টাকা ছিনিয়ে নিতে ঢাবি অধ্যাপক সাইদাকে হত্যা করে আনারুল

0

রায়হানুল ইসলাম আকন্দ॥গাজীপুরের কাশিমপুর এলাকা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সাইদা খালেকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত ১১ জানুয়ারি থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। এ ঘটনায় আনারুল ইসলাম (২৫) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন তিনি। পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সাইদার নির্মাণাধীন বাড়ির রাজমিস্ত্রির সহযোগী আনারুল। তার বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্লাহপুর উপজেলায়। অধ্যাপক সাইদার ছেলে সাইদ ইফতেখার বিন জহির জানান, তার মা কাশিমপুরের পানিশাইল এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। সেখানে থেকে পাশেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হাউজিং প্রকল্পে বাড়ির নির্মাণকাজ দেখাশোনা করতেন। বাড়ির কাজও প্রায় শেষের দিকে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে নতুন বাসায় ওঠার কথা ছিল। তিনি বলেন, ‘বুধবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যার আগেই মায়ের বাসার দরজা খোলা পাওয়া যায়। বাসায় না পেয়ে শিক্ষক হাউজিং প্রকল্পের ঠিকাদার আনোয়ার তাকে বিষয়টি অবহিত করেন। পরে ওই রাতেই কাশিমপুর থানায় আমার বোন সাদিয়া আফরিন এ সংক্রান্তে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।’
সাইদ ইফতেখার বিন জহির বলেন, তার মা নতুন বাসার সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য একটি গাছ কেটেছিলেন। গাছটি সীমানা প্রাচীরের মধ্যে পড়ে যাওয়ায় এটা কাটতে হয়েছিল। আনারুল ইসলাম নামে এক শ্রমিক গাছটি কেটেছিলেন। তাকেই পুলিশ সন্দেহ করে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) ভোরে গাইবান্ধা থেকে গ্রেফতার করে। আনারুলের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ভাড়া বাসার অনতি দূরের একটি ঝোপ থেকে অধ্যাপক সাইদার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। শ্বাসরোধে হত্যার পর ঘাতক তার সঙ্গে থাকা স্বর্ণালংকার, মোবাইল নিয়ে নেয়। এরপর চাবি নিয়ে বাসায় ঢুকে ল্যাপটপ, ট্যাব ও টাকা-পয়সা লুট করে। কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবে খোদা জানান, ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন অধ্যাপক সাইদা। প্রায় ১১ মাস ধরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পানিশাইল এলাকার মোশারফ হোসেন মৃধার বাড়িতে ভাড়া বাসায় থাকতেন। ভাড়া বাসায় থেকে তিনি একই এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আবাসন প্রকল্পে বাড়ি নির্মাণ করছিলেন। বুধবার রাত সোয়া ৯টায় তার ছেলে ও মেয়ে বাসায় এসে কোথাও খুঁজে পাননি তাকে। পরে সাদিয়া আফরিন কাশিমপুর থানায় জিডি করেন।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের কাশিমপুর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শেখ মিজানুর রহমান জানান, নির্মাণাধীন বাড়ির প্লটে গিয়ে অধ্যাপক সাইদার খোঁজ-খবর নেওয়া হয়। তদন্তের নানা তথ্যের ভিত্তিতে ওই প্লটে কর্মরত রাজমিস্ত্রির সহযোগী আনারুলকে গাইবান্ধার সাদুল্লাহপুর থেকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে হত্যার কথা স্বীকার করে আনারুল। শুক্রবার তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নির্মাণাধীন ওই বাড়ির অদূরে (আনুমানিক ২০০ গজ দূরে) একটি ঝোপের ভেতর থেকে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে জহির অজ্ঞাত কয়েকজনসহ আনারুলকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। শেখ মিজানুর রহমান আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আনারুল জানিয়েছে, অধ্যাপক সাইদার হাতে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে আনারুল। এ সময় তাকে বাধা দেওয়ায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে। অধ্যাপক সাইদার মেয়ে সাদিয়া আফরিন বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ নিয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছেন। বাদ এশা উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর রোডের বায়তুন নূর জামে মসজিদের সামনে জানাজার পর দাফন করা হবে।