আটককৃতদের অনৈতিক কাজের কথা স্বীকার: মণিরামপুরে বিধবা জাহানারার রহস্যজনক মৃত্যুর জট খোলেনি

0

মীর মঈন হোসেন মুসা ॥ যশোরের মণিরামপুর উপজেলার জয়পুর গ্রামের বিধবা জাহানারা বেগমের রহস্যজনক মৃত্যুর জট খোলেনি এখনো। যদিও এ বিষয়ে তার ছেলে আলাউদ্দিন অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তবে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বলছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। অপরদিকে হত্যা মামলায় আটক সন্দেহভাজন ৩ আসামি আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জাহানারা বেগমের সাথে তাদের অনৈতিক কর্মকা-ের কথা স্বীকার করেছেন। তবে কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে সেই বিষয়ে তারা অবগত নন বলে দাবি করছেন।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হাতে আটক সন্দেহভাজন ৩ আসামি হলেন-মনিরামপুর উপজেলার সমসকাঠি গ্রামের মৃত শাহাজাহান আলীর শেখের ছেলে মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে লাল্টু শেখ, ধলিগাতি গ্রামের জিন্নাত আলী মোল্যার ছেলে মনিরুল ইসলাম ও মোতালেব মোড়লের ছেলে আলতাফ হোসেন বাবু।
গত ২৬ ফেব্রয়ারি মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে লাল্টু শেখ আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে বলেছেন, ‘তিনি আর মনিরুল রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। আলতাফ হোসেন বাবু এলাকায় মেশিন (স্যালোমেশিন) চালান। বাবু তাকে বললেন, একটা নারী (অসৎ কাজের জন্য) নিয়ে আয়, টাকা লাগলে দেব। এ কথা শুনে লাল্টু শেখ এলাকার এক ভাবি (জাহানারা বেগম) বললেন। তিনি তাকে একথাও বললেন যে, দুজনে তার অনৈতিক কাজ করবেন। এ জন্য ভাবি ১ হাজার টাকা দাবি করলেন এবং বললেন, ২/৩ জন এলেও কোনো সমস্যা নেই। ঘটনার দিন গত ২২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আলতাফ হোসেন বাবু স্থানীয় বাজার থেকে ভাবিকে তার স্যালোমেশিন ঘরে নিয়ে যান। সেখানে তার সাথে প্রথম অনৈতিক কাজ করেন আলতাফ হোসেন বাবু। এরপর লাল্টু শেখ ও মনিরুল স্যালোমেশিন ঘরে গিয়ে ভাবির সাথে অনৈতিক কাজ করেন। কিন্তু তখনই আলতাফ হোসেন বাবুর বউ সেখানে চলে আসেন। এ সময় মনিরুল তার পা জড়িয়ে ধরে কাউকে এ ঘটনা বলতে অনুরোধ জানান। তারপরও আলতাফ হোসেন বাবুর বউ বাইরে থেকে স্যালোমেশিন ঘরে ছিটকানি লাগিয়ে দেন। এরপর মনিরুল ঘরের ছাউনির টালি খুলে বাইরে বের হয়ে আসেন। বের হওয়ার পর মনিরুল ছিটকানি খুলে দিলে লাল্টু শেখ ও ভাবি (জাহানারা বেগম) ঘর থেকে বের হয়ে যে যার মত দৌড় দিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান। ভাবি মাঠের যেদিকে দৌড় দেন ওইদিকে তার বাপের বাড়ি। এর ২০/২৫ মিনিট পর লাল্টু শেখ খোঁজখবর নিতে ভাবিকে (জাহানারা বেগম) মোবাইল ফোন করেন। কিন্তু তার ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। পরদিন সকালে লাল্টু শেখ জানতে পারেন, ভাবি (জাহানারা বেগম) মারা গেছেন। এ খবর পেয়ে লাল্টু শেখও তাকে দেখতে গিয়েছিলেন।’ এদিকে আটক মনিরুল ইসলাম ও আলতাফ হোসেন বাবুও ১৬৪ ধারায় আদালতে একই ধরনের জবানবন্দিতে জাহানারা বেগমের সাথে অনৈতিক কর্মকা-ের কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু তারা জাহানারা বেগমের মৃত্যুর বিষয়ে কোনোকিছু বলেননি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র ইনসপেক্টর হিরন্ময় সরকার জানান, ওই নারীর (জাহানারা বেগম) হাতের একটি স্থানে জখমের চিহ্ন রয়েছে। মুখেও গ্যাজলা ছিলো। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তিনি আরও বলেন, আটককৃতরা অনৈতিক কর্মকা-ের কথা বললেও তার মৃত্যুতে তাদের অবহেলা ছিলো।
উল্লেখ্য, জাহানারা বেগম মনিরামপুর উপজেলার জয়পুর গ্রামের মৃত লুৎফর রহমানের স্ত্রী। গত ২২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তিনি পিতার বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। পরদিন সকালে উপজেলার ধুলিগাতি গ্রামে রাস্তার পাশের ধানক্ষেতে তার লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় জাহানারা বেগমের ছেলে আলাউদ্দিন তার মাকে হত্যার অভিযোগ এনে অজ্ঞাতানামাদের আসামি করে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মনিরামপুর থানায় একটি মামলা করেন। পরে পিবিআই এ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে উল্লিখিত ৩ জনকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।