টিকা কার্যক্রম বৃদ্ধি করুন

0

বিশ্ব এখন ওমিক্রনে আক্রান্ত তখন বাংলাদেশে ওমিক্রন আক্রান্ত পাওয়া গেছে ৩০ জন। পার্শ্ববর্তী ভারতে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজারের নিচে থেকে লাফিয়ে হাজার হাজার ছাড়াচ্ছে। সপ্তাহ শেষে গত রবিবার ছিল প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার। ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশেও দৈনিক নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ১ শতাংশের নিচে থেকে গত সপ্তাহে সাড়ে ৮ শতাংশের ওপরে উঠে যায় প্রতিদিনই এই হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী আগের সপ্তাহের তুলনায় সংক্রমণ বেড়েছে ১১৫ শতাংশ। এ অবস্থায় করোনার নতুন ঢেউ কিভাবে মোকাবেলা করা হবে, তা নিয়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা শেষে সরকার সেই আগের মত কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে, লকডাউন দেয়নি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করেনি এখনও।
টানা দুই বছর ধরে চলা করোনা মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিকে প্রায় বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই, সরকার এখনই নতুন করে লকডাউন বা কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করতে চাচ্ছে না এবং একইভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও এখনই বন্ধ না করার পক্ষে রয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি যদি খারাপের দিকে চলে যায়, তখন হয়তো সরকার সামনে অন্য কোনো বিকল্প নেই বলে ওই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সরকার এখন চাচ্ছে টিকা প্রদানের গতি বাড়িয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে। এ জন্যে ১২ থেকে ১৭ বছরের শিক্ষার্থীদেরও ৩১ জানুয়ারির মধ্যে টিকা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। টেপসহ গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী বহন করা, মার্কেট খোলা রাখার সময় কমিয়ে আনা, হোটেল-রেস্তোরাঁয় টিকা সনদ দেখা, বড় সমাগম নিরুৎসাহ করাসহ আরো কিছু বিধি-নিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত শনিবার থেকে বলবৎ হবে। কিন্তু এসব করে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কি? দেশে স্থানীয়ং সরকার নির্বাচনে যে জনসমাগম চলছে তা বহাল রেখে বিধিনিষেধ জনগণ মানবে কি ? এ নিয়ে প্রশ্ন ও বিতর্ক শুরু হয়েছে।
উন্নত অনেক দেশে ৭০-৮০ শতাংশ কিংবা তারও বেশি মানুষকে দুই ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। অনেক দেশে বেশির ভাগ মানুষকে তৃতীয় বা বুস্টার ডোজও দেওয়া হয়ে গেছে। সেসব দেশেও সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। কাজেই টিকা দিলেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হবে না এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। বিজ্ঞানীরাও বলছেন, টিকার মতোই জরুরি মানুষের সচেতনতা। মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা ও বারবার হাত ধোয়ার মতো স্বাস্থ্যবিধিগুলো যথাযথভাবে মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, করোনার এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও বহু মানুষের আচরপ্রে ন্যূনতম সচেতনতা পরিলক্ষিত হয় না। হাট-বাজার, গণপরিবহণ ও জনসমাগমের স্থানগুলোতে দেখা যায়, বেশির ভাগ মানুষই এসব মানছে না। এমনকি মাস্কও পরছে না। অফিস-কারখানায় ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নোটিশ থাকলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। মানুষ বলছে, নির্বাচনী প্রচার ও ভোটার লাইন বহাল রেখে বিধিনিষেধ মানানো যাবে না। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, সংক্রমণ আবার লাগামছাড়া হয়ে পড়তে পারে। লকডাউন শুধু দেশের অর্থনীতিরই ক্ষতি করে না, ব্যক্তিজীবনকেও তছনছ করে দেয়। কাজেই দেশ যাতে লকডাউন আরোপের মতো অবস্থায় না যায় সে চেষ্টাই আমাদের করতে হবে। ভাড়া নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি পরিবহন, অফিস-আদালত, কলকারখানা, হাট-বাজার সর্বত্র স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। টিকাদানের গতিও বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে টিকাই এখনও শেষ ভরসা।