যশোরে নতুন বছরের ১৯ দিনেও মেলেনি সব বই : বিড়ম্বনায় শিক্ষক শিক্ষার্থী *৬ষ্ঠ শ্রেণি পেয়েছে একটি বই

0

তহীদ মনি ॥ নতুন বছরের ১৯ দিন পার হলেও শিক্ষার্থীরা এখনো সম্পূর্ণ বই হাতে পায়নি। ৬ষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষার্থীরা পেয়েছে তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক একটিমাত্র বই। এতে শিক্ষক শিক্ষার্থী অভিভাবক সকলেই পড়ছেন বিড়ম্বনায়। সালমান, সিফাত, মিম, নতুন বছরে হাইস্কুলে প্রবেশ করেছে। সদ্য প্রাইমারি শেষ করে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পা রাখলেও আজো পায়নি নতুন বই। তথ্য ও যোগাযোগ নামে একটি বই দেওয়া হয়েছে তাদের। ইতোমধ্যে কেটে গেছে ১৯ দিন। নতুন বছরের রঙ ফিকে হয়ে গেছে। বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে আহত নতুন ও অপরিচিত শিক্ষার্থীরাও ইতোমধ্যে একে অপরের সাথে পরিচিত হয়ে গেছে। তবুও নতুন সেট দূরে থাক, দ্বিতীয় বইটিও হাতে পায়নি ওরা। দীর্ঘ ৫ বছর প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা জীবন শেষে হাইস্কুলে গিয়ে দিনের পর পর দিন ক্লাস করছে বই ছাড়া। এতে তারা যেমন উৎসাহ হারাচ্ছে তেমনি বিরক্ত হচ্ছেন তাদের অভিভাবকরা এবং ক্লাস নিতে নিতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষকদের। শুধু সালমান, সিফাত বা মিম নয়। সারা জেলায় ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একই অবস্থা। গত কয়েক বছর ধরে নতুন বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীরা বই পেয়ে আনন্দ উৎসব করে আসছে। চলতি বছর সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়নি। বিশেষ করে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে। ৭ম, ৮ম ও ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পূর্ণাঙ্গ সেট না পেলেও বেশ কয়েকখানা বই পেয়েছে। বই না পাওয়া শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, ‘নতুন স্কুলে গেলাম, নতুন ক্লাসে নতুন বই নিয়ে উল্লাস করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু প্রায় ১ মাস হয়ে গেলো একটার বেশি বই পাইনি। বাংলা, ইংরেজি বা অংক পেলেও কাজ হতো।’ তথ্য ও যোগাযোগ বই এর অনেক কিছুই আমাদের মাথায় আসছে না। ক্লাসের স্যার-ম্যাডামরা কিছু পড়ানোর চেষ্টা করেন। বই না থাকায় বাড়িয়ে তা আর দেখা হয় না। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে একটির বেশি বই না পাওয়ার কথা স্বীকার করেন যশোর সরকারি শিক্ষাবোর্ড মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কল্যাণ সরকার যশোর নিউটাউন, বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুসা, সুরাইয়া শিরিন এবং যশোর উপশহর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মঈন উদ্দীন। তারাও স্বীকার করেছেন নতুন শিক্ষার্থীদের হাতে বই না পৌঁছানোয় সবে মাধ্যমিকে পা রাখা শিক্ষার্থীরা কিছুটা হলেও সমস্যা বোধ করছে। বিভিন্ন স্কুল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত ৭ম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা হাতে পেয়েছে ইংরেজি ২য় পত্র, কৃষি শিক্ষা, শারীরিক শিক্ষা, বাংলা ২য় পত্র, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বাংলা দ্রুত পঠন, কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা এবং চারুকারু। ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা হাতে পেয়েছে বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি, বাংলা দ্রুতপঠন, ইংরেজি গ্রামার, কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা, কৃষি, শারীরিক শিক্ষা ও চারুকারু।
৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বিভাগ অনুসারে কিছু বই পেয়েছে। শ্রেণি হিসেবে পাওয়া বইগুলির মধ্যে রয়েছে বাংলা ব্যাকরণ, বাংলা সহপাঠ, ইংরেজি, ইংরেজি গ্রামার, ক্যারিয়ার শিক্ষা, ইসলাম ধর্ম শিক্ষা, হিন্দু ধর্ম শিক্ষা, সাধারণ বিজ্ঞান, কৃষি শিক্ষা, পদার্থ বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, উচ্চতর গণিত, ভূগোল ও পরিবেশ, অর্থনীতি, হিসাব বিজ্ঞান, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং, ব্যবসায় উদ্যোগ এবং শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। জেলা শিক্ষা অফিসার একেএম গোলাম আযম বই না পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করেন। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে মাত্র ১টি বইসহ অন্যান্য শেণির সেটের অসম্পূর্ণতার কথাও তিনি জানান। কবে নাগাদ বই পাওয়া যাবে এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেননি। জেলা শিক্ষা অফিস সূত্র মতে, জেলায় ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩৩ শতাংশ বই পৌঁছেছে। এর মধ্যে মণিরামপুর উপজেলায় ৩৪ শতাংশ, ঝিকরগাছা উপজেলায় ৪৪ শতাংশ বই পেলেও চৌগাছা উপজেলা চাহিদার মাত্র ২৬ শতাংশ বই পেয়েছে। এছাড়া যশোর সদরে ৩৩ শতাংশ, শার্শায় ৩৩ শতাংশ, বাঘারপাড়ায় ৩৩ শতাংশ, কেশবপুরে ৩২ শতাংশ ও অভয়নগরে ৩১ শতাংশ বই পৌঁছেছে। অবশ্য মাদ্রাসার দাখিল পর্যায়ে গড়ে ৪৫ শতাংশ, এবতেদায়ী পর্যায়ে ৯৯ শতাংশ, এসএসসি ভোকেশনাল পর্যায়ে প্রায় ৯৬ শতাংশ, দাখিল ভোকেশনাল পর্যায়ে শতভাগ বই শিক্ষার্থীরা হাতে পেয়েছে। তবে সম্পূর্ণ বই এখনো পর্যায়ে ইংলিশ ভার্সনের শিক্ষার্থীরা। নতুন বছরের রেশ কেটে গেছে ১৯ দিন। এতদিনেও শিক্ষার্থীরা হাতে বই না পৌঁছানোর কারণে শিক্ষকরা ক্লাস নিতে বিড়ম্বনায় পড়ছেন।