টেম্পারিং নকল ভেজাল বন্ধ হোক

0

দফায় দফায় মূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশজুড়ে যখন ভোজ্য তেলের কৃত্রিম সংকট শুরু হয়েছে তখন যশোরের বিভিন্ন বাজারে মূল্য টেম্পারিং করে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা লুটতে বহুবিধ জালিয়াতির সাথে এই টেম্পারিং যুক্ত করেছেন। গতকাল শনিবার প্রকাশিত দৈনিক লোকসমাজে এ সংক্রান্তে একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে। ‘মূল্য তালিকা টেম্পারিং করা সয়াবিন তেলে যশোরের বাজার সয়লাব : উদ্বিগ্ন ভোক্তারা’ সংবাদে বিস্তারিত শীর্ষক উল্লেখ করা হয়েছে।
সংবাদ প্রতিবেদক তথ্যের সত্যতা নিশ্চিতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বক্তব্য দিয়েছেন। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. ওয়ালিদ বিন হাসিব সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, তারা এই দুর্নীতি বন্ধে তৎপরতা চালাচ্ছেন। গত বুধবার খাজুরা ও বৃহস্পতিবার অভয়নগর বাজারে অভিযান চালিয়ে ৪ হাজার টাকা জরিমানা আদায়সহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। কাদের বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নিয়েছেন তা সংবাদে বলা হয়েছে আমরা এ সংক্রান্ত জালিয়াতি ও অভিযানের আরো কিছু খবর পত্র-পত্রিকা এবং টিভিতে দেখেছি। খোদ মৌলভী বাজারে জালিয়াতি ধরা পড়ার খবরও দেখেছি।
এসব খবরে আমরা যত না আশান্বিত হতে চাচ্ছি তার চেয়ে বেশি শঙ্কিত হয়ে পড়ছি। আমাদের শঙ্কার কারণ অনেক। আমাদের ৭৪ এর অভিজ্ঞতা রয়েছে। তখন দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির মূলে ছিল এ রকম অসাধু ব্যবসায়ীরা। তারা পণ্য সংকট সৃষ্টি করে সকাল-বিকেল মূল্য বাড়িয়ে চাল চাল, ডাল, লবণ, তেলসহ সব পণ্যের দাম ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যায়। সুযোগে ভেজাল ও পচা মাল বাজারে ছেড়ে দেয়। অর্ধাহারে অনাহারের মাঝে ভেজাল ও পচা মাল দুর্ভিক্ষ অবস্থাকে ভয়াবহ অবস্থায় নিয়ে যায়। অনাহার অসুস্থতায় বেড়ে যায় মৃত্যুর হার। পরবর্তী ঘটনা সবারই জানা, আমরা এবারও ব্যবসায়ীদের মাঝে তেমন অস্থিরতা লক্ষ্য করছি। রাতারাতি ধনী হবার নেশা পেয়ে বসেছে অধিকাংশের মধ্যে। মূল্য টেম্পারিং তারই অংশ।
আমরা এই মূল্য টেম্পারিং নিয়ে যতটা না শঙ্কিত তার চেয়ে বেশি শঙ্কিত ভেজাল নকল ও মেয়াদ উত্তীর্ণ অখাদ্য নিয়ে। কারণ আমাদের জানা আছে যে, বাজারে পোড়া মোবিল থেকে তৈরি করা ভোজ্যতেল আটক হয়েছে। বড় বড় কোম্পানির লেবেল লাগানো তেল ভেজাল ও মেয়াদ শেষের কারণে বিক্রয় নিষিদ্ধ হয়েছে। বাজার থেকে সে সব তেল তুলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছিল। কিছু মাল তুলে নিলেও বেশিরভাগ মাল থেকেই যায়। চলমান দুমর্ূূল্যের বাজারে ওইসব ব্যবসায়ীরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পিছিয়ে থাকবেন এমনটা মনে করার কোনো যুক্তি নেই। আমাদের ধারণা, বাজারে এখনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা হলে ব্যাপক নকল ভেজাল পণ্য মিলবে। আমরা আশা করবো, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সবগুলো দপ্তর এ বিষয়ে অভিযান চালাবে। তারা নিশ্চয় মনে রাখবে, এই নকল ভেজাল ও মেয়াদ উত্তীর্ণ তেলসহ খাদ্যসামগ্রী ব্যাপক মানুষের জীবন কেড়ে নিতে পারে। যা কারো কাম্য নয়।