একুশের চেতনায় উজ্জীবিত হোক হৃদয়

0

আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। শোকাবহ, গৌরবোজ্জ্বল, অহঙ্কারে মহিমান্বিত দিন আজ। রক্ত দিয়ে বাংলা ভাষার মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় পৃথিবীর অদ্বিতীয় অনন্য ইতিহাসের আজ ৭০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। আজ মাতৃভাষা রক্ষায় বুকের রক্ত ও জীবন দেয়ার দিন। জীবনের বিনিময়ে বিশ্বময় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি অর্জনের দিন। সাহস, প্রত্যয় আর উদ্দীপনায় সব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে আজ সামনে এগিয়ে যাওয়ার দিন। একুশ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি মহাসচিব পৃথক বাণীতে শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। যশোরে এবারও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন হচ্ছে যশোর এমএম কলেজের ঐতিহাসিক শহীদ মিনার এবং গরিবশাহ সড়কের সড়ক দ্বীপে পৌরসভা নির্মিত নতুন শহীদ মিনারে। এটাকে অনেকে দাবি করছেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বলে। দু’বছর যাবত জেলা ও পুলিশ প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগ নতুন এই মিনারে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন নিজ নিজ পছন্দের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। এবারও তাই হচ্ছে। এ নিয়ে চাপা ক্ষোভও রয়েছে বিভিন্ন স্তরে।
মহান শহীদ দিবসের সূচনা হয় ১২টা ১ মিনিটে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে কোটি কোটি বাঙালী আপন আপন কন্ঠ গেয়ে উঠে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি…’। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া এই গানের মধুর সুরে বিশ্ববাসী পালন করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আর বাংলাদেশের রাজধানী থেকে সর্বত্র পালিত হয় ২১শে শোক ও বিজয়ের আনন্দধারার অমর একুশ। শহীদ মিনার অভিমুখে নগ্নপায়ে যায় ফুলবাহী মিছিল। উত্তর দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম সব পথ মিশে যায় শহীদ মিনারে। এবারও ব্যতিক্রম হচ্ছে না। তবে করোনা মহামারীর কারণে এ বছরও ফুল নিয়ে বেদীতে যেতে অনুমতি আছে মাত্র পাঁচজনের। স্বাস্থ্যবিধি মানতে সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত আবেগের ঢেউ কেউ ঠেকাতে পারেনি, এবারও পারবে না।
একুশ আজ বিশ্ব সভ্যতা ও ঐতিহ্যেরও অংশ। বাংলাদেশের বাঙালী জাতির প্রতিবাদ, বিদ্রোহ, রক্ত ও জীবন উৎসর্গ করা সংগ্রামের দিনটিকে বিশ্ববাসী তাদের মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করছে। এ অনুভূতি, উপলব্ধি একুশের প্রতি জাতির আবেগকে করে আরও প্রসারিত; শ্রদ্ধা ও প্রীতিকে করে গভীরতর। উজ্জীবিত করে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আরও সাহসী ও শাণিত হতে। আসলে একুশ শুধু চেতনা নয়, একুশ একটি শিক্ষা। এ শিক্ষা হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার শিক্ষা। এ শিক্ষা অধিকার ও অস্তিত্বের জন্য আমৃত্যু সংগ্রাম করার শিক্ষা। স্বৈরাচারের কবল থেকে গণতন্ত্র ছিনিয়ে আনার শিক্ষা। মূলত একুশ হচ্ছে, একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীন জাতি হিসেবে বেঁচে থাকার মূলমন্ত্র, মূল প্রেরণা। আমাদের বিশ্বাস, স্বাধীনভাবে কথা বলা ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতি এখন যে দীর্ঘ সংগ্রাম করছে তার পিছনে রয়েছে একুশেরই শিক্ষা। আমরা এও বিশ্বাস করি একুশের শিক্ষা ও চেতনা অমর। এ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কেউ লড়াই করলে তার বিজয় অবধারিত। এ কারণে চলমান আন্দোলনে জনতার বিজয় হবে বলেই আমরা আশাবাদী।
আজ ভাষা শহীদদের স্মরণে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দোয়া মাহফিল, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ ও রেডিও, টিভি চ্যানেলগুলো দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করেছে লোকসমাজও শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে নিজস্ব ব্যবস্থায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। শ্রদ্ধা নিবেদন করছে মায়ের ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার জন্য জীবন দেয়া বরকত, রফিক, সালাম, জব্বারসহ নাম না জানা সব শহীদদের প্রতি।