তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে যে হুঁশিয়ারি দিলেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন যে, ইউক্রেনে আগ্রাসনের শাস্তি হিসেবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের একমাত্র বিকল্প তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে সেনা পাঠিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করতে চায় না। ওয়াশিংটন এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়ার বিরুদ্ধে দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা জারির পর এই মন্তব্য করেন বাইডেন। এক সপ্তাহ ধরে প্রতিবেশী ইউক্রেনে আগ্রাসন চালিয়ে আসছে রুশ সামরিক বাহিনী; যার জেরে ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে উপর্যুপরি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে।
গতকাল বুধবার সেই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কথা বলার সময় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, ‘যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়, তাহলে এতে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার হবে এবং সেটি হবে ধ্বংসাত্মক’। এসময় লাভরভ বলেন, ইউক্রেন পারমাণবিক অস্ত্রধারী হয়ে উঠলে তা রাশিয়াকে ‘প্রকৃত বিপদের’ সম্মুখীন করবে। যে কারণে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে রাশিয়ার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক, কর্মকর্তা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমা বিশ্ব। এছাড়া পশ্চিমের অনেক দেশ ইতোমধ্যে রাশিয়ার জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা করেছে। ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতির ব্যাপারে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ বলেন, কিয়েভের সাথে দ্বিতীয় দফার বৈঠকের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে মস্কো। কিন্তু ওয়াশিংটনের নির্দেশে ইউক্রেন দূরে চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা দ্বিতীয় দফার আলোচনার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু ইউক্রেনীয় পক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশে সময়ক্ষেপণ করছে। এর আগে, রুশ প্রেসিডেন্টের সহযোগী ভøাদিমির মেডিনস্কি ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় প্রতিনিধি দলের প্রধান থাকবেন বলে নিশ্চিত করেন দিমিত্রি পেশকভ। গত সোমবার বেলারুশের গোমেল অঞ্চলে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রথম দফার বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও কোনো ধরনের যুদ্ধ বিরতি চুক্তিতে পৌঁছানো যায়নি। তবে সংকটের সমাধানে দ্বিতীয় দফা আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে উভয় পক্ষ।
ইউক্রেন যুদ্ধের সর্বশেষ খবর
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছে যে, ইউক্রেনের খারসন শহর তারা দখল করে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে রাশিয়ার সৈন্যরা পূর্ণ কর্তৃত্ব স্থাপন করতে পেরেছে কিনা সেটি এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। খারসন অঞ্চলের গভর্নর বলেছেন, রাশিয়ার সৈন্যরা সে এলাকা ঘিরে রেখেছে। মেয়র ইগোর কলিখায়েভ বলেছেন, আমরা এখনও ইউক্রেন। এখনও শক্ত অবস্থানে রয়েছি। প্রায় ৩ লাখ মানুষের এই শহর যদি রাশিয়ার সৈন্যরা দখলে নেয়, তাহলে সেটি হবে তাদের জন্য বড় ধরনের এক বিজয়। ইউক্রেনে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার সৈন্যদের হাতে পতন হওয়া সবচেয়ে বড় শহর হবে এটি। সামরিক বাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিও হবে। এই শহর থেকে উপকূল বরাবর আরও ভেতরে এবং পশ্চিমের আরেক বৃহৎ বন্দরনগরী ওডেসার সাথে যোগাযোগ স্থাপিত হবে। কৃষ্ণ সাগরের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর এবং একটি শিল্পকেন্দ্র খারসন। ইউক্রেনের দ্বিতীয়বৃহত্তম শহর খারকিভে রাশিয়ার বোমা হামলায়অন্তত ২১জন নিহত হয়েছে। খারকিভে চতুর্মুখী আক্রমণ চালিয়েছে রুশ সৈন্যরা। এই শহরের সরকারি-বেসরকারি ভবনের পাশাপাশি বেসামরিক এলাকার আবাসিক ভবনেও হামলা হয়েছে।
টানা তৃতীয় দিনের মতো মস্কো স্টক এক্সচেঞ্জ বন্ধ ছিল। রাশিয়ার উপর পশ্চিমাদের নানা ধরণের নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির মুদ্র রুবলের ব্যাপক দরপতন হয়েছে। সে দরপতন ঠেকানোর জন্য স্টক এক্সচেঞ্জ বন্ধ রাখা হয়। জ্বালানি তেলের দাম এখন ব্যারেল প্রতি বৃদ্ধি পেয়ে ১১৩ ডলার হয়েছে। সাত বছরের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ। রাশিয়ার ক্রেতারা ওয়েবসাইট এবং অ্যাপের মাধ্যমে নাইকির পণ্য অর্ডার করতে পারছেন না। ইউক্রেনে হামলার জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান নাইকি রাশিয়াতে তাদের পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। বেলারুশ তাদের সীমান্তে সৈন্য সংখ্যা দ্বিগুণ করার ঘোষণা দিয়েছে। বেলারুশ সরকার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের বেশ ঘনিষ্ঠ। ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেছেন, ইউক্রেন দখল করা রাশিয়ার জন্য ‘খুব কঠিন’ হবে। বিশাল রুশ সেনা বহর ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের সীমানায় পৌঁছে গেছে। রুশ সেনা বহরকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে এ বার ড্রোন নিয়ে হামলা শুরু করেছে ইউক্রেন। আর এই হামলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে বের‌্যাকটার টিবি-২ নামে অত্যাধুনিক এবং ঘাতক ড্রোন। ২০২০ সালের নভেম্বরে আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে এই ড্রোন ব্যবহার করে আজারবাইজান তাদের সামরিকবাহিনীকে তছনছ করে দিয়েছিল। ওই যুদ্ধে দারুণ সাফল্য এনে দিয়েছিল এই ড্রোন। কিন্তু এবার প্রতিপক্ষ রাশিয়া। যাদের বিপুল সামরিক ক্ষমতা। অত্যাধুনিক সমরসজ্জা। ফলে প্রেক্ষিতটাও অনেকটাই আলাদা।