ব্যাটিং শিল্পী লিটনে বাংলাদেশের অন্যরকম ‘সেঞ্চুরি’

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ‘অ্যান্ড লিটন দাস ইজ পেইন্টিং আ মোনালিসা হিয়ার!’ তার ব্যাটিং ইয়ান বিশপের চোখে এতোটাই মুগ্ধতা ছড়িয়েছিল যে মোনালিসা চিত্রকর্মের সঙ্গে তুলনা করতে বাধ্য করেছিল। মাধুর্যতা, সৌন্দর্য, গভীরতা মিলিয়ে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির অমর সৃষ্টি মোনালিসা। লিটনের ব্যাটিংয়ে যেন হুবহু সেই চিত্রই ফুটে উঠে। ২২ গজের এই ব্যাটিং শিল্পীর তুলির আঁচড় ছড়ানো সেঞ্চুরিতে আজ আনন্দিত বাংলাদেশ। সঙ্গে মুশফিকের অনবদ্য হাফ সেঞ্চুরি রঙিন ক্যানভাসকে দিয়েছে পূর্ণতা। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩০৬ রানের পাহাড় গড়ে বাংলাদেশ। কেবল রহমত শাহ ও নাজিবুল্লাহ জাদরান একটু চোখ রাঙিয়েছিলেন। ওই জুটিটা ভাঙার পর বাংলাদেশকে জয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়নি। ২১৮ রানে আটকে ‍দিয়ে ৮৮ রানের জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করেছে তামিম-সাকিবরা। এই জয়ে অন্যরকম এক ‘সেঞ্চুরিও’ হয়ে গেল বাংলাদেশের। আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগে প্রথম দল হিসেবে বাংলাদেশের পয়েন্ট ১০০ হলো। পাশাপাশি এই প্রতিযোগিতায় ইংল্যান্ডকে টপকে শীর্ষে উঠে এসেছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। ১৪ ম্যাচে ১০ জয়ে বাংলাদেশের পয়েন্ট কাঁটায় কাঁটায় ১০০। ১৫ ম্যাচে ৯ জয়ে ইংল্যান্ডের পয়েন্ট এখন ৯৫।
মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে কখনো পথ ভোলেন না লিটন। মুহুর্তগুলো হয়তো খুব উপভোগ করেন। তাইতো নির্ভীক লিটনের দেখা মিলে বারবার। ৪৯ রানে দাঁড়িয়ে মোহম্মদ নবীকে পুল করে চার হাঁকান চোখের পলকে। আবার ৯৮ থেকে ১০২ রানে পৌঁছান রশিদকে দৃষ্টিনন্দন ইনসাইড আউট খেলে। জানিয়ে রাখা ভালো, নিজের খেলা সপ্তম বল পয়েন্ট দিয়ে চার হাঁকিয়েই লিটন খুলেছিলেন রানের খাতা। এরকম শুধু ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি পাওয়ার ম্যাচেই হয়নি। ক্যারিয়ার সেরা ১৭৬ রানের ইনিংস খেলার পথে পঞ্চাশ, একশ, দেড়শ পেরুতো মেরেছিলেন চার, চার ও ছক্কা। তামিম ও সাকিব দ্রুত সাজঘরে ফেরার পর দলের হাল ধরেন লিটন ও মুশফিক। লিটন শুরুতে সময় নিলেও মুশফিক ছিলেন ধ্রুপদী। আফগানিস্তানের বোলারদের কোনো সুযোগই দেননি। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে লিটন ফেরেন স্বরূপে। এরপর তাদের আটকাতে পারেনি আফগানিস্তান। তৃতীয় উইকেটে ২০২ রানের জুটি গড়েন তারা- যা এই উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। এর আগে ১৭৮ রান করেছিলেন তামিম ও মুশফিক। ১৩৬ রানে লিটন যখন সাজঘরে ফেরেন তখন মুশফিক ৮৬ রানে ব্যাটিংয়ে। সঙ্গী হারানোর ঠিক পরের বলেই মুশফিক পথ ভোলেন আপারকাট শটে। দুজনকে আউট করে বাঁহাতি পেসার ফরিদ তখন সপ্তম স্বর্গে। ১২৬ বলে ১৬ চার ও ২ ছক্কায় ১৩৬ করেন লিটন। মুশফিক ৯৩ বলে ৯ চারে করেন ৮৬ রান। এই ইনিংস খেলার পথে মুশফিক ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে রান তোলায় দুইয়ে উঠে এসেছেন। ২২৯ ম্যাচে মুশফিকের রান ৬৬৭০। পেছনে ফেলা সাকিবের রান ৬৬৩০। ৭৬৮৬ রান নিয়ে শীর্ষে আছেন তামিম ইকবাল। তাদের ফেরার পর দলের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাটিং করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ। শেষ ৪ ওভারে মাত্র একটি বাউন্ডারি পেয়েছে বাংলাদেশ। বোলিংয়েও বাংলাদেশ ছিল নিয়ন্ত্রিত। শুরুতে আফিফের সরাসরি থ্রোতে রান আউট রিয়াজ হাসান। এরপর হাশমতউল্লাহ ও আজমতউল্লাহ দ্রুতই ফেরেন সাজঘরে। চতুর্থ উইকেটে নাজিবুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে রহমত শাহ লড়াই করেন। ৯০ বলে ৮৯ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে চোখ রাঙান তারা। কিন্তু মধ্য ওভারে বোলিংয়ে ফিরে দ্রুতগতির বোলার তাসকিন এই দুই সেট ব্যাটসম্যানকে ফেরালে জয় দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। প্রথমে রহমত শাহকে বোল্ড করেন ৫২ রানে। এরপর নাজিবুল্লাহকে উইকেটের পেছনে তালুবন্দি করান লাফিয়ে উঠা বলে। পরবর্তীতে নবীর ৩২ ও রশিদ খানের ২৯ রান দলের পরাজয়ের ব্যবধান কমায় মাত্র। বল হাতে তাসকিন ও সাকিব ২টি করে উইকেট পেয়েছেন। মোস্তাফিজ, শরিফুল, মিরাজ, মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ ১টি করে উইকেট নিয়ে রেখেছেন অবদান। এক ম্যাচ হাতে রেখে বাংলাদেশ নিশ্চিত করেছে ২৯তম সিরিজ জয়। এবার হোয়াইটওয়াশের অপেক্ষা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩০৬/৪ (লিটন ১৩৬, মুশফিক ৮৬; ফরিদ ২/৫৬)।
আফগানিস্তান: ৪৫.১ ওভারে ২১৮/১০ ( নাজিবুল্লাহ ৫৪, শাহ ৫২; তাসকিন ২/৩১, সাকিব ২/৩৮)।
ফল: বাংলাদেশ ৮৮ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: লিটন কুমার দাস।
সিরিজ: বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে জয়ী।