স্মরণে মার্চ’৭১

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্র কাননে বাংলার স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল সেই সূর্য উদয় হল ১৯৭১ সালের মার্চে। উত্তাল সেই মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ইতিহাসে অগ্নিঝরা, রক্তস্নাত ও বেদনাবিধুর। বীর বাঙালি বৈষম্য-বঞ্চনা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে এই মাসে। শুরু হয় স্বাধীনতার জন্য লড়াই। রক্তক্ষয়ী সেই ৯ মাসের লড়াইয়ে আত্মোৎসর্গকারী বীর মুক্তিযোদ্ধারা দখলদার পাকিস্তানিদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেই বিজয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর জন্ম হয় স্বাধীন বাংলাদেশের। পূর্ববঙ্গ ও পূর্ব পাকিস্তান নামের ভূ-খ-টি হল বাঙালির একমাত্র স্বাধীন দেশ বাংলাদেশ। যাদের জাতিয়তা বাংলাদেশি। বৃটিশ দখলদারদের দেশ ভাগ নীতির ফলে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত হয় পাকিস্তান। ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত ভারত ও পাকিস্তানের মাঝে ভাগ হয়ে যায় বাংলা জাতি। পশ্চিমবঙ্গ নামের স্থানের বাঙালিরা হিন্দু ধর্মের আধিক্যের ভিত্তিতে পড়ে ভারতে ভাগে। আর পূর্ববঙ্গের বাঙালিরা মুসলিম আধিক্যে পড়ে পাকিস্তানের পক্ষে। পূর্ববঙ্গ নাম হয়ে যায় পূর্ব পাকিস্তান। এক দেশ কিন্তু দুই প্রান্তে; মাঝে ১২শ মাইলের বিভক্তি বা দূরত্ব। মাঝের স্থানটিতে ভারত। জন্মের শুরু থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের নীতি নির্ধারক পাঞ্জাবীদের পূর্ব পাকিস্তানের উপর আধিপত্য বিস্তারের অপচেষ্টার নানান ঘটনা দেখা যায় ইতিহাসে। এক রাষ্ট্র, এক নেতা ও এক পার্টি নীতিতে দেশ শাসন করতে শুরু করে পাকশাসকরা। পূর্বপাকিস্তানের মানুষের স্বার্থ চরমভাবে নিষ্পেষিত হতে লাগলো। যা জন্ম দিলো অসন্তোষের। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবিতে প্রথম বহিপ্রকাশ প্রকাশ ঘটে সেই অসন্তুষ্টির। এরপর একে একে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে ক্রমশ পূর্বপাকিস্তানের ভাষা হয়ে ওঠে সংগ্রামী। প্রতিবাদী স্বর যোগ হয় বহু কণ্ঠে। তা নিয়ন্ত্রণে সামরিক আইন জারি করে পাক শাসকরা। সামরিক শাসনের প্রতিবাদে ১৯৬২ ও ১৯৬৯ সালে আন্দোলনে পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধীকার দাবি তীব্র হয়। এরপর ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ সমুচিত জবাব দেয়। শাসক দলকে পরাজিত করার মাধ্যমে তারা জানিয়ে দেয় এ অংশের মানুষের ঐক্যবদ্ধতা অনেক কিছু করতে পারে। কিন্তু নির্বাচনের ফল দেখে পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিকরা শংকিত হয়ে পড়েন। জাতীয় পরিষদের একক সংখ্যা গরিষ্ঠ অর্জনকারী পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা ছাড়তে তারা সময় ক্ষেপণ করতে থাকে। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিকরা জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। কিন্তু এর আগে আকস্মিকভাবে ১ মার্চ ওই অধিবেশন স্থগিত করা হয়। ক্ষোভে ফুসে ওঠেন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। তাদের কাছে পরিস্কার হয়ে ওঠে পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানকে শুধু বঞ্চিতই করবে, তাই তাকে ছাড়তে হবে, নিজেদেরকে নিজেদের মতো চলতে হবে। ১ মার্চ থেকেই ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজপথ। ক্রমশ তা রূপ নেয় স্বাধীনতার সংগ্রামে।