উদীচী ট্র্যাজেডি : ২৩ বছর ধরে চলছে বিচারের দাবি!

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভয়াবহ উদীচী ট্র্যাজেডির ২৩ বছর পার হচ্ছে আজ ৬ মার্চ। দীর্ঘ এই দুই যুগেও ঘাতকদের শনাক্ত করা যায়নি। উচ্চ আদালতে আপিল শুনানিতে ঝুলে আছে মামলার কার্যক্রম। যদিও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রতিবছরই বলছেন, তারা উদ্যোগ নিচ্ছেন মামলাটির কার্যক্রম শুরু করার। ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোর টাউন হল ময়দানে উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের সমাপনী দিনে সঙ্গীত অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় নিহত হন ১০জন। তারা হলেন- নাজমুল হুদা তপন, সন্ধ্যা রানী ঘোষ, নূর ইসলাম, ইলিয়াস মুন্সী, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম মিলন, মোহাম্মদ বুলু, রতন কুমার বিশ্বাস, শাহ আলম পিন্টু ও রামকৃষ্ণ। আহত হন আড়াই শতাধিক মানুষ। বর্বর ওই ঘটনার বিচার এবং ঘাতকদের শাস্তি না হওয়ায় এক বুক যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন বোমা হামলায় নিহতদের পরিবার ও আহতরা। বিশেষ করে তপনের পরিবারকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নিজে জমি বরাদ্দ দিলেও সেই জমি বেদখল হয়ে গেছে। ভাড়া বাড়িতে থাকতে হচ্ছে তাদের।
জানা যায়, ১৯৯৯ সালে উদীচীর সম্মেলনে বোমা হামলার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়। প্রথমে কোতোয়ালি পুলিশ মামলার তদন্ত শুরু করলেও পরবর্তীতে তা সিআইডির ওপর ন্যস্ত হয়। তদন্ত শেষে ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে বিতর্কিত চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। পরবর্তীতে চার্জ গঠনের সময় উচ্চ আদালতে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তরিকুল ইসলামকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। চাঞ্চল্যকর এ মামলা আদালতে গড়ানোর ৭ বছর পর ২০০৬ সালের ৩০ মে মামলার রায় প্রদান করেন আদালত। রায়ে সব আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
এদিকে, দেশের আলোচিত জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান আটক হওয়ার পর পুলিশের কাছে প্রদত্ত জবানবন্দীতে উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলার কথা স্বীকার করেন। এই জবানবন্দীর ওপর ভিত্তি করে উদীচী হত্যা মামলা পুনঃতদন্তের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। মুফতি হান্নানের উদীচী হত্যাযজ্ঞ সংক্রান্ত জবানবন্দীর পর উদীচী হত্যা মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেয় সরকার। এই মামলার রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হয়। পরবর্তীতে এই হত্যা মামলায় মুফতি হান্নানকে যশোরে এনে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। ২০১০ সালের ৮ জুন ওই আপিল আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিয়া ও কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানির পর আসামিদের বক্তব্য জানতে চেয়ে বিচারিক বেঞ্চ নোটিশ জারির আদেশ দেন। হাইকোর্ট থেকে জারিকৃত এ সংক্রান্ত নথিপত্র ২০১০ সালের ২৬ জুলাই যশোরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এসে পৌঁছায়। এরপর উচ্চ আদালতের নির্দেশে খালাস পাওয়া আসামিরা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। কিন্তু এরপর মামলাটির আটকে আছে আইনের বেড়াজালে। বিচারের এই দীর্ঘ বিড়ম্বনায় ক্ষুব্ধ যশোরের মানুষ এখন দ্রুত এ মামলার কার্যক্রম চালু করার দাবি জানান।
উদীচী যশোরের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান খান বিপ্লব বলেন, মামলাটি রাজনীতিকরণ হওয়ায় সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি। বিচার প্রক্রিয়াও ঝুলে আছে। বিচার কাজ তরান্বিত করার জন্য উদীচী কেন্দ্রীয়ভাবে উদ্যোগ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দিয়েছে। সব সময় আমরা বিচার দাবি করছি। কিন্তু সেই দাবি বাস্তবায়নি হয়নি।এ প্রসঙ্গে যশোর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ইদ্রিস আলী বলেন, বর্তমানে মামলাটি উচ্চ আদালতে আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এই মামলার ২৩ আসামির মধ্যে ২ জন নিহত এবং একজন মারা গেছেন করেছেন। বাকিরা জামিনে রয়েছেন। তিনি এই মামলা নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তিনি আশাবাদী শিগগিরই উচ্চ আদালতে মামলাটির কার্যক্রম শুরু হবে। এদিকে, উদীচী ট্রাজেডি দিবস উপলক্ষে আজ (শনিবার) বিকেলে সাড়ে ৪টায় টাউন হল ময়দানে প্রতিবাদী গান, আলোচনা সভা ও শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মশাল প্রজ্বালন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এম ইদ্রিস আলী জানিয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকে উদীচী হত্যা মামলার রায়ের বিপক্ষে হাইকোর্টে আপিল ও মিস ফাইল করা হয়েছে। কোর্ট আপিল গ্রহন করে রুল ইস্যু করেছে। শুনানির পর্যায়ে আছে। অচিরেই মামলাটি হাইকোর্ট থেকে আপিল নিস্পত্তি হয়ে পুনরায় বিচারের জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতে আসবে। পুন বিচারের মাধ্যমে নিহত ও আহতদের পরিবার ন্যায় বিচার পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।