এ মৃত্যু থামবে কবে?

0

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হারে বাংলাদেশ এখন শীর্ষে। গোটা বিশ্বে কেন শীর্ষে তা যেমন আলোচিত, তেমনি আলোচিত, তেমনি আলোচিত মর্মান্তিক ঘটনাগুলো। বাংলাদেশে প্রায় দিন খবর হয়, এক পরিবারের দুই থেকে ৬ জন নিহত। সর্বত্র শোকের ছায়া, শোকে নিথর স্বজনরা। কোনো কোনো পত্রিকা এমনভাবে খবরের চতুর্দিক উপস্থাপন করে যে, অচেনা পাঠকের চোখও ভারী হয়ে যায়। আসলে ঘটনাগুলো এমন মর্মান্তিক যে, প্রতিবেদকের পক্ষে নির্মোহ হওয়া সম্ভব হয় না। হাজার হোক সাংবাদিকও মানুষ। এমনি একটি মর্মানিতক দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার মালুমঘাট বাজারের দেড়শ গজ উত্তরে নার্সারি এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় একই পরিবারের ৫ ভাই। বাবার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরার পথে পিকআপ চাপায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এর আগে রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কক্সবাজার চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়ার খুটাখালী মেধাকচ্ছপিয়া এলাকায় পিকআপকে ওভারটেক করতে গিয়ে মিনিট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। এ সময় আহত হন অন্তত ৩০ জন। এ দুটি দুর্ঘটনায় যে শোকের মাতম হয়েছে তা বর্ণনা করা অসম্ভব। সবার প্রশ্ন এ মৃত্যু বন্ধ হবে কবে?
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালে সড়কে প্রায় ৬ হাজার জনের মৃত্যু হয় যার মধ্যে ৭০৬ জন শিক্ষার্থী ও ৫৪১ জন শিশু, যা মোট মৃত্যুর প্রায় ১৯ শতাংশ। সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ ও যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি অন্যতম।
সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বের প্রথম স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা সেন্টারের হিসাব অনুযায়ী, যানবাহনের তুলনায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার পুরো পৃথিবীতে বাংলাদেশেই বেশি। প্রতি ১০ হাজার যানবাহনে বাংলাদেশে বছরে মৃত্যু হয় ৮৫টি। পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় এ হার ৫০ গুণ বেশি। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণায় বলা হয় সড়ক দুর্ঘটনার কারণে বাংলাদেশে জিডিপির অন্তত দুই শতাংশ হারিয়ে যায়। সড়ক দুর্ঘটনা কমছে না বরং বেড়েই চলছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। নেই কোন প্রতিকার। বিশিষ্ট সাংবাদিক জগলুল আহমেদ চৌধুরী ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। তখন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে, তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে, কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দিলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাড়ে সাত বছর পার হয়ে গেল, কোথায় সেই তদন্ত কমিটি আর কিইবা হলো তার বিচার তা কারো জানা নেই? আমরা মনে করি দৃশ্যমান প্রত্যাশিত বিচার যতদিন না হবে ততদিন দুর্ঘটনায় মৃত্যু থাকবে না। আমরা চাই প্রত্যেকটি দুর্ঘটনার তদন্ত ও বিচার হোক।