স্থানীয় সরকারের প্রকল্পে ধীর গতি, সংসদীয় কমিটির ক্ষোভ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ পল্লী সড়কে ২০১৭ সালে শুরু হওয়া সেতু নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ ছিল সাড়ে চার বছর। কিন্তু প্রকল্পটি সংশোধন করে মেয়াদ বাড়িয়ে সাত বছর করা হয়। সময় বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। অথচ এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ হয়েছে মাত্র ১৮ শতাংশ।
প্রকল্পের মতো স্থানীয় সরকার বিভাগের বেশির ভাগ প্রকল্প চলছে ধীর গতিতে। এতে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব কমিটি।
বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা।
বৈঠক শেষে অনুমিত হিসাব কমিটির সভাপতি আবদুস শহীদ বলেছেন, স্থানীয় সরকার বিভাগ ১৮৫টি প্রকল্পের তথ্য দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে অনেক প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্যের পর্যায়ে। অনেকগুলো প্রকল্পে দেখা গেছে, আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি প্রায় সমান। অর্থাৎ যতটুকু টাকা খরচ করা হয়েছে, বাস্তবে কাজও ততটুকু হয়েছে। এটা হওয়ার কথা নয়। আর্থিক অগ্রগতির চেয়ে বাস্তব অগ্রগতি বেশি হওয়ার কথা।
এই সমান হওয়ার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক প্রকল্প আছে সংসদ সদস্যরা ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছেন কিন্তু কাজ এগোচ্ছে না।
প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীর গতির কারণ অনুসন্ধান করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে একটি প্রতিবেদন দিতে কমিটি সুপারিশ করেছে।
এ ছাড়া প্রত্যেক সংসদ সদস্যের নির্বাচনী এলাকার রাস্তা-ঘাট ও অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ২০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ আছে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে প্রকল্প নিয়ে বরাদ্দের ব্যবস্থা করতে মন্ত্রণালয়কে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে কমিটি।
বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগের চলমান প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটি বেশ কিছুদিন আগে প্রকল্পগুলোর তথ্য চেয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয় এসব তথ্য কমিটিকে বৈঠকের আগের রাতে সরবরাহ করে।
তথ্য দিতে দেরি করায় কমিটি আজকের বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করে। কমিটির বক্তব্য, বেশির ভাগ প্রকল্প বারবার সংশোধন করা হচ্ছে। শুরুতে কেন সবকিছু যথাযথভাবে পর্যালোচনা করা হয় না? সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে প্রকল্প পরিচালকদের দায়িত্ব নিতে হবে, প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

স্থানীয় সরকারের প্রকল্পগুলো বেশির ভাগ তৃণমূলের মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত উল্লেখ করে কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, জনগণের প্রতি জনপ্রতিনিধিদের বিভিন্ন অঙ্গীকার থাকে। জাতীয় নির্বাচনের বাকি আছে দেড়, দুই বছর। অনেক প্রকল্প চলছে ধীর গতিতে।
ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ যেসব প্রকল্প শেষ পর্যায়ে আছে সেগুলো জাতীয় নির্বাচনের আগেই শেষ করার তাগিদ দেয় কমিটি।
এ সময় সংসদ সদস্যদের জন্য ২০ কোটি টাকা করে বরাদ্দের বিষয়েও আলোচনা হয়।
অনেক সদস্য এই অর্থ পাচ্ছেন না, এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ জানায়, অনেক সংসদ সদস্যের জন্য কিছু টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু অনেকে প্রকল্প প্রস্তাব জমা দিচ্ছেন না।
এ সময় একজন সংসদ সদস্য বলেন, তিনি ২০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব জমা দিলেও এখনো বরাদ্দ পাননি।
পরে কমিটি এ বরাদ্দের বিষয়ে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে।
এ ছাড়া কাজগুলো শেষ করে ৩ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে কমিটি। কোন প্রকল্প কতবার সংশোধন করা হয়েছে, তাও জানাতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকল্পে ধীর গতিতে কমিটি অসন্তোষ প্রকাশ করে এবং গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রকল্পগুলোকে ২ ভাগে ভাগ করে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো প্রথম পর্যায়ে ও কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো দ্বিতীয় পর্যায়ে বাস্তবায়ন করার জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে।
কমিটির সভাপতি আব্দুস শহীদের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, এ বি তাজুল ইসলাম, আহসান আদেলুর রহমান, ওয়াসিকা আয়শা খান এবং খাদিজাতুল আনোয়ার বৈঠকে অংশ নেন।