সংক্রমণের সুনামির আশঙ্কা

0

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ॥ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে করোনার সংক্রমণ। প্রতি চারজনে একজন করোনা রোগী ধরা পড়ছে। ঠেকানো যাচ্ছে না সংক্রমণের অব্যাহত ঊর্ধ্বমুখী। বিশেষজ্ঞরা একে সংক্রমণের সুনামি হিসেবে দেখছেন। ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে সাউথ আফ্রিকান নতুন ধরন ওমিক্রন। এটা ডেল্টার চেয়ে ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি ছড়াচ্ছে। সংক্রমণের দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে শহর থেকে গ্রামগঞ্জেও। দেশে আগের সপ্তাহের তুলনায় গত এক সপ্তাহে করোনা রোগী বেড়েছে ২২৮ শতাংশ। বর্তমান এই পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বয়ে চালিত গবেষণায় এসআইআর মডেলের মাধ্যমে গত বছর থেকে করোনার গতি-প্রকৃতি নিয়ে ধারণা আসছিল। এবারও তারা ডাটা বিশ্লেষণ করছেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ইতিপূর্বে ৪২টি দেশের করোনার ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির সেন্টার ফর ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড গ্লোবাল হেলথের অধ্যাপক লিসা হোয়াইট এই গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুলও গবেষণা করছেন। করোনার সংক্রমণের বর্তমান গতি- প্রকৃতি বিষয়ে জানতে চাইলে এই অধ্যাপক বলেন, তারা এবারো কাজ শুরু করেছেন। ডাটা বিশ্লেষণ করতে একটু সময় লাগবে। তবে তিনি বলেছেন, এবারের সংক্রমণের গতি-প্রকৃতি বলে দিচ্ছে গত বছরের শনাক্তের রেকর্ড আগেই অতিক্রম করবে। বিশ্ব পরিস্থিতি তাই বলছে। যদিও তাদের ডাটা এখনো সেভাবে বিশ্লেষণ হয়নি। ধারণা করা যায় গত বছরের ১৬ হাজার শনাক্তের রেকর্ড দ্রুতই ভেঙে যাবে। এই গবেষক পরামর্শ দিয়ে বলেন, আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
ওমিক্রনসহ করোনাভাইরাস সংক্রমণের অব্যাহত ঊর্ধ্বমুখী ধারাকে অশুভ ইঙ্গিত বলে মনে করে স্বাস্থ্য বিভাগ। সংক্রমণের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, এ দফায় দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ আগেই শুরু হয়েছে। সংক্রমণের গতি ভয়াবহ। দিন দিন আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে করোনার সংক্রমণ। সাগরে ভূমিকম্প হলে যেভাবে সুনামি ধেয়ে আসে তীরের দিকে, ঠিক একইভাবে সংক্রমণও দ্রুত এগুচ্ছে। ঘরে ঘরে সর্দি-কাশির রোগীর খবর আসছে। সেভাবে পরীক্ষা হচ্ছে না। মানুষ মাস্ক পরছে না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছে না। দেশে বর্তমানে প্রতি চারজনে একজন করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এই গতিকে আরও এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করতে হবে। দেশের এই খ্যাতিমান ভাইরোলজিস্ট বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। টিকার আওতা আরও বাড়াতে হবে। বেশি বেশি পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন তিনি। সংক্রমণের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা এবং সংস্থাটির সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুস্তাক হোসেন বলেন, দেশে ওমিক্রনের গণসংক্রমণ গত সপ্তাহ থেকেই শুরু হয়েছে। এটা ডেল্টার চেয়ে ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি ছড়ায়। তিনি বলেন, ডেল্টায় গত বছর দেশে ১৬ হাজার পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল। কিন্তু এবার সংক্রমণের গতি-প্রকৃতি থেকে বুঝা যাচ্ছে যদি ৫০ থেকে ৬০ হাজার দৈনিক পরীক্ষা করানো যায় তাহলে ৩০ হাজার পর্যন্ত শনাক্ত হতে পারে। এই জনস্বাস্থ্যবিদ করোনার টেস্ট আরও বাড়ানোর উপর জোর দিয়ে বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে বুথ স্থাপন করতে হবে। ব্র্যাকের মাধ্যমে আরও পরীক্ষা বাড়ানো সম্ভব। তাদের জনবল বৃদ্ধি করলেই এটা করা যাবে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, সবাই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। টিকার আওতা বাড়াতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।