারেন নি। তবে পর্যায়ক্রমে সকল প্রতিষ্ঠানই ভবন পাবে। শিক্ষক কর্মচারীদের অর্থে নির্মিত ভবনের জন্যে আমরা কিছু অর্থের ব্যবস্থা করব বলে তিনি জানান।