খুবির রেজিস্ট্রার থাকাকালে দুর্নীতি: ওএসডিতে থাকা যশোর বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ৭ কোটি টাকার চেক জালিয়াতির ঘটনায় অভিযুক্ত যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমির হোসেন পূর্ব কর্মস্থলের একটি দুর্নীতির ঘটনায় বিভাগীয় মামলায় পড়েছেন। এর অংশ হিসেবে আগামী ১০ মার্চ তাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশ নিতে হবে। এই শুনানি যৌতুক ও গ্রহণযোগ্য হলে তার দায়মুক্তি হতে পারে। না হলে বিভাগীয় মামলায় তাকে শাস্তির মুখে পড়তে হবে। এর আগে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৩-২০১৪ সালে রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত থাকার সময় আর্থিক অডিট আপত্তি ওঠে। আগামী ১০ মার্চ এর ব্যক্তিগত শুনানি হবে। প্রফেসর ড. মোল্লা আমির হোসেন যশোর শিক্ষা বোর্ডে চেয়ারম্যান থাকাকালীন গত বছর ৭ কোটির অধিক টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে লোপাটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যশোর অফিস যে মামলা করে তিনি তার ১ নং আসামি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রসহ বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়, ড. মোল্লা আমির হোসেন বিসিএস ক্যাডার থাকাকালীন শর্তসাপেক্ষে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) রেজিস্ট্রার পদে চাকরি নেন। শর্তগুলোর প্রথম দুটি হলো- প্রার্থিত পদে চাকরি করতে ওই সময়ের শিক্ষা ক্যাডার পদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে এবং কোনো লিয়েন বা ডেপুটেশন মঞ্জুর হবে না। ১২টি শর্ত দিয়ে খুবি ২০১৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ দেয়। সে মোতাবেক একই বছর ২৭ ফেব্রুয়ারি তিনি খুবিতে রেজিস্ট্রার হিসাবে যোগদান করেন ও ২০১৪ সালের ২৪ আগস্ট পর্যন্ত ওই পদে চাকরি করেন।
সূত্র মতে, মোল্লা আমির হোসেন খুবি রেজিস্ট্রার পদে যোগদানের বিষয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগদান করে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ইস্তফা পদটি প্রত্যাহার করার আবেদন করেন। সে মোতাবেক মন্ত্রণালয় ২০১৩ সালের ৩০ মে ইস্তফা পত্রটি প্রত্যাহার করে। এ প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন উপসচিব মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন চৌধুরী, স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে সিবিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে যোগদানের নির্দেশ দেয়। একই আদেশে ২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে পুনরায় যোগদান পর্যন্ত বিনা বেতনে অসাধারণ ছুটি মঞ্জুর করে। একই বছর তিনি শিক্ষা ক্যাডারে যোগদানের আবেদন করেন। একই সময় খুবিতে রেজিস্ট্রার পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় কীভাবে শিক্ষা ক্যাডারে যুক্ত হতে পারেন এই প্রশ্ন ওঠে। এ জাতীয় ঘটনায় তখন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দাখিল করা হয়। সে প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করে। খুবিতে চাকরির অবস্থায় তার ১০ মাসের বেতন ভাতা গ্রহণের সত্যতা পায় তদন্ত কমিটি। কমিটি সুপারিশ ও অডিট কমিটির আর্থিক আপত্তি থাকায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি হয়। নোটিশের প্রেক্ষিতে ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণে ড. মোল্লা আমির হোসেন সম্মত হলে আগস্ট ১০ মার্চ এই শুনানির দিন নির্ধারিত হয়। সূত্র জানায়, মোল্লা আমির খুবি থেকে ২০১৪ সালের ২৪ আগস্ট অব্যাহতি নিলেও ২০১৬ সালের ৩০ মে পর্যন্ত তাকে খুবি অব্যাহতি দেয়নি। সেখানে প্রশ্ন রয়েছে, এত কিছু গোপন করে তিনি কীভাবে ২০১৪ সালের ২৪ আগস্ট শিক্ষা ক্যাডারে চাকরি ফিরে পেলেন ? এসব কাজে জালিয়াতি রয়েছে বলে সূত্র দাবি করে। এ বিষয়ে বর্তমানে ঢাকার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে ওএসডি থাকা ড. মোল্লা আমির হোসেন টেলিফোনে লোকসমাজকে জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ই তাকে অনুমতি দেয়। আবার তারাই আপত্তি দিয়েছে। তিনি বলেন, এই ১০ মাস তার কর্মের মূল্যায়ন কেনো করা হবে না। কেনো আর্থিক অডিট আপত্তি থাকবে না ওই ১০ মাসের বেতন ভাতা ফেরত দিতে হবে ?
তিনি যশোর শিক্ষা বোর্ডের সচিব থাকাকালে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন আর্থিক দুর্নীতি অভিযোগ ওঠে, মামলা হয় এবং এক পর্যায়ে যশোর শিক্ষা বোর্ডের সচিব পদটি হারাতে হয়।
পরবর্তীতে যোগাযোগের মাধ্যমে যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যান হন। ২০২০ এর জানুয়ারি থেকে ২০২১ এর নভেম্বর পর্যন্ত এই পদে থাকলেও এখানে আর্থিক দুর্নীতি জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠে। এ সময় নানাবিধ অনিয়ম করায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত। এক পর্যায়ে ২০২১ সালের অক্টোবরে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ৭ কোটির অধিক টাকা লোপাটের ঘটনায় ৫ জনকে আসামি করে দুদক মামলা করে। ওই মামলায় ১ নং আসামি প্রফেসর ড. মোল্লা আমির হোসেন। দুদকের মামলাটি এখন তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে। ওই মামলার কারণে সারাদেশে ড. মোল্লা আমিরের দুর্নীতির খবর ছড়িয়ে পড়ে।