মাদকবিরোধী অভিযান প্রয়োজন

0

আবারও দেশে মাদকের বিস্তার এক ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। শহরাঞ্চলে তো বটেই, গ্রামগঞ্জে, এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মাদক এখন খুবই সহজলভ্য হয়ে গেছে। তরুণ-যুবাদের পাশাপাশি এখন কিশোর-কিশোরীরাও ক্রমে বেশি করে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালিয়েও নিয়ন্ত্রণে তেমন সফলতা আসেনি। সীমান্তে কড়াকড়ি ও শহর এবং গ্রামের আস্তানায় জোরালো করা প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যেকোনো উপায়ে হোক মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তা না হলে দেশের সব উন্নয়নপ্রক্রিয়া থমকে যাবে। সমাজে এক ভয়ংকর পরিণতি নেমে আসবে। এই অবস্থায় মাদক নিয়ন্ত্রণ অভিযানকে আরো কার্যকর করতে সরকারকে ‘সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা’ প্রণয়ন করতে হবে। সম্প্রতি রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এ সংক্রান্ত একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমে জানা গেছে। এতে মাদকসংক্রান্ত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণে সমাজের সব স্তরের মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা, মাদকের চাহিদা হ্রাস এবং মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেন বক্তারা। অপরাধবিজ্ঞানীরা মনে করেন, মাদক বহু অপরাধের সূতিকাগার। শুধু মাদকের কারণে আজ বহু দেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বাংলাদেশেও আমরা মাদকের বহুমুখী কুফল ক্রমেই বেশি করে প্রত্যক্ষ করছি। দেশে মাদকাসক্ত যেমন বাড়ছে, তেমনি লাভজনক মাদক বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে নানা ধরনের অপরাধচক্র। রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, আমলা, এমনকি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীরও অনেকে জড়িয়ে যাচ্ছেন মাদক বাণিজ্যে। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, অনেক এলাকায় প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় মাদকের রীতিমতো হাট বসে। মাদক এত সহজলভ্য হওয়ায় করোনায় স্থবির স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও ক্রমেই বেশি করে আসক্ত হয়ে পড়ছে। ফলে দেশব্যাপী অভিভাবকরা এক ধরনের আতঙ্কে ভুগছেন। প্রশাসন অবশ্য মাঝে মাঝে অভিযান চালায়। এতে কিছু অপরাধী ধরা পড়লেও মাদকের বিস্তার খুব একটা কমেনি। তাই, মাদক নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামা জরুরি হয়ে উঠেছে। মাদকের অনুপ্রবেশ রোধ করা, মাদক পরিবহন, কেনাবেচা, সংরক্ষণ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, অর্থলগ্নীকরণ, পৃষ্ঠপোষকতাসহ সংশ্লিষ্ট সব অপরাধ দমনে আরো কঠোর হতে হবে। সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মসজিদের ইমাম, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, এনজিও, সামাজিক সংগঠন, সুধীসমাজের প্রতিনিধিসহ নানা স্তরের মানুষকে এই প্রতিরোধে সম্পৃক্ত করতে হবে। অপরাধীদের বিচারকাজ দ্রুততর করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যাপক ভিত্তিতে ডোপ টেস্ট চালু করার মাধ্যমে মাদকাসক্তদের চিহ্নিত করতে হবে। তাদের উপযুক্ত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
মাদক শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেই এক বড় সমস্যা। জাতিসংঘের তথ্য মতে, বছরে প্রায় ছয় লাখ মানুষের মৃত্যু হয় মাদকাসক্তির কারণে। বাংলাদেশ মাদকের একটি আন্তর্জাতিক রুটের অংশ। অতীতে কোকেন, হেরোইনসহ অন্যান্য মাদকের অনেক বড় বড় চালানও ধরা পড়েছে। তাই মাদক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশকে যথেষ্ট শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা চাই না আমাদের তরুণসমাজ ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাক। এ কারণে সরকারের কাছে আমাদের পরামর্শ সততা ও নিরপেক্ষতার সাথে শহর-গ্রাম সর্বত্র অভিযান চালাতে হবে। মাদক ব্যবসায়ী সে যে স্তরের হোক না কেন তাকে আইনের ফাঁক দিয়ে বাঁচার সুযোগ দেয়া ঠিক হবে না।