মাদক নিয়ন্ত্রণে কঠোরতা প্রয়োজন

0

হেরোইন, কোকেন, আফিম, ফেনসিডিলের পর মাদকের বাজার দখল করেছিল মিয়ানমারে তৈরি ইয়াবা। সেই ইয়াবাও এখন হারিয়ে যাচ্ছে তার স্বদেশী মাদক আইসের কাছে। ভয়ংকর মাদক আইস ইয়াবার চেয়ে কমপক্ষে ৫০ গুণ বেশি শক্তিশালী। একটি সংঘবদ্ধ চক্র চোরাপথে এই মাদক দেশে আনছে। গত বছর চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং বিজিবি জব্দ করেছে ২১ কেজি আইস। আবার যে পরিমাণ আইস ধরা পড়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ বাংলাদেশ হয়ে অন্যান্য দেশে গেছে বলেও খবরে প্রকাশ। বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে এটি অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, আমেরিকায় পাচার করা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ বাজার তৈরিরও চেষ্টা করতে পাচারকারী ও বিক্রেতারা রাজধানীসহ জেলায় জেলায় ছড়িয়ে দিচ্ছে। সমাজের বিত্তবান পরিবারের সন্তানদের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী পরিবারের সন্তানরাও সর্বনাশা এ নেশার জগৎ ঘিরে বাণিজ্যিক ও সেবন সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। ইতোমধ্যে রাজধানী ও কয়েকটি জেলায় আইস আটক হয়েছে, ফলে শঙ্কা বাড়ছে।
আইস সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইস সেবনের পর মানবদেহে অতি অল্প সময়ে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। এই মাদক সেবনে মস্তিষ্কের রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এ থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এটি হৃদযন্ত্র, কিডনি ও লিভারেরও ভয়াবহ ক্ষতি করতে পারে। এককথায় এটি দ্রুত মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও অন্যান্য সূত্রের খবর, মিয়ানমার দিয়ে ‘ইয়াবা রুট’ ধরে পাচার হয়ে আসা আইস এরই মধ্যে দেশে ৪০ শতাংশ মাদকের বাজার দখল করে ফেলেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যে ইয়াবার বাজার আইসের দখলে চলে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একটি সংঘবদ্ধ চক্রের হাত ঘুরে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে ভয়ংকর সব মাদকদ্রব্য। শহর ছাড়িয়ে গ্রামাঞ্চলেও তরুণসমাজে মাদকাসক্তি ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে মাদক সিন্ডিকেট। যে কোনো মাদক কারবারির প্রধান লক্ষ্য উঠতি বয়সী কিশোর ও তরুণরা। অন্যদিকে মাদকাসক্তরা জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। ফলে এর প্রভাব সামাজিক বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সব উন্নয়নপ্রচেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়বে। সামাজিক-অর্থনৈতিক সব ধরনের স্থিতিই বিঘিœত হবে। তাই মাদকের বিস্তার নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় চলে যাওয়ার আগেই সর্বাত্মকভাবে তা প্রতিরোধের উদ্যোগ নিতে হবে। বন্ধ করতে হবে মাদক চোরাচালান। কারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সারাদেশে নতুন করে শুরু করতে হবে অভিযান। গডফাদারদের আইনের মুখোমুখি করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে মাদকের বিস্তার রোধ করা যাবে বলে আমরা মনে করি। আমরা আশা করবো, প্রশাসন মাদক সম্রাটদের আটক করে তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে এবং সেখানে তারা উপযুক্ত শাস্তি পাবে।