ফানুসে আগুন আতঙ্ক রাজধানীতে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ফানুস উড়িয়ে, আতশবাজি ফোটানো ও হইহুল্লোড়ের মাধ্যমে নতুন বছর ২০২২-কে স্বাগত জানিয়েছে ঢাকাবাসী। থার্টিফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ উদ্‌যাপন করতে হাজার হাজার আতশবাজি ফোটায় নগরবাসী। সেই সঙ্গে বিভিন্ন রংয়ের ফানুসের আলোতেও ঝলমলে হয়ে ওঠে ঢাকার আকাশ। শুক্রবারের থার্টিফার্স্ট নাইটের মতো এত ফানুস আগে কখনো ওড়ানো দেখেনি ঢাকাবাসী। থার্টিফার্স্ট নাইটে তারা নতুন এক ঢাকাকে দেখেছে। একসঙ্গে অনেক বেশি ফানুস ওড়ানোর কারণে একাধিক স্থানে আগুনের ঘটনাও ঘটেছে। এতে রাজধানীজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। পুলিশের নানারকম বিধিনিষেধের কারণে থার্টিফার্স্ট নাইটে সড়কে লোকজনের উপস্থিতি তেমন চোখে পড়ার মতো ছিল না। তবে ঢাকাবাসীর অধিকাংশই বাড়ির ছাদে আর রাস্তায় উদযাপন করেছে থার্টিফার্স্ট নাইট। রাত ১০টার পরই অনেকেই বাসায় ছাদের ওপরে চলে যায়।
কেউ কেউ বাসার ছাদে বিকাল থেকেই বনভোজনের আয়োজন করে। চলে নানারকম আয়োজন। নেচে-গেয়ে কেউ পালন করে থার্টিফার্স্ট নাইট এবং স্বাগত জানায় ২০২২ সালকে। তবে এ বছর গত বছরের চাইতে ফানুস উড়ানোয় এক ধরনের প্রতিযোগিতা ছিল। ছিল আতশবাজি ফোটানোর আরেক প্রতিযোগিতা। এ কারণে থার্টিফার্স্ট নাইটে রাত অবধি চলেছে ফানুস উড়ানো এবং আতশবাজি ফোটানোর প্রতিযোগিতা। অতিরিক্ত ফানুস উড়ানোর প্রতিযোগিতার কারণে ঢাকার ৭টি স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এই ৭টি স্থানের ২টি স্থানে ছিল বড় আগুনের ঘটনা। তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এ ছাড়াও ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে যে, তারা সারা দেশে প্রায় ২০০ স্থানে আগুন লাগার খবর পেয়েছে। তাদের গাড়ি ঘটনাস্থলে গেছে। তবে আগুন বড় ধরনের না হওয়ার কারণে খুব বেশি একটা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। অধিকাংশই আগুন লেগেছে বিদ্যুতের তারে এবং খুঁটিতে। তবে এই ফানুস উড়ানো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটিজেনরা সমালোচনা করেছে ব্যাপকভাবে। কেউ কেউ সামনের থার্টিফার্স্ট নাইটে ফানুস উড়ানো বন্ধের জন্য পুলিশের প্রতি দাবি জানায়। ফায়ার সার্ভিস জানায়, যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল, গেণ্ডারিয়ার ধোলাইপাড়, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, ডেমরা ও লালবাগ এলাকায় ফানুস থেকে আগুন লাগে। রাত ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলের স্কুল রোডের ৩ তলা ভবনের ছাদে থাকা ফলের ঝুঁড়িতে ফানুস থেকে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট প্রায় ১ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নির্বাপণ করেন। প্রায় একই সময় গেণ্ডারিয়ার ধোলাইপাড়ের নাসির উদ্দিন সরকার লেনের ৫২ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলার ছাদে ফানুস থেকে আগুন লাগে। আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার আগেই ফায়ার সার্ভিসের ২টি গাড়ি ঘটনাস্থলে গিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনে। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১টার মধ্যে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, ডেমরা ও লালবাগ এলাকায় বিদ্যুতের তার ও খুঁটির ওপর আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার খালেদা আক্তার জানান, ৭টি স্থানে ঢাকার বিভিন্ন বাড়ির ছাদ থেকে উড়ানো ফানুস থেকে আগুন লেগেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা জানান, রাত ১২টা ১০ মিনিটের পরই তারা আগুন লাগার ফোন রিসিভ করতে করতে হিমশিম খেয়ে যান। পরে তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় প্রতিটি ঘটনায় একাধিক ইউনিট পাঠিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এই উদযাপন শুরুর কিছু সময়ের মধ্যে ঘটে যায় অনেকগুলো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। একসঙ্গে ফায়ার সার্ভিস ও জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর হট লাইন নম্বরগুলো ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, শৈত্যপ্রবাহ কিংবা বাতাস নয়। ঢাকা শহরের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ফানুস ওড়ানোর কারণে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি করতে পারে। গতকালের ওড়ানো ফানুসগুলো যদি রাজধানীর কোনো বস্তি এলাকায় পড়তো তাহলে আরও ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনার সম্ভাবনা ছিল। এ জন্য ফানুস উড়ানোর ক্ষেত্রে তারা আরও নাগরিকদের সতর্কতা চান। এদিকে, ফানুসের দরুন অগ্নিকাণ্ডের কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমলোচনার ঝড় দেখা গেছে। ফেসবুকে নেটিজেনরা লিখেছেন, শৈত্যপ্রবাহের কারণে ফানুসগুলো বিভিন্ন ভবনের ছাদে গিয়ে অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি করেছে। আবার অনেকে লিখেছেন, হালকা বাতাস থাকার কারণে জ্বলন্ত ফানুস বাসাবাড়িতে গিয়ে পড়ে আগুনের সৃষ্টি করেছে। কেউ কেউ লিখেছেন, আগামীতে ফানুস ওড়ানো বন্ধ করা উচিত। নববর্ষ মানুষ কীভাবে উদযাপন করে তা পুলিশ দেখে। তবে এবারের অবস্থা দেখে আমাদের মনে হয়েছে নববর্ষের উদযাপন অনুষ্ঠানে ফানুস ওড়ানো বন্ধ করা উচিত।