যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক দিয়ে ময়না তদন্ত : বিপাকে মুমূর্ষু রোগীরা

0

বিএম আসাদ ॥ যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়কের একটি সিদ্ধান্তের কারণে রোগীদের দুর্ভোগ বেড়েছে। জানা গেছে, তত্ত্বাবধায়কের সিদ্ধান্তের কারণে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকদের লাশের ময়না তদন্তের কাজ করতে হচ্ছে। রোগীও ভর্তি করছেন। এতে সামাজিকভাবে জরুরি বিভাগ চিকিৎসক শূন্য হয়ে পড়ছে। ফলে, মুমূর্ষু রোগীকে জরুরি বিভাগে এসে চিকিৎসার জন্যে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। একজন চিকিৎসকের পরিবর্তে অন্যজন সেখানে দায়িত্ব পালন না করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
সূত্র জানিয়েছে, গত ২০ এপ্রিল রিজিয়া খাতুন (৭০) নামে এক বৃদ্ধাকে চিকিৎসার জন্য আনা হয় যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে জরুরি বিভাগে আনার পর সেখানে চিকিৎসক ছিলেন না। দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক আব্দুর রশিদ ওই সময় জরুরি বিভাগ ফেলে লাশের ময়না তদন্ত করতে গিয়েছিলেন মর্গে। এ সময় তার পরিবর্তে কোন চিকিৎসক ছিলেন না জরুরি বিভাগে। চিকিৎসক আসছেন আসছেন বলে স্বজনদের আশ্বাস দেয়ার পর দুপুর ২টা ৫২ মিনিটে ব্রাদার শুকান্ত রোগী রিজিয়া খাতুনের নাম-ঠিকানা লিখে রাখেন ভর্তি টিকিটে। ওই টিকিটের রেজিঃ নং- ১৯৩৩৯/৯৬। রিজিয়া খাতুন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শ্রীচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত মুনসুর আলীর স্ত্রী। জরুরি বিভাগে চিকিৎসক না পেয়ে অবস্থা বুঝে দুপুর ২টা ৫৭ মিনিটে স্বজনরা রোগী নিয়ে যান মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে। সেখানেও ছিলেন না কোন চিকিৎসক। এ সময় হাসপাতালের ৪র্থ তলায় মেডিসিন ওয়ার্ডে পাওয়া যায় মাহমুদ নামের একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক। তাকে ওয়ার্ড থেকে ওই রোগীর চিকিৎসা দেয়ার জন্য সেবিকাগণ সংবাদ দিলেও তিনি রিজিয়া খাতুনের চিকিৎসা দেননি। বিকেলে ৩টা ২০ মিনিটে স্বজনরা তাকে মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে মহিলা পেয়িং বেডে নিয়ে যান। তখন ডা. মাহমুদসহ ২ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক চিকিৎসা দেন এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য রিজিয়া খাতুনকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন। স্বজনরা তাকে ঢাকায় নেয়ার সময় ফেরিঘাটের কাছে রিজিয়া খাতুন অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর মৃত্যুবরণ করেন। শুধু রিজিয়া খাতুন না, জরুরি বিভাগের চিকিৎসক প্রায়ই তার চেয়ার ছেড়ে মর্গে লাশের ময়না তদন্ত করতে যান। ফলে, রোগী চিকিৎসা পান না।
যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল হচ্ছে ব্যস্ততম হাসপাতাল। এখানকার জরুরি বিভাগে সব সময় ভিড় থাকে মুমূর্ষু রোগীদের। এ পরিস্থিতিতে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকদের কাঁধে ময়না তদন্তের দায়িত্ব দেয়ায় দুর্ভোগে পড়ে রোগীরা।
সূত্র জানিয়েছেন, অনেক আগে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক লাশের ময়না তদন্তের কাজ করবেন। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর ওই কলেজের ফরেন্সিক বিভাগের চিকিৎসকগণ ময়না তদন্তের কাজ। তখন জরুরি বিভাগের চিকিৎসকগণ ওই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পান। কিন্তু সম্প্রতি হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আক্তারুজ্জামান জরুরি বিভাগের চিকিৎসকদের লাশের ময়না তদন্ত দায়িত্ব অর্পণ করেন। রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আক্তারুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ৬ মাসের মতো জরুরি বিভাগের চিকিৎসকদের উপর লাশের ময়না তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেখানে একজন ডাক্তার ময়না তদন্ত করতে গেলে তার স্থলে অন্যজন থাকার কথা। কারণ, জরুরি বিভাগ কখনো খালি রাখা যাবে না। হাসপাতালে চিকিৎসকের অভাব নেই। ৮২ জন চিকিৎসক থাকার পরও কেন এমন সংকট হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাইতো পোস্টেড না। অনেকে আছে প্রেষণে। তবে বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানান।