পাট শিল্প ঘুরে দাঁড়ালে লাভ হবে অর্থনীতির

0

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে পাট ও পাটপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। পাট ও কৃষিপণ্যে রপ্তানির মাধ্যমে বছরে এক হাজার কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার সম্ভাবনা দেখছে সরকার। এ ছাড়া সরকারের কর্মপরিকল্পনায় পাটকে দ্বিতীয় বড় রপ্তানি আয়ের খাত হিসেবে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর পরও ভালো নেই দেশের পাটকলগুলো। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত জুটমিল। এসব মিলের শ্রমিকরা এখন পাওনা আদায়ের জন্য প্রতিদিন মিছিল-সমাবেশ করছেন। স্থায়ী শ্রমিকদের পাওনা টাকার অর্ধেক পরিশোধ করা হয়েছে নগদে, বাকি অর্ধেক টাকা দেওয়া হয়েছে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। কিন্তু অস্থায়ী শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। কথা ছিল দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাটকলগুলোর আধুনিকায়ন সম্পন্ন করা হবে এবং পাটকলগুলো আবার চালু করা হবে। গত দুই বছরেও এসব পাটকল চালু করার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বেকার শ্রমিকরা প্রায়ই সড়ক অবরোধ ও ভুখা মিছিল করছে।
দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটের ব্যবহার বাড়াতে, পাটশিল্পের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে সরকার ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেছে। পাট খাতকে সুসংহত করতে ‘পাট আইন, ২০১৭’ ও ‘জাতীয় পাটনীতি, ২০১৮’ প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে ৬ মার্চ জাতীয়ভাবে পাট দিবস পালিত হচ্ছে। তারপরও পাট শিল্পে কেন অগ্রগতি হচ্ছে না তা অনুসন্ধান করতে হবে। অন্তরায় সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। সারা পৃথিবী আজ সিনথেটিক পণ্য ব্যবহারের কুফল বুঝতে পারছে। তাই পরিবেশবান্ধব পাটপণ্যের দিকে আবার সবার দৃষ্টি ফিরছে। বিশ্বের এই পরিবর্তিত মূল্যায়নের সুযোগ আমাদের নিতে হবে। পাট যেহেতু একান্তভাবেই আমাদের ফসল, তাই এর গবেষণা ও উন্নয়নে আমাদেরই মূল ভূমিকা রাখতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের পাট গবেষণা আন্তর্জাতিক মান অর্জন করেছে। পাটের জিনোম আবিষ্কৃত হয়েছে। রোগমুক্ত ও অধিক ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের কাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। সেই সঙ্গে মানসম্মত পাটপণ্যের গবেষণাও এগিয়ে নিতে হবে। বাংলাদেশের পাটশিল্পের হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবেও যেসব সুযোগ তৈরি হচ্ছে, সেগুলো কার্যকরভাবে কাজে লাগানো গেলে পাট কেন্দ্রিক অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। বাংলাদেশ বিশ্বে সবচেয়ে ভালো মানের পাট উৎপাদনকারী দেশ হলেও শুধু কার্যকর গবেষণা ও ব্র্যান্ডিংয়ের অভাবে বিশ্ববাজারে পিছিয়ে পড়ছে। এখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে নিশ্চিত করতে হবে পাটের বহুমুখী ব্যবহার। পাটকলগুলোর আধুনিকায়নও অত্যন্ত জরুরি। সেই সঙ্গে আধুনিক কারখানায় কাজ করার জন্য দক্ষ লোকবল ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রয়োজনে আধা দক্ষদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুলতে হবে।