অভয়নগরে ইউপি সদস্য উত্তম হত্যায় প্রতিদ্বন্দ্বীকে জিজ্ঞাসাবাদ

0

স্টাফ রিপোর্টার, অভয়নগর (যশোর)॥ যশোরের অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য উত্তম সরকারের হত্যার ঘটনায় নির্বাচনের তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক ইউপি সদস্য অর্ধেন্দু মল্লিককে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। এ ঘটনায় গতকাল রাত ৭টা পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে পাঁচটায় ময়নাতদন্ত শেষে ইউপি সদস্য উত্তম সরকারের মরদেহ হরিশপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে পৌঁছালে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। প্রথমে মরদেহ হরিশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে রাখা হয়। সেখানে আশেপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে শ’শ’ মানুষ উত্তম সরকারের মরদেহ দেখতে হাজির হয়। কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা। দিনভর উত্তম সরকারের পরিবারের পাশে অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক বাবুল, সাধারণ সম্পাদক সরদার অলিয়ার রহমানসহ আওয়ামী লীগ নেতারা ছুটে আসেন। পরিবারকে সান্তনা দেন। বিকেলে মরদেহ আসার কিছু সময় আগে ঘটনাস্থলে আসেন স্থানীয় (যশোর-৪ আসনের) সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায়।


তিনি উত্তম সরকারের মরদেহের পাশে দাড়িয়ে অনতিবিলম্বে হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য প্রশাসনের প্রতি নির্দেশ দেন। এবং অসহায় পরিবারটির পাশে দাড়ানোর আশ্বাস দেন। এ সময় যশোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর দাস রতন হত্যাকারীদের আটক ও বিচার দাবি করেন। এছাড়া সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিকাশ কপিল রায়, প্রেমবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিন, সুন্দলী ইউনিয়নের বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসী হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানান। পরে বিদ্যালয় প্রাঙ্গন থেকে উত্তমের মরদেহ নিজের বাড়ির উঠানে নিয়ে রাখা হয়। সেখানে মরদেহের উপর আছড়ে পড়েন নিহত ইউপি সদস্যে মা, স্ত্রী, ছোট্ট দুই শিশু সন্তানসহ স্বজনেরা। উত্তম সরকারের মা শেফালী সরকারের হৃদয়বিদারক বিলাপে গোটা এলাকা শোকে স্তব্ধ হয়ে যায়। তিনি বিলাপ করে বলেন, আমার কলিজার ধনরে কেন ওরা মেরে ফেললো। সারা জীবনে ওর কোন শত্রুতা ছিলোনা। নির্বাচনই কাল হলো আমার সোনা মানিকের জীবনে। এই নির্বাচনই যে তোর জীবনের কাল হবে তা জানলে তোরে কিছুতেই এ পথে নামতে দিতাম না। আমি এখন কি নিয়ে বাঁচবো। পাশেই বিলাপ করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন উত্তমের স্ত্রী শ্রাবন্তী সরকার। “ বাবার মুখের দিকে নির্বাক চেয়েছিলো দুই শিশু পুত্র হিরামন সরকার (৯) ও হিরম্ময় সরকার (৬)।


নিহতের মা শেফালী সরকার ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ঘটনার দিন সোমবার পরিবার নিয়ে পার্শ্ববর্তী চলিশিয়া ইউনিয়নের আন্ধা গ্রামে নিমন্ত্রণে গিয়েছিলেন উত্তম সরকার। সেখান থেকে বিকেল পাঁচটার দিকে মোটর সাইকেলে দুই ছেলেকে বাড়ির সামনে হরিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে নামিয়ে মায়ের কাছে দিয়ে ফের সুন্দলী বাজারে যান তিনি। এসময় বিদ্যালয়ের পাশে অপরিচিত দুই যুবককে বসে থাকতে দেখেন উত্তমের মা। পরে বাড়ি ফেরার পথে বাড়ির কাছে স্কুল মাঠ পর্যন্ত পৌছালে তার গতিরোধ করে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানায়, গুলির শব্দে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় উত্তমের মোটর সাইকেলটি স্ট্যান্ড দিয়ে পাশেই রাখা ছিলো। ধারনা করা হচ্ছে হত্যাকারীরা ঘটনাস্থলে উত্তমকে থামিয়ে তার সাথে কথা বলেন। উত্তমের মা আরও জানান, এসময় নিহত উত্তমের পকেটে নগদ ত্রিশ হাজার টাকা ও গলায় স্বর্ণের চেইন ছিলো। কিন্তু হত্যাকারীরা সেগুলো স্পর্শ করেনি।

ধারনা করা হচ্ছে পেশাদার খুনির দিয়ে কেউ উত্তমকে খুন করিয়ে থাকতে পারে। এদিকে ওই রাতেই হত্যাকা-ের পর ঘটনাস্থলে আসেন অভয়নগর থানার ওসি একেএম শামিম হাসান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুকিত সরকার। এবং রাতেই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ও সম্প্রতি সম্পন্ন হওয়া ইউপি নির্বাচনে উত্তম সরকারের প্রতিদ্বন্দ্বী পরাজিত প্রার্থী অর্ধেন্দু মল্লিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয় পুলিশ। অভয়নগর থানার ওসি একেএম শামিম হাসান বলেন, অর্ধেন্দু মল্লিককে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আশাকরি অচিরেই হত্যার ক্লু উদঘাটন করে হত্যার সাথে সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হবো। তবে এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত মামলা করা হয়নি বলে জানান ওসি। প্রসঙ্গত সোমবার রাত ৮টা পনের মিনিটের সময় সুন্দলী ইউনিয়নের হরিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে রাস্তার উপর উত্তম সরকারকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুন্দলী ইউনিয়নের সুড়িরডাঙ্গি মহাশ্মশানে তার অন্তেষ্ট্যিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।