অর্ধেক জনগোষ্ঠী টিকার বাইরে

0

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
দেশে দ্রুতগতিতে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। করোনার পুরনো ধরন ডেল্টার তাণ্ডবে গেল বছর টালমাটাল ছিল দেশ। আবার দৈনিক শনাক্তের হার ৯ শতাংশের ঘরে পৌঁছেছে। এবার এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। নতুন ধরনে দেশে রোগী শনাক্ত হওয়ার খবরও আসছে প্রতিদিনই। করোনা প্রতিরোধে প্রায় এক বছরে দেশে সাড়ে ১৩ কোটি ডোজ টিকার কিছু বেশি বিতরণ করা হয়েছে। মোট জনসংখ্যার ৪৮ শতাংশ প্রথম ডোজ নিয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা ৩৩ শতাংশ। অর্থাৎ ৬৭ শতাংশ লোক এখনো পূর্ণডোজ টিকা পাননি। বুস্টার বা তৃতীয় ডোজ গ্রহণকারীর সংখ্যা মাত্র সাড়ে ৪ লাখের কিছু বেশি। এদিকে, এখন পর্যন্ত দেশে মোট জনসংখ্যার ৪৭ দশমিক ৫০ শতাংশ প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন। আর দ্বিতীয় ডোজ টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা ৩২ দশমিক ৬২ শতাংশ (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস’র সর্বশেষ তথ্য মতে, দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ ১০ হাজার)।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতে, ১০ই জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ৮ কোটি ৩ লাখ ২৭ হাজার ৩৫১ জন। অন্যদিকে উল্লিখিত সময় পর্যন্ত মোট দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ৫ কোটি ৫১ লাখ ৭০ হাজার ১৫৭ জন। এখন পর্যন্ত দেশে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে বিভিন্ন টিকা দেয়া হয়েছে ১৩ কোটি ৫৪ লাখ ৯৭ হাজার ৫০৮ ডোজ। এই মুহূর্তে দ্বিতীয় ডোজ টিকার দরকার ২ কোটি ৫১ লাখ ৫৭ হাজার ১৯৪ জনের।
অধিদপ্তরের হিসাব মতে, এনআইডি দিয়ে নিবন্ধনকারীদের চেয়ে প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা বেশি। প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ৮ কোটি ৩ লাখ ২৭ হাজার ৩৫১ জন। ১০ই জানুয়ারি বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন (এনআইডি) ৭ কোটি ৮৫ লাখ ৩৭ হাজার ২৩৫ জন। পাসপোর্ট দিয়ে ভ্যাকসিন নিতে নিবন্ধন করেছেন ১২ লাখ ৩৯ হাজার ৯৬৭ জন এবং জন্মনিবন্ধন দিয়ে টিকার জন্য আবেদন করেছেন ৪ লাখ ৪০ হাজার ৩৭১ জন। এদিকে ৮ই জানুয়ারি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের টিকা এখনো ৬ কোটির মতো মজুত আছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের মোট ৩১ কোটি ডোজ টিকার পরিকল্পনা রয়েছে। মানুষের টিকা নেয়ার আগ্রহ কমে গেছে। টিকাদান কর্মসূচি কমিউনিটি পর্যায়ে নেয়া হয়েছে। টিকা নেয়ার ফলে মৃত্যুর হারও কমেছে, কিন্তু মাস্ক না পরলে সংক্রমণ কমানো যাবে না। এর আগে গত ১০ই অক্টোবর রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে দেশের আট কোটি মানুষকে করোনার দুই ডোজ টিকা দেয়া সম্ভব হবে। এতে ৫০ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় আসবে। মার্চ থেকে এপ্রিলের মধ্যে আরও চার কোটি ডাবল ডোজ টিকা দিতে সক্ষম হবো। মোট ১২ কোটি লোককে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যাবে আগামী এপ্রিলের মধ্যে। এতে ৭০ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় আসবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে গত ৭ই জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাসের নতুন ঢেউ থেকে মহান আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে রক্ষা করুন-এই প্রার্থনা করি। করোনাভাইরাসের টিকা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে এক গভীর সংকটের মধ্যদিয়ে আমাদের বিগত ২০২০ এবং ২০২১ সাল অতিক্রম করতে হয়েছে। সেই সংকট এখনো কাটেনি। এর মধ্যেই আবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন করে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। আমাদের এখনই সাবধান হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যারা টিকা নেননি তাদের দ্রুত টিকা নেয়ার অনুরোধ জানাই। তিনি বলেন, এখন পূর্ণোদ্যমে কোভিড-১৯ টিকাকরণের কাজ চলছে। চলতি মাস থেকে গণটিকা প্রদানের মাধ্যমে প্রতিমাসে ১ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১২ কোটি ৯৫ লাখ ৮০ হাজার ডোজ টিকা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ডোজ পেয়েছেন প্রায় ৭ কোটি ৫৮ লাখ মানুষ আর দুই ডোজ পেয়েছেন ৫ কোটি ৩৫ লাখ ৮২ হাজার। গত মাস থেকে বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু হয়েছে। বর্তমানে আমাদের হাতে সাড়ে ৯ কোটিরও বেশি ডোজ টিকা মজুত আছে।