ইউপি নির্বাচনে বগুড়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ৪ জনসহ ৫ জেলায় নিহত ১০

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আগের চার ধাপের মতো পঞ্চম ধাপেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার পাঁচ জেলায় সহিংসতায় ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বগুড়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ৪ জনসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন। বগুড়ার গাবতলীতে ভোট গণনা না করেই ব্যালট বাক্স উপজেলা সদরে নেওয়ার চেষ্টাকালে বাধা দিতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে এক নারীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। নিহত নারী এক মেম্বার প্রার্থীর এজেন্ট হিসেবে কেন্দ্রে দায়িত্বরত ছিলেন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় গাবতলী উপজেলার বালিয়াদিঘী ইউনিয়নের কালাই হাটা উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। গুলিতে নিহতরা হলেন- গাবতলী উপজেলার বালিয়াদীঘি ইউনিয়নের কালাইহাটা গ্রামের খোকনের স্ত্রী (মেম্বার প্রার্থীর এজেন্ট) কুলসুম আক্তার, মকবুল হোসেনের ছেলে আলমগীর হোসেন, মৃত ইফাত উল্লাহর ছেলে আব্দুর রশিদ ও আব্দুর রাজ্জাক। নিহত চারজনই কালাইহাটা গ্রামের বাসিন্দা। তবে নিহত রাজ্জাকের বাবার নাম নিশ্চিত করা যায়নি।


বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘তিনজন নিহত হয়েছে বলে শুনেছি। তবে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কারও লাশই পুলিশ হেফাজতে নেওয়া সম্ভব হয়নি।’ স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বুধবার ভোট শেষে গণনা ও ফলাফল ঘোষণা না করেই ওই কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ব্যালট বাক্স উপজেলা সদরে নেওয়ার উদ্যোগ নেন। এ নিয়ে নৌকা মার্কার কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা ওই কেন্দ্রেই ভোট গণনা করে ফলাফল ঘোষণার দাবি করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এতে বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকেরা পুলিশ, বিজিবি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। আরও জানা যায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে সেখানে গুলি চালায় পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা। পরে রাত ৮টার দিকে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আসলে ভোট কেন্দ্রেই ব্যালট পেপার গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
নৌকার প্রার্থী ইউনুছ আলী ফকির অভিযোগ করেন, নির্বাচন কর্মকর্তারা ভোট গণনা নিয়ে টালবাহানা করার কারণে ভোটাররা কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান নেন। তাদের হটিয়ে দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন এবং রাজ্জাক নামে একজন গাবতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা গেছেন বলে তিনি তথ্য পেয়েছেন। গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়া লতিফুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি ছোড়ে, এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ফলাফল ঘোষণা শেষে নিরাপদে উপজেলা সদরে পৌঁছেছেন। তিনি আরও বলেন, ওই ঘটনায় হতাহতদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য পেলে বিস্তারিত জানানো হবে।
এর আগে গাবতলীর রামেশ্বরপুরে দুই ইউপি সদস্য প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। নিহত জাকির হোসেন (৩৫) গাবতলী উপজেলার রামেশ্বরপুর ইউনিয়নের জাইগুলি উত্তরপাড়া মৃত লয়া মিয়ার ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করে গাবতলী থানার ওসি জিয়া লতিফুল ইসলাম বলেন, প্রতিপক্ষের হামলায় জাকির আহত হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর বিকেল ৩টার দিকে মৃত্যু হয়। এছাড়া সহিংসতায় চাঁদপুরে দুইজন এবং মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও গাইবান্ধায় ভোটগ্রহণ চলাকালে একজন করে প্রাণ হারিয়েছেন। মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের বাচামারা ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সহিংসতায় ছলেমন খাতুন (৫০) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। দুপুরে উপজেলার বাঁচামারা ইউনিয়নের বাঁচামারা ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। শিবালয় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানিয়া সুলতানা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার চাতরী ইউনিয়নের সিংহরা এলাকায় দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে এক যুবক নিহত হয়েছেন। দুপুর ১টার দিকে চাতরি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। আনোয়ারা থানার পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ওই কেন্দ্রের এক কিলোমিটার দূরে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকরা মারামারিতে জড়ায়। এ সময় ইট ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয় অংকুরকে। তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তির নাম অংকুর দত্ত (৩৫)। চাঁদপুর: চাঁদপুরের কচুয়া ও হাইমচরে প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে পৃথক সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে একজন কচুয়ার ও আরেকজন হাইমচরের। কচুয়া উপজেলার সাচার ইউনিয়নের হাতিরবন্ধ কেন্দ্রের বাইরে ইউপি সদস্যদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ছুরিকাঘাতে শরীফ নামে একজন নিহত হন। আরেকজনের মৃত্যু হয় হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের ইশানবালা ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। তার নাম এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি। দু’জনের মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ।
গাইবান্ধা: গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় একটি ভোটকেন্দ্রে এক মেম্বর প্রার্থীর সমর্থককে গলা কেটে হত্যার খবর পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তির নাম আবু তাহের (৪০)। বেলা ৩টার দিকে সাঘাটা উপজেলার জুম্মাবাড়ি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জুম্মাবাড়ি আদর্শ কলেজ কেন্দ্রের বাইরে এই ঘটনা ঘটে। গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বি সার্কেল) ইলিয়াস জিকো এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।