প্রসঙ্গ: বই নেই কিন্তু অ্যাসাইনমেন্ট!

0

শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত দৈনিক লোকসমাজের প্রথম পাতায় একটি সংবাদের শিরোনাম ছিল ‘বই নেই কিন্তু অ্যাসাইিনমেন্ট’! প্রতিবেদক তহীদ মনি মূলত ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন। শিক্ষা কর্মকর্তা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বক্তব্যের সমন্বয়ে প্রতিবেদনটি জানিয়েছেন। ফলে, পাঠকের কাছে নিজের জানা বাস্তবতা ফুটে উঠেছে। নতুন বছরের দু’মাস শেষ হতে চললো। অথচ, শিক্ষার্থীদের হাতে বই নেই। যে বই বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়ার কথা। সে বই দু’মাসেও না পৌঁছানো শুধু দুঃখজনক নয়, রীতিমতো ক্ষতিকর। কোমলমতির শিশুদের মেধা বিকাশের বদলে বইয়ের প্রতি অনাগ্রহ ও পাঠ অভ্যাসে অনাভ্যস্ততা ক্ষতির মাত্রা মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে ১৪টি বইয়ের বদলে আইসিটির একটি মাত্র বই সরবরাহের পর দুই মাসে আর কোনো বই সরবরাহ করতে না পারা সরকারের ব্যর্থতা না-কি সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা তা খুঁজে দেখা প্রয়োজন।
প্রতিবেদক লিখেছেন, বই সরবরাহ ছাড়াই শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দিচ্ছেন। যা তারা পড়েনি। ফলে, তাদের অ্যাসাইনমেন্ট লিখতে হচ্ছে মোবাইল দেখে। যা কার্যত নকল। একদিকে না পড়া, অন্যদিকে নকল করে লেখার অভ্যাস শিশু শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিকের ভীতটা কতটা নড়বড়ে করবে তা সহজেই অনুমেয়। খোদ শিক্ষকরাই এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, করোনার কারণে টানা দু’বছর শিক্ষা ব্যবস্থায় যে সংকট শুরু হয়েছে তার কারণেই বই সরবরাহ সম্ভব হয়নি। শুধু ষষ্ঠ শ্রেণি নয়, অন্য সব ক্লাসেও কম-বেশি সমস্যা হচ্ছে। অ্যাসাইনমেন্ট কোনো শিক্ষা কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকরা। তারা বলেন, এটা নকলের শিক্ষা, এতে সন্তানদের ক্ষতি হচ্ছে। তারা বই সরবরাহ ও সরাসরি ক্লাস চালুর দাবি জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে আমরা পূর্বে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছি। সেখানে গ্রাম পর্যায়ের অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, গ্রামের ৬০ ভাগ শিক্ষার্থীর ক্লাস করার মতো মোবাইল নেই। অনেকের নেট কেনার টাকা থাকে না। আবার স্কুলে না পড়ার কারণে অনেকেই মোবাইলের পড়া বুঝতে পারে না। ফলে, তারা আগ্রহ হারায়। আবার অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেছেন, শিশুদের হাতে মোবাইলের কারণে পড়ার চেয়ে খারাপ।
শিক্ষাটা যেন বেশি হচ্ছে। শিশু-কিশোর অপরাধ এবং আত্মহত্যা বৃদ্ধির পেছনে এর ভূমিকা রয়েছে। আমরা এ অভিযোগ অযৌক্তিক মনে করি না। বিষয়টি সরকারের হর্তা-কর্তাদের ভেবে দেখা জরুরি।
আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তাদের স্মরণ করাতে চাই, আজ যারা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে তারা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়েনি। করোনায় শিক্ষাঙ্গণ বন্ধের কারণে এদের প্রতিযোগিতামূলক সমাপনী ও পিইসি পরীক্ষা দিতে হয়নি। ফলে, তারা পঞ্চম শ্রেণির গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা বঞ্চিত হয়েছে। না পড়েই প্রমোশনের কারণে ষষ্ঠ শ্রেণির এক অন্ধকার জগতের মতো লাগছে। বইহীন দুই মাস তাই অনেক বড় ক্ষতির কারণ হয়েছে শিক্ষার্থীদের, বই নিয়ে অনিশ্চয়তা তাদের হতাশাগ্রস্ত করছে। নকল করে শিক্ষার ক্ষতি ও হতাশা শিশুদের ভীতটা নষ্ট করে দিতে পারে।
আমরা সন্তানদের এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ মোটেই কামনা করি না। কেউই কামনা করতে পারে না। আমরা সন্তানদের সুন্দর জীবনের জন্য অবিলম্বে সকল বই সরবরাহ ও নিয়মিত ক্লাস চালুর দাবি জানাই।